উন্নয়ন নিয়ে একগুচ্ছ প্রতিশ্রুতি ৩ প্রার্থীর

জগন্নাথপুর পৌর এলাকার লুদরপুর গ্রামের বাসিন্দা আবদুল তাহিদ। আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোহাম্মদ আবদুল মান্নানকে প্রশ্ন করে বসলেন, সাংসদ হিসেবে নির্বাচনী এলাকাভুক্ত দুই উপজেলা জগন্নাথপুর ও দক্ষিণ সুনামগঞ্জে উন্নয়নের ভারসাম্য কতটুকু রাখতে পেরেছেন? জবাবে প্রার্থী মান্নান বললেন, ‘আমি উন্নয়নের বিষয়ে দুই উপজেলার মধ্যে কোনো বৈষম্য করিনি। জগন্নাথপুরের রানীগঞ্জ সেতুর ব্যয়ের অর্থ দিয়ে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ সব উন্নয়ন ব্যয়ের পরিমাপ করা যাবে।’
পৌর এলাকারই হবিবপুর গ্রামের বাসিন্দা শাহ রুহেল প্রশ্ন করলেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী শাহীনুর পাশা চৌধুরীকে। তাঁর প্রশ্নটি ছিল এ রকম, অভিযোগ রয়েছে, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নামে টাকা তুলে আপনি আত্মসাৎ করেছেন। এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী? জবাবে শাহীনুর পাশা বললেন, ‘ভোটের মাঠে আমার জনপ্রিয়তা নষ্ট করতে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। কেউ দুর্নীতির প্রমাণ করতে পারলে আমি রাজনীতিই ছেড়ে দেব।’
মান্নান ও শাহীনুরসহ তিনজন প্রার্থী গতকাল শুক্রবার সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) আয়োজিত ‘জনগণের মুখোমুখি’ অনুষ্ঠানে অংশ নেন। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর পৌর শহরের আবদুস সামাদ আজাদ মিলনায়তনের সামনে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে তিন প্রার্থীই সুনামগঞ্জ-৩ আসনে নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে কাজ করার অঙ্গীকার করেছেন। পাশাপাশি নির্বাচিত হলে এলাকার উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দেন তাঁরা।
গতকাল বিকেলে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে সুনামগঞ্জ জেলা সুজনের সভাপতি আইনজীবী হোসেন তৌফিক চৌধুরী সভাপতিত্ব করেন। সুজনের সিলেট বিভাগের সমন্বয়ক আবদুল আলীমের পরিচালনায় স্বাগত বক্তব্য দেন সুজনের সুনামগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক আলী হায়দার। প্রধান অতিথি ছিলেন সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, ‘আমরা একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন দেখতে চাই। জনগণ যাতে কালোটাকার বিরুদ্ধে প্রভাবমুক্ত হয়ে তাঁদের রায় দিতে পারেন, এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলের নেতারা ও প্রার্থীদের ভূমিকা রাখতে হবে।’
পরে অংশগ্রহণকারী তিন প্রার্থীকে পাঁচ মিনিট করে বক্তব্যের সুযোগ দেওয়া হয়। এ সময় তাঁরা নির্বাচনী এলাকার উন্নয়নে নানা প্রতিশ্রুতি তুলে ধরেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুল মান্নান গত ১০ বছরের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে বলেন, উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষার পাশাপাশি ভবিষ্যতে নির্বাচিত হলে নির্বাচনী এলাকার সব কটি কলেজকে ডিগ্রি কলেজে রূপান্তর করা হবে। তাঁর উদ্যোগেই জগন্নাথপুর ডিগ্রি কলেজ সরকারীকরণ হয়েছে। ভবিষ্যতে এই কলেজে অনার্স ও মাস্টার্স চালু করা হবে।
ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী জমিয়তে উলামায়ে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় নেতা শাহীনুর পাশা চৌধুরী বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সামাদ আজাদের মৃত্যুর পর ২০০৫ সালের উপনির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে এলাকায় অনেক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করেছি। ভবিষ্যতে নির্বাচিত হলে জগন্নাথপুর-সিলেট ও জগন্নাথপুর-সুনামগঞ্জ সড়কে সম্প্রসারণসহ নানা উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করব।’
অপর প্রার্থী জাকের পার্টির শাহাজাহান চৌধুরী বলেন, ‘আমি নির্বাচিত হলে ঘুষ ও দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন গড়ে তুলব। নির্বাচিত না হলে নির্বাচিত প্রার্থীকে সহযোগিতা করব।’
ভোটারদের প্রশ্নোত্তর পর্বের পর উপস্থিত তিন প্রার্থী একে অপরের হাত উঁচিয়ে ধরে সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে নির্বাচনী নীতিমালা মেনে চলা এবং নির্বাচনের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে ১৫টি বিষয়ে অঙ্গীকার করেন।