তারুণ্যের উদ্যোগে ৬০ ফুট সড়কজুড়ে রেস্তোরাঁ-ক্যাফে

বন্ধুদের নিয়ে অনেকে খেতে আসেন ৬০ ফুট সড়কের বিভিন্ন রেস্তোরাঁয়।  ছবি: প্রথম আলো
বন্ধুদের নিয়ে অনেকে খেতে আসেন ৬০ ফুট সড়কের বিভিন্ন রেস্তোরাঁয়। ছবি: প্রথম আলো

এক মাস বাদেই গাঁটছড়া বাঁধবেন প্রিতম ও শ্রেয়া চক্রবর্তী। নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া বাড়াতে সময় পেলেই দেখা করছেন। একসঙ্গে সময় কাটানোর জন্য রেস্তোরাঁই তাঁদের পছন্দ। গত শুক্রবার তাঁরা গুলশান থেকে মিরপুরের ৬০ ফুটে আসেন দুপুরে একসঙ্গে খাবেন বলে। বসেন ইয়োলো’স কিচেন নামের একটি রেস্তোরাঁয়।

ব্যস্ততা ও দূরত্বের কারণে বন্ধুদের সঙ্গে অনেক দিন দেখা হয় না তিতাস মাহমুদের। ছুটির দিনে আড্ডা দেওয়া এবং একসঙ্গে খাওয়ার পরিকল্পনা করেন হুট করেই। শুক্রবার দুপুরে বেশ কয়েকজন বন্ধু এসে হাজির। বসে পড়েন ৬০ ফুট সড়কের পাশের একটি রেস্তোরাঁয়। গরম স্যুপের পেয়ালায় চামচ ডুবিয়ে গল্পের ঝড় তোলেন বন্ধুরা।

তিতাস বলেন, খাবার ভালো। বসার ব্যবস্থা সুন্দর। দামেও কিছুটা সস্তা। বাসাও কাছাকাছি। তাই বন্ধুরা মিলে কোনো আয়োজনের স্থান হিসেবে ৬০ ফুট সড়কের আশপাশের কোনো রেস্তোরাঁ বেছে নেন প্রায়ই।

মিরপুর-২ নম্বর থেকে মণিপুর, পীরেরবাগ হয়ে আগারগাঁও পর্যন্ত ৬০ ফুট সড়কটিতে যান চলাচল শুরু হয় ২০১৪ সালের শেষ দিকে। এরপর থেকে সড়কটির দুই পাশে গড়ে উঠতে থাকে রেস্তোরাঁ ও ক্যাফে। উদ্যোক্তাদের অধিকাংশই তরুণ। যারা খেতে আসে, তাদের বেশির ভাগই তরুণ।

ইয়োলো’স কিচেনের যাত্রা শুরু ২০১৫ সালের মার্চ মাসে। এর মালিক আরমান এফ ইসলামের বয়স তখন ২৩ বছর। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিবিএ পড়াকালীন ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে বন্ধুর সঙ্গে এই সড়কে ঢুকে চমকে যাই। পুরো সড়কে কেবল ছোট্ট একটা ক্যাফে। চারপাশে লোকালয়। বাসায় গিয়ে মাকে রাজি করাই এখানে একটি রেস্তোরাঁ করার জন্য। দুই হাজার টাকা বায়না করি রেস্তোরাঁর জন্য।’ এখন তাঁর রেস্তোরাঁয় ৬০ জন একসঙ্গে বসে খেতে পারেন।

সড়কটি ঘুরে দেখা যায়, কিছুদূর পরপরই খাবারের দোকান। কোথাও কোথাও একই ভবনে একাধিক রেস্তোরাঁ ও ক্যাফে। মিরপুরের বড়বাগ মোড় থেকে আমতলা বাজার পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার সড়কের দুই পাশে ছোট-বড় ৭০টি খাবারের দোকান গড়ে উঠেছে। এর বাইরে অনেক টং দোকানও রয়েছে। স্থানীয় ব্যক্তিরা বলছেন, ৬০ ফুট সড়কটি চালু হওয়ার পর থেকে রেস্তোরাঁ তৈরি হচ্ছে। তবে গত এক বছরে সবচেয়ে বেশি খাবারের দোকান হয়েছে বলে জানান তাঁরা।

সাতসতেরো নামের একটি রেস্তোরাঁয় ঢুঁ মেরে দেখা যায়, এক টেবিলে পরিবার নিয়ে খাবার খাচ্ছেন ইশতিয়াক হোসাইন বসুমিয়া। পাশের টেবিলে কয়েক বন্ধু মিলে খেতে খেতে গল্প করছেন। আবার রেস্তোরাঁর প্লে জোনে কয়েকটি শিশু খেলছে।

রেস্তোরাঁর ব্যবস্থাপক মো. সোয়াইব হায়দার জানান, সাত মাস আগে রেস্তোরাঁটি চালু হয়েছে। তরুণ ক্রেতাই বেশি। অনেকে আবার পরিবার নিয়ে আসেন রসনা বিলাস ও সময় কাটানোর জন্য। তাঁর রেস্তোরাঁয় ২০০ জনের একসঙ্গে খাবারের ব্যবস্থা আছে। বাংলা, চায়নিজ খাবারের পাশাপাশি এখানে সকালের নাশতা খাওয়ার সুযোগ আছে।

একটি সড়কে কেন এতগুলো রেস্তোরাঁ-ক্যাফে, এমন প্রশ্নের জবাবে কয়েকজন উদ্যোক্তা জানালেন, ৬০ ফুট সড়কের আশপাশে শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া, মণিপুর, পীরেরবাগ, মিরপুর ২ নম্বর, পাইকপাড়া ও আগারগাঁও এলাকা। এসব এলাকার মানুষই মূল ক্রেতা। এর পাশাপাশি মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজের কারণে রোকেয়া সরণির যাত্রীরা বিকল্প রাস্তা হিসেবে এ সড়ক ব্যবহার করছে। এতেও ক্রেতার সংখ্যা বাড়ছে।

কয়েকটি রেস্তোরাঁর মালিকেরা বলেন, ৬০ ফুট সড়কের রেস্তোরাঁ-ক্যাফেতে খাবারের দাম তুলনামূলক সস্তা। নানান স্বাদ ও পদের খাবার পাওয়া যায়। তাই অন্য এলাকা থেকেও ক্রেতারা ভিড় করে। রাতে পরিবার নিয়ে সময় কাটাতে আসা লোকজন বেশি। বিকেল-সন্ধ্যাটা তরুণদের আড্ডায় মুখরিত থাকে পুরো এলাকা।

১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. হারুন অর রশীদ প্রথম আলোকে বলেন, সড়কের দুই পাশে রেস্তোরাঁ হওয়ায় অনেকের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি
হয়েছে। পাশাপাশি এলাকাবাসীর বিনোদনেরও সুযোগ হয়েছে।