বড় দুই দলের জন্য অস্বস্তি ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী

সৈয়দ ফয়জুল করীম, সৈয়দ নুরুল করীম
সৈয়দ ফয়জুল করীম, সৈয়দ নুরুল করীম

বরিশালে চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এবার ৩০০ আসনেই দলীয় প্রার্থী দিয়েছে। যাচাই-বাছাইয়ে একজনের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। দলের নেতা-কর্মীরা বলছেন, বরিশালের আসনগুলোতে তাঁরা শক্তিশালী অবস্থানে আছেন। কারণ, এখানে রয়েছে তাঁদের নিজস্ব ভোটব্যাংক।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরিশালের ছয়টি আসনে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীরা এলাকায় ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। বরিশালের চরমোনাই পীরের ভক্ত ও মুরিদ থাকায় মাঠপর্যায়ে দলটির প্রভাব রয়েছে। এ জন্য ভোটের ক্ষেত্রে দলটি বেকায়দায় ফেলতে পারে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে বরিশাল-৫ (সদর) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির ও চরমোনাই পীরের ছেলে মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করীম। ওইবার তিনি ২৭ হাজার ১৫৬ ভোট পেয়ে তৃতীয় অবস্থানে ছিলেন। এবারও তিনি বরিশাল সদর আসনে প্রার্থী হয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ঝালকাঠি-২ (সদর) আসনেও।

২০১৫ সালে ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে অংশ নেয় ইসলামী আন্দোলন। পরে খুলনা এবং গাজীপুর নির্বাচনেও দলের মেয়র প্রার্থী ছিল। চার সিটি নির্বাচনেই তৃতীয় অবস্থানে ছিল তাদের প্রার্থী। এর মধ্যে ঢাকা উত্তরে ১৮ হাজার, দক্ষিণে ১৫ হাজার, খুলনায় ১৪ হাজার ও গাজীপুরে ২৬ হাজার ভোট পেয়েছে দলটি।

ইসলামী আন্দোলন সূত্র জানায়, বরিশালের ছয়টি আসনের মধ্যে বরিশাল সদর আসনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। গত ১০ বছরে এই আসনে তাদের ৪ থেকে ৫ গুণ ভোট বেড়েছে। এ ছাড়া বরিশাল-৪ (মেহেন্দীগঞ্জ-মুলাদী) তাদের ভোটার আছেন। তাই এই দুটি আসনে জয়ের আশা করছেন তাঁরা। বাকি আসনগুলোতে আশানুরূপ ভোট পাবেন বলে আশা নেতাদের।

বরিশাল বিএনপির এক জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ইসলামী আন্দোলনের ভোট তাঁদের জন্য চিন্তার বিষয়, এটা ঠিক। বিগত দিনের নির্বাচনী ফলাফল থেকে বলা যায়,  ইসলামিমনা ভোটারদের ভোট বিএনপির বাক্সে পড়ে। হাতপাখা (ইসলামী আন্দোলনের প্রতীক) নির্বাচন না করলে ওই ভোটগুলো বিএনপি পেত। সে ক্ষেত্রে এবার ইসলামী আন্দোলন আলাদাভাবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় বিএনপির জন্য কিছুটা অস্বস্তিকর। তারপরেও তাতে খুব একটা প্রভাব পড়বে না। কারণ, মানুষ বিএনপির পক্ষে এবং বর্তমান সরকারের অন্যায় শাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ। এখন সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, মানুষ স্বাধীনভাবে তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন কি না, সে বিষয়টি নিশ্চিত করা।  

ইসলামী আন্দোলনের বরিশাল নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া হামিদী বলেন, কোনো দলের ক্ষতি করতে তাঁরা নির্বাচনে নামেননি, জয়ের জন্য নেমেছেন। গত সিটি নির্বাচনে প্রথমবারের মতো ঢাকা, গাজীপুর, খুলনায় ভোটে অংশ নিয়ে ভালো ভোট পেয়েছে হাতপাখা। বরিশাল তো পীরসাহেবের (চরমোনাই) নিজ এলাকা। তাই এই এলাকায় ভোটের মাঠে তাঁদের দলের প্রভাব আগেও ছিল। এবার তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি। সে ক্ষেত্রে তাঁরা বেশ কয়েকটি আসনে জয়ের লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নেমেছেন।

বরিশাল নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম আব্বাস চৌধুরী ইসলামী আন্দোলনের ভোট বিএনপির জন্য সমস্যা হবে বলে মনে করেন। তিনি বলেন, ইসলামী আন্দোলন দলটি প্রার্থী দেওয়ায় অস্বস্তিতে পড়েছে বিএনপি। এতে বিএনপির ভোট ভাগাভাগি হবে। তবে তাঁদের দলে এর কোনো প্রভাব পড়বে না।

নগর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল হক বলেন, তারা (ইসলামী আন্দোলন) ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে বরিশাল সদর আসনে ভালো ভোট পেয়েছিল, এটা ঠিক। কিন্তু ওইবার এই আসনে বিএনপির প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ার জয়ী হয়েছিলেন।

আনোয়ারুল হক আরও বলেন, আগের যেকোনো নির্বাচনের চেয়ে এবারের নির্বাচন সম্পূর্ণ আলাদা। গণতন্ত্র পুনঃ প্রতিষ্ঠার জন্য দেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ।