বিএনপির প্রার্থী এখনো অবরুদ্ধ

ভোলা-২ আসনের সাংসদ আওয়ামী লীগ প্রার্থী আলী আজম মুকুল প্রচারে। উপজেলা সড়কে গত শনিবার।  প্রথম আলো
ভোলা-২ আসনের সাংসদ আওয়ামী লীগ প্রার্থী আলী আজম মুকুল প্রচারে। উপজেলা সড়কে গত শনিবার। প্রথম আলো

ভোলা-২ (বোরহানউদ্দিন-দৌলতখান) আসনের আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীর বাড়ি বোরহানউদ্দিন উপজেলার একই সড়কে। নাম উপজেলা সড়ক। একটি থেকে আরেকটি বাড়ির দূরত্ব সর্বোচ্চ ২০০ গজ। পশ্চিম দিকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আলী আজমের বাড়ি। পূর্ব দিকের বাড়িটি বিএনপির প্রার্থী হাফিজ ইব্রাহিমের।

আলী আজমের বাড়ির সামনে সকাল-বিকেল কয়েক শ মানুষ অবস্থান করছেন। আসছেন-যাচ্ছেন, চা খাচ্ছেন। থেকে থেকে নৌকার স্লোগান তুলছেন। আর বিএনপির প্রার্থীর বাড়ির সামনে ৭-৮ জন পুলিশ, ফটক বন্ধ।

এ বাড়ি দুটোর চিত্রের মতোই এ আসনের প্রচারণার চিত্র। বিএনপির প্রার্থী বলছেন, তাঁকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। আর আওয়ামী লীগের প্রার্থী বলছেন, আগের কর্মকাণ্ডে বিব্রত হয়ে বিএনপির প্রার্থী নিজ থেকে বের হচ্ছেন না।

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আলী আজম (মুকুল) দিন-রাত নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। সড়কের অলিতে-গলিতে তাঁর পোস্টার ঝোলানো। পথসভা ও উঠান বৈঠক করছেন নিয়মিত। সমানতালে চলছে মাইকিং ও লিফলেট বিলি।

এ আসনের অপর প্রার্থী হলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. ওবায়দুর রহমান। গ্রামে-গঞ্জে হাতপাখা ও নৌকার পোস্টার পাওয়া গেলেও ধানের শীষের পোস্টারের দেখা মেলেনি। দৌলতখান ও বোরহানউদ্দিন উপজেলার কমপক্ষে ৫০ জন ভোটার বলেন, ধানের শীষের পোস্টার দেখেননি। কেউ এখনো ধানের শীষের প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাইতে আসেননি।

বিএনপির নেতা-কর্মীরা বলেন, হাফিজ ইব্রাহিম দীর্ঘদিন এলাকায় ছিলেন না। ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে তিনি বোরহানউদ্দিন উপজেলার হাকিম উদ্দিন ঘাটে নামেন। তাঁর আসাকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের কর্মীরা তাঁদের ওপর হামলা করেন। পরে দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়। এরপর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বোরহানউদ্দিন থানায় দুটি মামলা করা হয়। ওই মামলায় বোরহানউদ্দিন ও দৌলতখান উপজেলার ৭৬৬ জনকে আসামি করা হয়। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা তাঁদের অনেক নেতা-কর্মীর বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর করেছেন। পুলিশ অনেক বাড়ি গিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের খুঁজে আটক করেছে। এসব কারণে নেতা-কর্মীরা এলাকা থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

ভোলা-২ আসনে বিএনপির প্রার্থী হাফিজ ইব্রাহিমের বাড়ির সামনে ফাঁকা। বোরহানউদ্দিনের উপজেলা সড়কে গত শনিবার।  প্রথম আলো
ভোলা-২ আসনে বিএনপির প্রার্থী হাফিজ ইব্রাহিমের বাড়ির সামনে ফাঁকা। বোরহানউদ্দিনের উপজেলা সড়কে গত শনিবার। প্রথম আলো

প্রার্থী হাফিজ ইব্রাহিম তাঁকে অবরুদ্ধ করে রাখার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। তিনি বলেন, পুলিশ ১৬ ডিসেম্বর তাঁকে উপজেলা সড়কের নিজ বাড়িতে পৌঁছে দেয়। এরপর থেকে তারা কোনো লোককে বাড়ি থেকে বের হতে দিচ্ছে না, প্রবেশও করতে দিচ্ছে না। ওই বাড়ি থেকে কেউ বের হলে বা প্রবেশ করলে আওয়ামী লীগের কর্মীরা পিটিয়ে তাকে পুলিশে ধরিয়ে দিচ্ছেন। আওয়ামী লীগের কর্মীরা তাঁর বাড়িতে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করছেন। তিনি বলেন, এ রকম ২৪টি আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা লিখিত আকারে নির্বাচন কমিশন ও রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবর পাঠিয়েছেন। প্রতিকার পাননি।

আওয়ামী লীগের প্রার্থী আলী আজম মুকুল বলেন, ২০০১ সালে হাফিজ ইব্রাহিম কারচুপি করে ক্ষমতায় এসেছেন। পরে তাঁর নির্দেশে বিএনপির কর্মীরা হত্যা, খুন ও সংখ্যালঘু পরিবারের ওপর নির্যাতন চালিয়েছেন। বোরহানউদ্দিন-দৌলতখানের নির্যাতিত মানুষ হাফিজ ইব্রাহিমের কাছে হিসাব চাইছে। তাই লজ্জায় তিনি নিজ থেকে ঘরে অবরুদ্ধ হয়ে আছেন।

এদিকে হাফিজ ইব্রাহিম অভিযোগ করেছেন, ভুয়া ম্যাজিস্ট্রেট ও ডিবি পুলিশ সেজে বিএনপির নেতা-কর্মী ও তাঁদের আত্মীয়দের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে।

হাফিজ বলেন, বড় মানিকা ইউনিয়নের মাহাবুবউদ্দিন হাওলাদারের বাড়িতে ভুয়া ম্যাজিস্ট্রেট ও ডিবি পুলিশ সেজে তল্লাশি, ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়েছে একদল দুর্বৃত্ত। বাড়িটি তাঁর নানাবাড়ি। গতকাল বেলা দুইটার দিকে একটি মাইক্রো যায়। ওই গাড়িতে ম্যাজিস্ট্রেট লেখা স্টিকার লাগানো ছিল। গাড়ির লোকজন ঘরের আসবাব ভাঙচুর ও লুটপাট করে। হাফিজ ঘটনাটি বোরহানউদ্দিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আবদুল কুদ্দুসকে জানান।

এদিকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাখাওয়াত হোসেন বলেন, তাঁর নেতৃত্বে ওই সময় কোনো তল্লাশি চালানো হয়নি।

জেলা প্রশাসক বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে দেখবেন।