১০৩ আসনে নারী ভোটার বেশি

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে ১০৩টি আসনে নারী ভোটারের সংখ্যা পুরুষ ভোটারের চেয়ে বেশি। বিভাগওয়ারি হিসাবে দেখা যায়, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে পুরুষ ভোটারের চেয়ে নারী ভোটার বেশি।
দেশে ৫ কোটি ১৬ লাখের বেশি নারী ভোটার আছে। গত ১০টি সংসদ নির্বাচনের ভোটারসংখ্যা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, তালিকায় নারী ও পুরুষ ভোটারের পার্থক্য ক্রমান্বয়ে কমেছে। এবার যে ভোটার তালিকা ব্যবহার করে একাদশ সংসদ নির্বাচন হবে, তাতে ৪৯ দশমিক ৫৭ শতাংশ নারী ভোটার।
দেশের মোট জনসংখ্যায় নারীর সংখ্যা পুরুষের চেয়ে কম। তবে নির্বাচন কমিশন থেকে যে তথ্য পাওয়া গেছে, তাতে দেখা যায় একমাত্র ২০০৮ সালের ভোটার তালিকায় নারী ভোটার ছিল পুরুষ ভোটারের চেয়ে বেশি।
তবে নারী-পুরুষের ভোটদানের পৃথক কোনো তথ্য সরকারিভাবে পাওয়া যায় না। নির্বাচন পর্যবেক্ষণ প্রতিষ্ঠান ব্রতীর নির্বাহী পরিচালক শারমিন মুরশিদ বলছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভোটকেন্দ্রে নারীর উপস্থিতি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। তবে তা পুরুষের চেয়ে কম না বেশি, সেই হিসাব নেই। পরিবেশ শান্তিপূর্ণ থাকলে নারীরা বেশি ভোট দেন।

১০৩ আসনে নারী বেশি
দেশে নারী ভোটারের চেয়ে পুরুষ ভোটার মাত্র ৯ লাখ ৪ হাজার ১৫ জন বেশি। আসনভিত্তিক ভোটার তালিকায় দেখা গেছে, ১০৩টি আসনে নারী ভোটার বেশি। সবচেয়ে বেশি জামালপুর-৫ আসনে। এখানে পুরুষের চেয়ে নারী ১১ হাজার ৫৬ জন বেশি। নারী ও পুরুষ ভোটারের পার্থক্য সবচেয়ে কম দিনাজপুর-৩ আসনে। এখানে নারী ভোটার বেশি মাত্র ২৩ জন।
রাজশাহী বিভাগে ২৪টি, খুলনা বিভাগে ২১টি, ঢাকা বিভাগে ১৮টি, রংপুর বিভাগে ১৭টি, সিলেট বিভাগে ৮টি, ময়মনসিংহ বিভাগে ৭টি এবং বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগে ৪টি করে আসনে নারী ভোটার বেশি। আর কয়েকটি জেলা আছে যেগুলোর সব কটি আসনে নারী ভোটার বেশি। এর মধ্যে আছে জয়পুরহাটের ২টি, মেহেরপুরের ২টি, কুড়িগ্রামের ৪টি, গাইবান্ধার ৫টি ও বগুড়ার ৬টি আসন।

.
.

বিভাগওয়ারি ভোটার বিশ্লেষণে দেখা যায়, রংপুর বিভাগে পুরুষের চেয়ে ৫৭ হাজার ৮৫৬ নারী ভোটার বেশি। রাজশাহী বিভাগে এই সংখ্যা ১০ হাজার ৯৬৬।
বিভাগওয়ারি নারী ও পুরুষ ভোটারের সবচেয়ে বড় পার্থক্য চট্টগ্রাম বিভাগে। এই বিভাগে নারী ভোটারের চেয়ে পুরুষ ভোটার মোট ৪ লাখ ৩৯ হাজার ৭৩৩ জন বেশি।
নারী ও পুরুষ ভোটারের সবচেয়ে বড় পার্থক্য ঢাকা-৮ আসনে। এই আসনে নারীর চেয়ে ৩৯ হাজার ৩২১ জন পুরুষ ভোটার বেশি। পুরুষ ভোটার বেশি হলেও নারী-পুরুষ ভোটারের পার্থক্য সবচেয়ে কম ফরিদপুর-৩ আসনে। এই আসনে নারীর চেয়ে পুরুষ ভোটার ২৯ জন বেশি।

