জমে উঠেছে আওয়ামী লীগ বিএনপির ভোটের লড়াই

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে নেত্রকোনার পাঁচটি আসনের সাধারণ মানুষের সংশয় ও শঙ্কা থাকলেও তাঁদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনারও কমতি নেই। এই জেলায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীরা নিজ নিজ অবস্থান থেকে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। ফলে জমে উঠেছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ভোটের লড়াই।

তবে বিএনপির প্রার্থীদের অভিযোগ, সরকারি দলের সহায়তায় পুলিশ প্রায় প্রতিদিনই বিএনপির নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করছে। মিথ্যা ঘটনা সাজিয়ে নাশকতা ও বিস্ফোরক আইনে বিএনপির বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মীকে আসামি করে একের পর এক মামলা দেওয়া হচ্ছে। প্রচারে বাধা, প্রাণনাশের হুমকিসহ নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। তবে সরকারি দল ও পুলিশ বিএনপির এই অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিচ্ছে।

পাঁচটি আসনের শতাধিক সাধারণ ভোটারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রার্থীরা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। পোস্টার ও বিভিন্ন ধরনের প্রচারণায় মুখর সারা জেলা। নিজ দলের প্রার্থীকে জয়ী করতে মনোনয়নবঞ্চিত নেতারাও এককাট্টা রয়েছেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে নৌকায় ভোট চাচ্ছেন। আর বিএনপির প্রার্থীরা সরকারি দলের নিপীড়নের কথা বলে ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন।

কলমাকান্দার বড়খাপন গ্রামের নতুন ভোটার জুয়েল জোয়ারদার বলেন, ‘এবার আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীদের মধ্যে লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি। নেত্রকোনা-২ আসনের ভোটার ও মোক্তারপাড়ার বাসিন্দা কলেজছাত্র আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘প্রচার–প্রচারণায় শহর মুখরিত।’ নেত্রকোনা-৪ আসনের ভোটার মদনের জাহাঙ্গীরপুরের রুখসানা আক্তার বলেন, ‘ভোটের আনন্দ উৎসব চলছে চায়ের দোকান থেকে শুরু করে রাস্তার মোড়ে মোড়ে।’

নেত্রকোনা-১ আসনটি কলমাকান্দা ও দুর্গাপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত। এবার এই আসনে নতুন মুখ হিসেবে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হয়েছেন মানু মজুমদার। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ছাড়াও বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদকারীদের মধ্যে অন্যতম। তিনি এই আসনের আওয়ামী লীগের বর্তমান সাংসদ ছবি বিশ্বাসের আপন ভগ্নিপতি। তাঁর সঙ্গে এবার বিএনপির পুরোনো প্রার্থী আইনজীবী কায়সার কামাল। তিনি কেন্দ্রীয় বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক। নবম সংসদ নির্বাচনে তিনি বিএনপির প্রার্থী হয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোশতাক আহমেদের সঙ্গে পরাজিত হন। মোশতাক স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করছেন।

নেত্রকোনা-২ (সদর-বারহাট্টা) আসনে নতুন মুখ হিসেবে বিএনপির প্রার্থী অর্থোপেডিক চিকিৎসক মো. আনোয়ারুল হক। তিনি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক। তিনি দীর্ঘদিন ধরে গরিব রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন। পাশাপাশি তিনি রাজনৈতিক মামলায় নেতা-কর্মীদের আইনি খরচের সহায়তা করছেন। তিনি বলেন, ‘প্রচার করতে গিয়ে সাধারণ মানুষের ভালোবাসা ও উদ্দীপনামূলক কথা শুনে সাহস জাগে।’ আওয়ামী লীগের প্রার্থী আশরাফ আলী খান। আশরাফ আলী খানও জেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদক। নবম সংসদ নির্বাচনে তিনি জয়ী হন। তিনি জয়ী হয়ে তাঁর অসমাপ্ত কাজ শেষ ও মাদকমুক্ত নেত্রকোনা গড়তে চান।

নেত্রকোনা-৩ আসনের আওয়ামী লীগের নতুন মুখ হিসেবে প্রার্থী হয়েছেন অসীম কুমার উকিল। তিনি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক। এই আসনে বিএনপির প্রার্থী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রদল নেতা মো. রফিকুল ইসলাম হিলালী। তিনি কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য। নবম সংসদ নির্বাচনে তিনি বিএনপির প্রার্থী হয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মঞ্জুরুল কাদের কোরায়েশীর কাছে পরাজিত হন।

নেত্রকোনা-৪ (মোহনগঞ্জ-মদন-খালিয়াজুড়ি) আসনে নতুন মুখ বিএনপির প্রার্থী তাহমিনা জামান। তিনি সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের স্ত্রী। অপর দিকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সাংসদ রেবেকা মমিন। তিনি টানা দুবারের সাংসদ। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য। স্থানীয় ব্যক্তিরা বলছেন, এই আসনে দুই নারীর লড়াই বেশ জোরেশোরেই জমেছে।

নেত্রকোনা-৫ (পূর্বধলা) আসনে বিএনপির প্রার্থী মো. আবু তাহের তালুকদার। তিনি জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদকের পর টানা তিনবার জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সাংসদ ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল (বীর প্রতীক)। তিনিও টানা দুইবারের সাংসদ। তিনি পূর্বধলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি।

এ ছাড়া নেত্রকোনায় সিপিবির চারজন, ইসলামী আন্দোলনের পাঁচজন এবং জাকের পার্টি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, ইসলামী ঐক্যজোট, জাতীয় পার্টি, মুসলিম লীগ ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের একজন করে এবং একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।