গতবারের আলোচিত জাপা এবার ছন্নছাড়া

>

• নির্বাচনে নেই রুহুল আমিন ও জিয়াউদ্দিন বাবলু
• নির্বাচনী প্রচারে নেই দলীয় প্রধান এরশাদও
• জাপা প্রধান এরশাদ রয়েছেন সিঙ্গাপুরে
• এবার ভাগাভাগিতে ২৬ আসন পেয়েছে জাপা
• মাত্র ২৬টি আসন পাওয়ায় অসন্তুষ্ট এরশাদ
•প্রার্থী চূড়ান্তকরণে কর্তৃত্ব ছিল না এরশাদের
• রওশনসহ অন্য শীর্ষ নেতারাও চুপচাপ

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে আলোচিত জাতীয় পার্টি (জাপা) এবার অনেকটাই ছন্নছাড়া। কয়েক দিন পর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। দলীয় প্রধান এইচ এম এরশাদ রয়েছেন সিঙ্গাপুরে। তাঁর স্ত্রী ও দলের সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদও চুপচাপ। আবার গত নির্বাচনে খুব তৎপর ছিলেন, এমন বড় নেতারাও নিষ্ক্রিয়। এ অবস্থায় দলীয় প্রার্থীদের জিতে আসা নিয়ে কিছুটা শঙ্কায় পড়েছেন নেতারা।

এবার আওয়ামী লীগের সঙ্গে ভাগাভাগিতে ২৬টি আসন পেয়েছে জাপা। এর মধ্যে লক্ষ্মীপুর-২ আসনে মহাজোটের মনোনয়ন পাওয়া জাপার প্রার্থী ও বর্তমান সাংসদ মোহাম্মদ নোমান চাপের মুখে ভোট থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। ফলে নির্বাচনে মহাজোট হিসেবে জাপার প্রার্থী থাকল ২৫ জন। যদিও ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনে জাপার ৩৪ জন সাংসদ হয়েছিলেন। এবার আরও ১৪৭ আসনে জাপার প্রার্থী আছেন। তাঁরা মাঠে তেমন সক্রিয় নন। কোনো কারণে বিএনপি ভোট বর্জন করে বসলে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ দেখানোর কৌশলের অংশ হিসেবে তাঁদের প্রার্থী করা হয়েছিল এবং তাতে সরকারের সায় ছিল বলে জানা গেছে।

জাপার উচ্চপর্যায়ের সূত্র জানায়, জাপার নেতারা শুরুতে ৭০টি আসন চেয়েছিলেন। তখন তাঁদের ৪৫ টির মতো দেওয়া হতে পারে, এমন আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। পরে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব আশা করেছিলেন, অন্তত অর্ধশত আসনে তাঁদের ছাড় দেবে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সেটা অর্ধেকে নেমে আসায় দলের নেতা-কর্মীরা হতাশ। যার প্রভাব পড়েছে নির্বাচনী মাঠে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দলে মনোনয়ন নিয়ে বাণিজ্যের অভিযোগ, হঠাৎ দলীয় মহাসচিব পদে পরিবর্তন এবং এরশাদের অসুস্থ হয়ে পড়া। যদিও আসন ভাগাভাগি নিয়ে দর-কষাকষি চলাকালেই এরশাদ ঢাকার সিএমএইচে ভর্তি হন। ১০ ডিসেম্বর তিনি চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর যান।

এরশাদের অবর্তমানে তাঁর দুই নির্বাচনী এলাকা রংপুর-৩ ও ঢাকা-১৭ আসনে প্রচারে জোর নেই। নেতারা বলছেন, চেয়ারম্যান না থাকায় নেতা-কর্মীরা প্রচারে উৎসাহ পাচ্ছেন না।

এরশাদের সঙ্গে সিঙ্গাপুরে থাকা দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু গতকাল টেলিফোনে প্রথম আলোকে বলেছিলেন, এরশাদ আজ সোমবার রাতে দেশে ফিরবেন।

তবে গতকাল রাত সাড়ে ১১টায় এক বিবৃতিতে এরশাদের উপপ্রেস সচিব খন্দকার দেলোয়ার জালালী জানান, নিয়মিত মেডিকেল চেকআপ শেষে আজ দেশে ফেরার কথা ছিল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের। কিন্তু মেডিকেল চেকআপ শেষ না হওয়ায় আজ দেশে ফিরছেন না তিনি।

