জমে উঠেছে দুই নতুনের নির্বাচনী প্রচারণা

মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দিচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী নিজাম উদ্দিন জলিল। গতকাল সন্ধ্যায় নওগাঁ সদর উপজেলার হাঁপানিয়া স্কুলমাঠে। ছবি: প্রথম আলো
মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দিচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী নিজাম উদ্দিন জলিল। গতকাল সন্ধ্যায় নওগাঁ সদর উপজেলার হাঁপানিয়া স্কুলমাঠে। ছবি: প্রথম আলো

নওগাঁ-৫ (সদর) আসনে নির্বাচনী ময়দানে জমে উঠেছে দুই নতুনের লড়াই। এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নিজাম উদ্দিন জলিল ও বিএনপির জাহিদুল ইসলাম। সংসদ সদস্য প্রার্থী হিসেবে দুজনেই নতুন মুখ। তাঁদের ঘিরে এখন সরগরম পুরো নির্বাচনী এলাকা।

দুই প্রার্থীর কর্মী-সমর্থক ও ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখানে এবার নৌকা ও ধানের শীষের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে।

সদর উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন এবং ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত নওগাঁ-৫ আসন। এই আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ১১ হাজার ৭০১ জন। নতুন ভোটার ৫৭ হাজার ৯১৮ জন। ১৯৯১ সালের পর থেকে ষষ্ঠ ও দশম সংসদ নির্বাচন বাদে এই আসনে আওয়ামী লীগ জয় পেয়েছে দুবার (২০০১ ও ২০০৮ সালে) এবং বিএনপি জয় পেয়েছে দুবার (১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে)। আগের নির্বাচনগুলোতে এখানে নৌকা ও ধানের শীষের প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে।

একাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রতীক বরাদ্দের পর থেকেই প্রচারণা শুরু করেছেন নৌকা ও ধানের শীষের দুই প্রার্থী ও তাঁদের কর্মী-সমর্থকেরা। তাঁরা সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় ভোটারের দ্বারে দ্বারে ছুটে বেড়াচ্ছেন। ভোট প্রার্থনার পাশাপাশি প্রার্থীরা দিচ্ছেন নানা উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি। ভোটাররাও তাঁদের নিয়ে শুরু করেছেন বিচার-বিশ্লেষণ। গ্রাম-শহর, পাড়া-মহল্লায় গল্প-আড্ডায় আলোচনার কেন্দ্রে নৌকা ও ধানের শীষের এই দুই প্রার্থী।

নিজাম উদ্দিন জলিলের বাবা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত আব্দুল জলিল আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে এই আসনে আটবার নির্বাচন করেছিলেন। এর মধ্যে জয়ী হয়েছেন পাঁচবার। ২০১৩ সালে তাঁর মৃত্যুর পর উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী আবদুল মালেক সাংসদ নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালের ‘একতরফা’ নির্বাচনে তিনি আবারও নির্বাচিত হন। তিনি এবারও দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। তবে এবার আওয়ামী লীগের চূড়ান্ত দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয় জলিলপুত্র নিজাম উদ্দিন জলিলকে।

গতকাল শনিবার সদর উপজেলার বর্ষাইল ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে গণসংযোগ করেন নিজাম উদ্দিন জলিল। সেখান থেকে মুঠোফোনে তিনি বলেন, ‘নির্বাচিত হতে পারলে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের ধারায় নওগাঁকে আরও উন্নত করতে চাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ও আমার বাবার দেখানো পথে সাধারণ মানুষের সেবা করতেই নৌকার মাঝি হয়েছি।’

এলাকাবাসীর সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দিচ্ছেন বিএনপির প্রার্থী জাহিদুল ইসলাম। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় নওগাঁ সদর উপজেলার বোয়ালিয়া স্কুলমাঠে।  ছবি: প্রথম আলো
এলাকাবাসীর সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দিচ্ছেন বিএনপির প্রার্থী জাহিদুল ইসলাম। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় নওগাঁ সদর উপজেলার বোয়ালিয়া স্কুলমাঠে। ছবি: প্রথম আলো

