আট বছরে গরিব মানুষ কমেছে ১ কোটি ১৫ লাখ

>

• আজ বুধবার পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক দারিদ্র্য দূরীকরণ দিবস
• দারিদ্র্যবিমোচনে কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশ সাফল্য দেখাচ্ছে
• দারিদ্র্যবিমোচনে বিশ্বে বাংলাদেশকে উদাহরণ হিসেবে দেখা হয়
• বাংলাদেশে সাড়ে তিন কোটির বেশি মানুষ এখনো গরিব

গত আট বছরে দেশের এক কোটির বেশি মানুষ দারিদ্র্য-সীমার ওপরে উঠেছে। ২০১০ সালে দেশে যত গরিব মানুষ ছিল, তাদের এক-তৃতীয়াংশই নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পেরেছে। মোটা দাগে বলা চলে, তারা দারিদ্র্যসীমা অতিক্রম করেছে। তারা আর গরিব নেই।

দারিদ্র্যবিমোচনে কয়েক দশক ধরেই বাংলাদেশ সাফল্য দেখিয়ে আসছে। দারিদ্র্যবিমোচনে সারা বিশ্বে বাংলাদেশকে এখন উদাহরণ হিসেবে দেখা হয়। তারপরও এ দেশে সাড়ে তিন কোটির বেশি মানুষ এখনো গরিব। এ অবস্থায় আজ বুধবার পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক দারিদ্র্য দূরীকরণ দিবস। ১৯৯২ সালের ২২ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ সভায় ১৭ অক্টোবরকে এ দিবসের মর্যাদা দেওয়া হয়।

কয়েক দশক ধরেই বাংলাদেশ দারিদ্র্যবিমোচনে বেশ সফল। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যে (এমডিজি) ২০১৫ সালের মধ্যে দেশের দারিদ্র্যের হার অর্ধেকে নামিয়ে আনার লক্ষ্য ছিল। তিন বছর আগেই, অর্থাৎ ২০১৩ সালেই সেই লক্ষ্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ। আর টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে দারিদ্র্যের হার শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে হবে। বাংলাদেশ এর আগেই সেই লক্ষ্য অর্জন করবে বলে সরকারি বিভিন্ন মহল থেকে বলা হচ্ছে।

আয় বৃদ্ধির ফলেই দারিদ্র্য কমানোয় সাফল্য দেখিয়েছে বাংলাদেশ। এই আয় বৃদ্ধির যাত্রায় ধনীরাই বেশি এগিয়ে আছে। এর ফলে দেশে ধনী-গরিবের বৈষম্যও বেড়েছে। বিবিএসের সর্বশেষ হিসাবে সবচেয়ে ধনী ১০ শতাংশ মানুষ দেশের ৩৮ শতাংশ সম্পদের মালিক। আর সবচেয়ে গরিব ১০ শতাংশ মানুষের কাছে মাত্র ১ শতাংশ সম্পদ।

দারিদ্র্যের হার কমানোর বিষয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য শামসুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ দারিদ্র্যবিমোচনে বিস্ময়কর সাফল্য দেখিয়েছে। এটা ঠিক যে বৈষম্য বাড়ছে। এতে কিছুটা হলেও মাথাব্যথা বেড়েছে। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার পাশাপাশি প্রযুক্তি শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হবে। এতে একদিকে দারিদ্র্য কমবে, আয়-বৈষম্যও কমবে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০১০ সালের খানা আয় ও ব্যয় জরিপ অনুযায়ী ওই বছর বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার ছিল সাড়ে ৩১ শতাংশ। সে সময় দেশের জনসংখ্যা ছিল ১৪ কোটি ৯৭ লাখ। তখন দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করত ৪ কোটি ৭০ লাখ মানুষ। বিবিএস বলছে, আট বছর পর, অর্থাৎ ২০১৮ সালে দেশের দারিদ্র্যের হার কমে ২১ দশমিক ৮ শতাংশ হয়েছে। এখন দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৩৬ লাখ। সেই হিসাবে দেশে গরিব মানুষ আছে ৩ কোটি ৫৫ লাখ। গত ৮ বছরে গরিব মানুষ কমেছে ১ কোটি ১৫ লাখ।

শুধু আয়ের ভিত্তিতে নয়, বাংলাদেশে দারিদ্র্য পরিস্থিতি গণনা করা হয় মৌলিক চাহিদা পূরণের খরচের ভিত্তিতে। মৌলিক চাহিদা পূরণে ব্যয় পদ্ধতি অনুযায়ী একজন ব্যক্তিকে দৈনিক ২ হাজার ১২২ ক্যালরি পাওয়ার জন্য খাবার কিনতে যে পরিমাণ আয় করতে হবে, ওই ব্যক্তি সেই আয় করতে ব্যর্থ হলেই তিনি দরিদ্র। অতিদরিদ্র হলো, কোনো ব্যক্তি যদি দৈনিক ১ হাজার ৮০৫ ক্যালরি পাওয়ার খাবার কিনতে যে টাকা দরকার, তা আয় করতে ব্যর্থ হন।

গত আট বছরে হতদরিদ্র কমেছে ৭৮ লাখ। দেশে এখন হতদরিদ্র ১ কোটি ৮৬ লাখ মানুষ। ২০১০ সালে এ ধরনের হতদরিদ্র ছিল ২ কোটি ৬৩ লাখ মানুষ। ২০০০ সালে বাংলাদেশের সার্বিক দারিদ্র্যের হার ছিল ৪৮ দশমিক ৯ শতাংশ। তখন জনসংখ্যা ছিল ১৩ কোটি। তখন ৬ কোটি ৩৫ লাখ লোক গরিব ছিল। দেড় যুগের ব্যবধানে ২ কোটি ৮০ লাখ গরিব মানুষ কমেছে।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, গত কয়েক দশকে বাংলাদেশ দারিদ্র্যবিমোচনে অসাধারণ সাফল্য দেখিয়েছে। এটি বেশ বড় অর্জন। কৃষিতে, বিশেষ করে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া; শ্রমশক্তিতে নারীর অংশ বেড়ে যাওয়া—এসব কারণে দারিদ্র্যের হার দ্রুত কমেছে। দারিদ্র্যবিমোচনকে শুধু শতাংশের বিবেচনায় দেখলে হবে না, কত লোক এখনো দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে, সেটাও বিবেচনায় আনতে হবে। এখনো সাড়ে তিন কোটির বেশি মানুষ গরিব, এটি অনেক বেশি। এটি বড় উদ্বেগের বিষয়। দ্রুতগতিতে দারিদ্র্য কমাতে হবে। এ জন্য সামাজিক বঞ্চনার শিকার ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, যেমন চা-শ্রমিক, বেদে, হরিজন সম্প্রদায়ের মতো মানুষের দিকে নজর দিতে হবে।