মায়ের প্রভাব আছে শিশুর উচ্চতায়

বস্তির ৫০ শতাংশ শিশু খর্বকায়। গবেষকেরা বলছেন, শিশুর খাদ্যে জিংকের ঘাটতি, শিশুকে বুকের দুধ না খাওয়ানো, বারবার ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার কারণে শিশু খর্বকায় হয়। তবে খর্বতার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে মায়ের উচ্চতা। খর্বকায় মায়েদের শিশুদের মধ্যে খর্বকায় হওয়ার প্রবণতা বেশি।

রাজধানী ঢাকার বস্তির শিশুদের নিয়ে গবেষণা বিশ্লেষণে এই তথ্য পাওয়া গেছে। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) বিজ্ঞানীরা এই গবেষণা করেছেন। গতকাল সোমবার আইসিডিডিআরবিতে এক অনুষ্ঠানে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়। গবেষকেরা বলেছেন, পরিস্থিতির উন্নতিতে মায়ের ও কিশোরীর পুষ্টিতে গুরুত্ব দিতে হবে।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বাংলাদেশে, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, তানজানিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রাজিল ও পেরুর বস্তির শিশুদের নিয়ে বৈশ্বিক একটি গবেষণায় যুক্ত থাকা রাজধানীর মিরপুর বস্তি এলাকার ২১১ শিশুর স্বাস্থ্য নিয়ে এই গবেষণা হয়েছে। জন্মের পর থেকে ২৪ মাস বয়স পর্যন্ত এসব শিশুর পুষ্টি পরিস্থিতি তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন গবেষকেরা। গবেষণার উদ্দেশ্য ছিল, বস্তির দুই বছরের কম বয়সী শিশুরা কোন কোন কারণে খর্বকায় হয় তা চিহ্নিত করা এবং কারণগুলোর তুলনা করা। এই গবেষণায় অর্থায়ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের দাতা সংস্থা ইউএসএআইডি।

গবেষণার মূল বিষয় উপস্থাপন করেন আইসিডিডিআরবির ক্লিনিক্যাল সেবা ও পুষ্টি বিভাগের রিসার্চ ইনভেস্টিগেটর শুভাশিস দাশ। তিনি বলেন, দীর্ঘ সময় অপুষ্টিতে থাকলে শিশু খর্বকায় হয়। খর্বতা স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে বৈষম্যের একটি সূচক। খর্বকায় শিশুদের মৃত্যুহার বেশি এবং এদের মধ্যে বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ তুলনামূলক কম হয়। জাতীয়ভাবে ৩৬ শতাংশ শিশু খর্বকায়, আর বস্তিতে তা ৫০ শতাংশ।

শুভাশিস দাশ বলেন, বস্তির স্বাভাবিক শিশুদের চেয়ে খর্বকায় শিশুদের মধ্যে ডায়রিয়া, শ্বাসতন্ত্রের জটিলতা, জ্বর ও সর্দি-কাশির প্রকোপ বেশি। খর্বকায় শিশুরা বছরে গড়ে ৫৭ দিন অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করে। অন্যদের ক্ষেত্রে তা দুই দিন কম। খর্বকায় শিশুদের মধ্যে রক্তস্বল্পতার পাশাপাশি লৌহের ও জিংকের স্বল্পতা বেশি। লৌহ ও জিংক জাতীয় অনুপুষ্টি কণা শিশুর বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। গবেষকেরা দুই ধরনের শিশুদের খাদ্যের মাধ্যমে শক্তি গ্রহণ, শিশুখাদ্যের ধরন, রক্তস্বল্পতা, জন্ম ওজন, সর্দি-কাশি, বসতি, মায়ের উচ্চতা তুলনা করে দেখেছেন যে মায়ের উচ্চতাই শিশুর উচ্চতায় সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে।

মুক্ত আলোচনা পর্বে আইসিডিডিআরবির পুষ্টি ও ক্লিনিক্যাল সেবা বিভাগের জ্যেষ্ঠ পরিচালক তাহমিদ আহমেদ বলেন, বস্তির শিশুদের মধ্যে রক্তস্বল্পতার প্রকোপ ও অনুপুষ্টি কণার ঘাটতির সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া গেছে। তবে শিশুর খর্বতা কমাতে গুরুত্ব দিতে হবে মায়ের স্বাস্থ্যের ওপর। এই কাজ শুরু করতে হবে কিশোরী বয়স থেকে।

অনুষ্ঠানে একজন অংশগ্রহণকারী জানতে চান, বাবার উচ্চতা শিশুর ওপর কোনো প্রভাব ফেলে কি না। গবেষকেরা বলেন, এই প্রশ্নের উত্তর জানার চেষ্টা তাঁদের আছে।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন আয়োজক প্রতিষ্ঠানের হেলথ সিস্টেম অ্যান্ড পপুলেশন স্টাডিজ বিভাগের পরিচালক কামরুন নাহার। এতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদের মহাপরিচালক অধ্যাপক শাহ নেওয়াজ, জাতীয় পুষ্টি কর্মসূচির উপপরিচালক বিভাস চন্দ্র মানি প্রমুখ।