এদিকে, এই আসনে ধানের শীষের প্রার্থী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম। রাজনীতির মাঠে পুরোনো হলেও এবারই প্রথম সংসদ সদস্য প্রার্থী হলেন তিনি। বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের আব্দুল জলিলের মতো প্রার্থীকে হারিয়ে এখানে বিএনপির প্রার্থী সামসুদ্দিন চৌধুরী জয়ী হন। ২০০১ ও ২০০৮ সালেও এখানে বিএনপির প্রার্থী অল্প ব্যবধানে হেরে যান। ২০১৪ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে এখানে বিএনপির প্রার্থী জয়ী হন। এ ছাড়া শত প্রতিকূলতার মধ্যেও ২০১৬ সালে পৌরসভা নির্বাচনেও এখানে বিএনপির প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। বর্তমানে জাহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের সব স্তরের নেতা-কর্মী ঐক্যবদ্ধ। সুষ্ঠু ভোট হলে এখানে বিএনপির প্রার্থীই জয়ী হবেন।

নওগাঁ পৌর বিএনপির সভাপতি নাসির আহমেদ বলেন, ‘জাহিদুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে তাঁকে নিয়ে কোনো ভেদাভেদ নেই। দলের নেতা-কর্মী ও ভোটারের কাছে তিনি স্বচ্ছ ভাবমূর্তির নেতা। এখানে ধানের শীষকে জয়ী করতে জাহিদুল ইসলামের পক্ষে আমরা ঐক্যবদ্ধ।’

গতকাল বিকেলে শহরের উকিলপাড়া এলাকায় গণসংযোগ চালান জাহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘মানুষের ভালোবাসা নিয়েই ভোটযুদ্ধে নেমেছি। ভোটারের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করছি। তাঁদের দোয়া চাইছি। এখানে বিএনপির যে সুদৃঢ় অবস্থান রয়েছে, তাতে জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী।’

দুই প্রার্থীর হলফনামা বিশ্লেষণ

আওয়ামী লীগের প্রার্থী নিজাম উদ্দিন জলিল পেশায় আইন পরামর্শক। শিক্ষাগত যোগ্যতা ব্যারিস্টার–অ্যাট–ল। হলফনামায় তিনি বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ১২ লাখ ৪ হাজার ৭৬৭ টাকা।  পুরোটাই আসে আইনি পেশা থেকে। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নিজ নামে ৭৯ লাখ ২৫ হাজার ১৩৯ টাকা ছাড়া তাঁর আর কিছুই নেই। এ ছাড়া তাঁর কোনো স্থাবর সম্পদ নেই। তবে তাঁর উল্লেখযোগ্য তেমন সম্পদ না থাকলেও ব্যাংকঋণ রয়েছে ৬ কোটি ৭০ হাজার ৭০৩ টাকা।

বিএনপির প্রার্থী জাহিদুল ইসলামের পেশা ব্যবসা। তিনি বিকম পাস। তাঁর বার্ষিক আয় ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। পুরোটাই আসে ব্যবসা থেকে। জাহিদুলের কাছে কোনো নগদ টাকা নেই। অস্থাবর সম্পদ বলতে রয়েছে ১৫ ভরি সোনা ও ২ লাখ টাকার আসবাবপত্র। তাঁর স্ত্রীর নামে রয়েছে ২৫ ভরি সোনা ও ৫ লাখ টাকার আসবাবপত্র। স্থাবর সম্পদের মধ্যে যৌথ মালিকানার সাড়ে ৪ কাঠা জমির ওপর তিনতলা একটি বাড়ি আছে। এ ছাড়া তাঁর নিজ নামে ও স্ত্রীর নামে আর কোনো স্থাবর সম্পদ নেই বলে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন। তাঁর কোনো দায়-দেনা নেই। তবে জাহিদুল গাড়ি পোড়ানোর অভিযোগে সদর থানায় করা মামলার আসামি।