জাপা সূত্র জানায়, বার্ধক্যের কারণে এরশাদের শারীরিক অবস্থা এমনিতে ভালো না। মহাজোটের আসন বণ্টনে তাঁর মতামত নেওয়া হয়নি। যে ২৬ আসন জাপাকে দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে এরশাদ, রওশন এরশাদ এবং জি এম কাদের ছাড়া বাকি আসনগুলোর প্রার্থী চূড়ান্ত করে দিয়েছে সরকারি দল। এ নিয়ে অসন্তোষ থাকলেও এরশাদ এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাননি।

২০১৪ সালের নির্বাচনের আগ মুহূর্তে হঠাৎ নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়ে এরশাদ সিএমএইচে ভর্তি হওয়ার পর জাপার মুখ্য ভূমিকায় ছিলেন স্ত্রী রওশন এরশাদ। দলের দুই সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, জিয়াউদ্দিন আহমেদসহ কয়েকজন নেতা রওশন এরশাদকে সামনে রেখে নির্বাচনে অংশ নেন। তাঁরা সরকারের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতায় ভূমিকা রাখেন। এবার রওশন দলীয় মনোনয়ন এবং আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি নিয়ে চুপচাপ ছিলেন। এরশাদ অসুস্থ হয়ে দেশের বাইরে যাওয়ার পরও দলীয় কর্মকাণ্ডে দৃশ্যমান সক্রিয় নন রওশন। এমনকি নিজের নির্বাচনী এলাকা ময়মনসিংহ-৪ আসনে আওয়ামী লীগ ও দলীয় নেতাদের সঙ্গে সমন্বয় সভা করলেও এখন পর্যন্ত গণসংযোগে নামেননি বলে স্থানীয় নেতারা জানিয়েছেন। দলের আরেক শীর্ষ নেতা ও কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের লালমনিরহাট-৩ আসনে নির্বাচন করছেন। তিনি তাঁর নির্বাচনী প্রচারে ব্যস্ত।

আনিসুল ইসলাম মাহমুদও নিজের নির্বাচন (চট্টগ্রাম-৫) নিয়ে ব্যস্ত আছেন। জিয়াউদ্দিন বাবলু মহাজোটের মনোনয়ন না পেয়ে নিষ্ক্রিয় আছেন। এ বিষয়ে জিয়াউদ্দিন বাবলু প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখন তো আমি দলের কোনো দায়িত্বে নেই।’

এদিকে মনোনয়ন-বাণিজ্যের অভিযোগে মনোনয়নবঞ্চিত নেতাদের একটি অংশের উত্তেজনার মুখে এরশাদ ৩ ডিসেম্বর দলের মহাসচিব বদলান। এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারকে অব্যাহতি দিয়ে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমানকে মহাসচিব করেন এরশাদ। যদিও মনোনয়ন-বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছিল দলীয় প্রধান এরশাদ, মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার ও এরশাদের রাজনৈতিক সচিব সুনীল শুভ রায়ের বিরুদ্ধে।

জাপার নেতারা বলছেন, বিভিন্ন দিকের চাপ ও দায় এড়াতে এরশাদ মহাসচিব পদ থেকে রুহুল আমিন হাওলাদারকে সরিয়ে দেন। দুদিন পর হাওলাদারকে দ্বিতীয় শীর্ষ নেতার পদমর্যাদায় চেয়ারম্যানের বিশেষ সহকারী নিয়োগ দেন। নির্বাচনের আগ মুহূর্তে এসব কর্মকাণ্ডের প্রভাব নেতা-কর্মীদের ওপরও পড়েছে।

অবশ্য রুহুল আমিন হাওলাদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি মহাসচিব পদ থেকে অব্যাহতি পাওয়ার পর বরিশালে স্ত্রীর নির্বাচনী এলাকায় চলে এসেছি। নেতা-কর্মীরা নিজ নিজ এলাকায় কাজ করছেন। যাঁরা আমার সহযোগিতা চেয়েছেন, আমি সাধ্যমতো চেষ্টা করছি তাঁদের পাশে থাকার।’