ভাইয়ের বিরুদ্ধে ভাই

এ কে এম এ আউয়াল, হাবিবুর রহমান
এ কে এম এ আউয়াল, হাবিবুর রহমান

পিরোজপুর-১ (পিরোজপুর সদর-নাজিরপুর-নেছারাবাদ) আসনে আওয়ামী লীগের সাংসদ এ কে এম এ আউয়ালের ভাই হাবিবুর রহমান (মালেক) আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন। বড় ভাই সাংসদ আউয়ালের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়ে মাঠে কাজ করছেন তিনি। মনোনয়নপ্রত্যাশী দুই ভাইয়ের বিরোধে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাও।

হাবিবুর রহমান পিরোজপুর পৌরসভার তিনবার নির্বাচিত মেয়র। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। সাংসদ এ কে এম এ আউয়াল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। তবে দলের ৭১ সদস্যবিশিষ্ট জেলা কমিটির বেশির ভাগ নেতা হাবিবুর রহমানের অনুসারী বলে নেতা–কর্মীদের দাবি।

দলীয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পিরোজপুর-১ আসনে নবম সংসদ নির্বাচনে মহাজোটের শরিক দল জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয় সাবেক মন্ত্রী মোস্তফা জামাল হায়দারকে। তিনি লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেন। এ কে এম এ আউয়াল নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেন। ওই নির্বাচনে আউয়াল জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে পরাজিত করে সাংসদ নির্বাচিত হন।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পুনরায় সাংসদ হন আউয়াল। নির্বাচিত হওয়ার পর জেলার রাজনীতি পুরোটা তাঁর নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। ২০১৬ সালে বেকুটিয়া ফেরিঘাট ও বলেশ্বর সেতুর টোল আদায়ের ইজারা নিয়ে আউয়াল তাঁর ভাই পৌরসভার মেয়র হাবিবুর রহমানের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন। আউয়ালের স্ত্রীর লায়লা পারভীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সুভাষ এন্টারপ্রাইজ ও বুশরা এন্টারপ্রাইজ ফেরিঘাট এবং সেতুর টোল আদায়ের ইজারা নেওয়ার জন্য দরপত্র জমা দেয়। দরপত্র জমা দেন হাবিবুর রহমানও। এ নিয়ে আউয়ালের সঙ্গে তাঁর ভাই হাবিবুর রহমান, মজিবুর রহমান ও মসিউর রহমানের বিরোধ দেখা দেয়। সাংসদ আউয়ালের সঙ্গে ভাইদের বিরোধ দেখা দেওয়ার পর দলের বেশির ভাগ নেতা-কর্মী সাংসদের ভাইদের পক্ষ অবস্থান নেন। এতে আউয়াল কোণঠাসা হয়ে পড়েন। দলের নিয়ন্ত্রণ অনেকটা চলে যায় হাবিবুর রহমানের হাতে।

ওই বছরের ৬ আগস্ট জেলা ছাত্রলীগ সংবাদ সম্মেলন করে আউয়ালের বিরুদ্ধে টেন্ডার–বাণিজ্য, দলীয় নেতা-কর্মীদের হয়রানি, ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার অভিযোগ তোলে। এরপর ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা হাবিবুর রহমানের পক্ষে অবস্থান নেন। এ অবস্থায় আউয়াল দলীয় বিরোধ মেটানোর জন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের শরণাপন্ন হন। ২০১৭ সালের ২২ সেপ্টেম্বর জেলা আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ও কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম দলীয় কোন্দল এবং দুই ভাইয়ের বিরোধ মেটানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।

গত ৮ জুলাই নেছারাবাদ উপজেলার পূর্ব জগন্নাথকাঠি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাঠে জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারা এক সমাবেশে বক্তব্য দেন। ওই সমাবেশে বক্তারা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাংসদ আউয়ালকে দলীয় মনোনয়ন না দিয়ে হাবিবুর রহমানকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানান।

হাবিবুর রহমান পিরোজপুর সদরের পাশাপাশি নাজিরপুর ও নেছারাবাদ উপজেলায় দলীয় কর্মসূচি পালন ও সভা–সমাবেশ করে যাচ্ছেন। এসব সমাবেশে তিনি সাংসদ আউয়ালের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ করে আসছেন।

পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক শেখ ফিরোজ বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের ৭১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির ৫০ থেকে ৫৫ জন সদস্য সাংসদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। হাবিবুর রহমান এবার দলীয় মনোনয়ন চাইবেন।

হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আগামী নির্বাচনে নৌকা প্রতীককে বিজয়ী করতে কাজ করে যাচ্ছি। বর্তমান সাংসদ আউয়াল দুর্নীতির কারণে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। নেত্রী আমাকে মনোনয়ন দিলে এ আসনটি বিপুল ভোটের ব্যবধানে তাঁকে উপহার দেব।’

সার্বিক বিষয়ে সাংসদ এ কে এম এ আউয়াল প্রথম আলোকে বলেন, ‘কে প্রচারণা চালাচ্ছে, কে চালাচ্ছে না, সেটা আমি দেখছি না। অন্য কেউ মনোনয়ন পাবে বলে দল কোনো ইঙ্গিত দেয়নি। তাই ধরে নিতে পারি আমিই মনোনয়ন পাচ্ছি। সে লক্ষ্যে মাঠে কাজ করে যাচ্ছি।’