মুক্তিপণ দাবি করা ছাত্রলীগ কর্মীদের ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গত বৃহস্পতিবার রাতে দুজনকে আটকে পরিবারের কাছে মুক্তিপণ দাবির ঘটনায় অভিযোগ ওঠা ছাত্রলীগের দুই কর্মীকে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। শাহবাগ থানার পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, জিজ্ঞাসাবাদে ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা কোনো অভিযোগ না করায় এবং লিখিতভাবে কোনো অভিযোগ না আসায় তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

অভিযোগ থাকা ছাত্রলীগের দুই কর্মী হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি ও বুড্ডিস্ট স্টাডিজ বিভাগের ছাত্র ও শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল শাখা ছাত্রলীগের বিদায়ী কমিটির তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক আখতারুজ্জামান ও সংগীত বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র রাজিউর রহমান।

ছাত্রলীগের ওই দুজন কর্মীর সঙ্গে ভুক্তভোগী রিয়াজুল ইসলাম ও মো. সাইফুদ্দিন সিফাতকেও শাহবাগ থানায় পাঠানো হয়েছিল। দুই পক্ষকেই পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করে। পুলিশের দাবি, জিজ্ঞাসাবাদে ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা ছাত্রলীগের ওই দুই কর্মীর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করেননি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর জানান, পুলিশ তদন্ত করে অভিযোগের কোনো সত্যতা পায়নি। পরে গতকাল শুক্রবার বেলা একটায় আখতারুজ্জামান ও রাজিউরকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

অভিযোগ অস্বীকার করার বিষয়ে জানতে চাইলে ভুক্তভোগী সাইফুদ্দিন সিফাত প্রথম আলোকে জানান, ভয়ে তাঁরা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘অনেক মানুষ তখন আমাদের ঘিরে ছিলেন। থানার বাইরে তাঁরা আমাদের বলেছিলেন, অভিযোগ অস্বীকার করলে তাঁরা কিছু না বলে, বড় কোনো ঝামেলা না করে আমাদের ছেড়ে দেবেন।’ এ ঘটনায় মামলা করার চিন্তা করছেন না বলেও জানান তিনি।

শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান গতকাল সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভুক্তভোগী ও অভিযোগ থাকা দুজন—দুই পক্ষকেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে ভুক্তভোগীরা কোনো অভিযোগ করেননি। তাঁরা কোনো লিখিত অভিযোগও দেননি। তাই অভিযোগে থাকা দুজনকে গতকাল বেলা একটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিমের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তবে ভুক্তভোগীরা যদি অভিযোগ করেন, সেটি আমরা গ্রহণ করব।’

অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ার পরও অভিযোগ থাকা ছাত্রদের ছাড়া পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে কি না, আমি জানি না। আমার খোঁজ-খবর নিতে হবে। আইন অনুযায়ী মামলা না হলে অভিযোগ থাকা কাউকে, এমনকি একজন খুনের আসামিকেও ২৪ ঘণ্টার বেশি থানায় রাখা যায় না। তাঁরও আইনের আশ্রয় পাওয়ার অধিকার আছে। তাঁর ছাড়া পাওয়াটাও আইনগত বিষয়।’

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানী প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুই পক্ষকেই থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। পুলিশ তদন্ত করে অভিযোগের কোনো সত্যতা পায়নি। কেউ কোনো লিখিত অভিযোগও করেনি। অভিযোগ ছাড়া তো কাউকে থানায় রাখা যায় না। অভিযোগ ওঠা দুজন ও ভুক্তভোগী—চারজনেরই লিখিত বক্তব্য রাখা হয়েছে যে পরে কোনো কারণে ডাকা হলে তারা সহযোগিতা করবে।’

বৃহস্পতিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিমের মাধ্যমে ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন অভিযোগ ওঠা ওই কর্মীদের থানায় সোপর্দ করেন। সে সময় সাদ্দাম হোসেন প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ওই কর্মীদের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগের প্রমাণ মিলেছে।

এর আগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকা থেকে আখতারুজ্জামান ও রাজিউর রহমানের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন কর্মী রিয়াজুল ইসলাম ও মো. সাইফুদ্দিন সিফাত নামের দুজনকে আটক করেন। একপর্যায়ে ছাত্রলীগ কর্মীরা আটক করা শিক্ষার্থীদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের একটি কক্ষে নিয়ে মারধর করেন। মুঠোফোনে একজনের পরিবারের কাছে এক লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন তাঁরা।

খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন অভিযুক্ত দুই ছাত্রলীগ কর্মীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে ডেকে আনেন। এরপর বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিমের মাধ্যমে ছাত্রলীগের দুই কর্মী আখতারুজ্জামান ও রাজিউর রহমানকে শাহবাগ থানায় সোপর্দ করেন তাঁরা।