নারী ভোটার বৃদ্ধি-হ্রাস
অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা গেছে, যে হারে ভোটার বাড়ে, সেই অনুপাতে নারী ভোটার বাড়ে না। ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে মোট ভোটার বেড়েছিল ২৩ শতাংশ, কিন্তু নারী ভোটার বেড়েছিল ১৯ শতাংশ। নারী ভোটার বৃদ্ধির হার সবচেয়ে বেশি ছিল ২০০১ সালের তালিকায়। তখন বেড়েছিল ৩০ শতাংশ। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের ভোটার তালিকায় ১৩ শতাংশ ভোটার যুক্ত হয়েছেন। নারী ভোটারের ক্ষেত্রেও তা ছিল যথাক্রমে ১১ ও ১৩ শতাংশ।
দেশের ইতিহাসে প্রথমবার নারী ভোটারের
সংখ্যা পুরুষ ভোটারের চেয়ে বেশি দেখা যায় ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটার তালিকায়। সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ওই নির্বাচনে জাতীয় পরিচয়পত্রের ভিত্তিতে ভোটার তালিকা তৈরি হয়। তালিকায় ভোটারের ছবি অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের করা ওই তালিকায় পুরুষের চেয়ে নারী ভোটার বেশি ছিল ১৪ লাখের বেশি।

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন হোসেন জিল্লুর রহমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তখন তালিকা তৈরিতে নতুন পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছিল। সে কারণে কিছু ত্রুটি হয়তো হয়ে থাকতে পারে। সর্বশেষ ২০১১ সালের আদমশুমারিতে নারী জনসংখ্যা ৪৯ শতাংশ। নির্বাচন কমিশন বলছে, বর্তমান ভোটার তালিকায় ৪৯ শতাংশ ভোটার নারী। নারী ভোটার বৃদ্ধির হার এখন মোট ভোটার বৃদ্ধির হারের সঙ্গেও সংগতিপূর্ণ।
তবে ভোটার তালিকায় নারীর হার বিভিন্ন সময় ভিন্ন ভিন্ন দেখা গেছে। ১৯৮৬ থেকে ১৯৯১ পর্যন্ত তিনটি নির্বাচনে নারী ভোটার ছিল ৪৭ শতাংশ। এই সময় মোট জনসংখ্যায় নারীর হার ছিল তার চেয়ে সামান্য বেশি।
ভোটার তালিকা নিয়ে বড় প্রশ্ন ওঠে ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে। সেবার আগের চেয়ে ১ কোটি ৮২ লাখের বেশি ভোটারের নাম তালিকায় ওঠে। ভোটার বৃদ্ধির হার ছিল ৩২ শতাংশ। আর নারী ভোটার বৃদ্ধি ছিল ৩০ শতাংশ।
২০০১ সালের নির্বাচনের আগে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) ভোটার তালিকার ভুলত্রুটি নিয়ে কাজ করেছিল। তাদের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ১৭টি আসনে ভোটার বেড়েছিল ৫০ শতাংশের বেশি এবং ৩৩টি আসনে বেড়েছিল ৪১ থেকে ৫০ শতাংশ।

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

২০০৬ সালে আবার ভোটার তালিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। আন্দোলনের মুখে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতা ছাড়ে এবং সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসে। তারা ভোটার তালিকায় ১ কোটি ৩০ লাখ ভুয়া ভোটার চিহ্নিত করে। পরে সে তালিকা বাতিলই করে দেয়।
২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনের আগেও ভোটার তালিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। নারীর চেয়ে পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ১২ লাখের বেশি ছিল।
২০১৮ সালের ভোটার তালিকা নিয়ে বড় কোনো অভিযোগ এখনো কেউ তোলেনি।