দাপাচ্ছে আওয়ামী লীগ, ধুঁকছে বিএনপি

দল বেঁধে পুরুষের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের নারী সমর্থকেরাও বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চাইছেন।

নেত্রকোনার পাঁচটি আসনেই আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছেন। কিন্তু সে তুলনায় বিএনপির প্রার্থীদের প্রচারণা কম। মোটকথা, আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন।

নেত্রকোনা-১ (কলমাকান্দা-দুর্গাপুর) আসনের কলমাকান্দার পাগলাবাজারে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মানু মজুমদারের নির্বাচনী কার্যালয়ে মাইকে চলছে বর্তমান সরকারের উন্নয়নমূলক বিভিন্ন কার্যক্রমের জয়গান। পাশাপাশি মাইকে নৌকার প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে। এলাকা ছেয়ে গেছে নৌকার পোস্টারে। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মিছিল, সভা-সমাবেশ তো আছেই। দল বেঁধে পুরুষের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের নারী সমর্থকেরাও বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চাইছেন। এলাকায় চোখে পড়ে সিপিবির প্রার্থীর কাস্তে মার্কার পোস্টারও। কিন্তু ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী ব্যারিস্টার কায়সার কামালের পোস্টার-ব্যানার কিছু নেই। শুধু পাগলাবাজার নয়, সব জায়গায় ভোটের প্রচারে মূলত অনেক এগিয়ে আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগ বলছে, টানা ১০ বছরে জেলায় বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, ঘরে ঘরে বিদুৎ–সংযোগ, স্টেডিয়াম, বিভিন্ন স্কুল-কলেজ জাতীয়করণ, আন্তনগর ট্রেন, হাওরের ডুবু সড়ক, বিভিন্ন রাস্তাঘাট সংস্কার, প্রসারসহ যে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হয়েছে, তাতে এলাকার মানুষ নৌকা প্রতীক ছাড়া অন্য প্রতীকে ভোট দেওয়ার কথা ভাবতে পারেন না। তাই সাধারণ মানুষ স্বপ্রণোদিত হয়েই স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি নৌকার প্রচারণায় নেমেছেন।

আর উল্টো পরিস্থিতির কথা বলছেন বিএনপির প্রার্থী, নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা। তাঁদের দাবি, দীর্ঘসময় ক্ষমতায় থেকেও আওয়ামী লীগের সাংসদেরা এলাকায় আশানুরূপ উন্নয়ন করতে ব্যর্থ হলেও নিজেরা ও তাঁদের পরিবারের লোকজন বা সমর্থকেরা লুটপাট করে প্রচুর সম্পদের মালিক হয়েছেন। জনগণ তা বুঝে এবার ধানের শীষে ভোট দেবেন। ৩০ ডিসেম্বর নীরব ভোট–বিপ্লব ঘটাবেন।

নেত্রকোনা-২ (সদর-বারহাট্টা) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাবেক সাংসদ মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ আলী খান খসরু। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তাঁর সঙ্গে দলীয় ছাড়াও দলের মনোনয়নবঞ্চিত দুই ডজনের বেশি নেতা একত্র হয়ে কাজ করছেন। প্রচার-প্রচারণায় পুরো এলাকা উৎসবমুখর করে রাখছেন। এ আসনে বিএনপির প্রার্থী দলটির জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অর্থোপেডিকস চিকিৎসক আনোয়ারুল হকের অভিযোগ, তাঁকে নির্বাচনী মাঠে প্রচার চালাতে বেশ বেগ পোহাতে হচ্ছে। সরকারি দল ছাড়াও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাঁদের সঙ্গে বৈরী পরিবেশ সৃষ্টি করে রাখছেন। নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা গ্রেপ্তার আতঙ্কে রয়েছেন।

গত শনিবার দুপুরে নেত্রকোনা-৩ (কেন্দুয়া-আটপাড়া) আসনের কেন্দুয়া পৌর শহরের নেত্রকোনা বাসস্টেশনের সামনে কথা হয় ব্যবসায়ী মো. রফিক মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এলাকায় নৌকার প্রার্থী অসীম কুমার উকিলের মিছিল আর পোস্টার ছাড়া অন্য কোনো প্রার্থী দেখি না। বিএনপির কেউ ভোট চাইতে এখনো আমার বাড়িতে আসেননি।’ অবশ্য মিনিট দশেক পর ওই এলাকায় একটি চায়ের দোকানে বিএনপির প্রার্থী রফিকুল ইসলাম হিলালীর সমর্থক কালাম মিয়া বলেন, ‘আমরা প্রচারণা চালাব কীভাবে? সবাইকে তো কোনো না কোনো মামলার আসামি করে রাখা হয়েছে। গ্রেপ্তারের ভয়ে কেউ মাঠে নেই। তবে প্রচারণা চালাতে না পারলেও দলের সমর্থক যাঁরা, তাঁরা কেন্দ্রে গিয়ে ঠিকমতো ভোট দিতে পারলেই হবে।’

গত শুক্রবার নেত্রকোনা-৪ (মোহনগঞ্জ-মদন-খালিয়াজুড়ি) আসনের মদন পৌর শহরের জাহাঙ্গীরপুর এলাকায় একটি খাবারের দোকানে বসে কথা হয় ফরিদ মিয়া নামের এক রিকশাচালকের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এই আসনে তিন প্রার্থী। তাঁদের মধ্যে আওয়ামী লীগের বর্তমান সাংসদ রেবেকা মমিন, বিএনপির সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের স্ত্রী তাহমিনা জামান, আর আরেকজন সিপিবির জলি তালুকদার। তাঁদের মধ্যে প্রচারে আওয়ামী লীগই এগিয়ে।

নেত্রকোনা-৫ (পূর্বধলা) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী টানা দুইবারের সাংসদ ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল (বীর প্রতীক)। আর বিএনপির প্রার্থী জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের তালুকদার। গতকাল রোববার বিকেলে নেত্রকোনা-পূর্বধলা সড়কের ত্রিমোহনী বাজার এলাকায় রাস্তার পাশে আয়েশা আক্তার ও জরিনা বানু নামের মধ্যবয়সী দুই নারীর সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে কথা হয়। কথার ফাঁকে জরিনা বলেন, ‘আমরার বর্তমান এমপি বেলাল ভাই–ই বালা। এলাকায় অনেক উন্নয়ন হইছে। হুনি সহজেই তাঁর কাছে মানুষ যাইতে পারে।’ ধানের শীষের পক্ষে প্রার্থী বা তাঁর সমর্থক ভোট চান কি না জানতে চাইলে সঙ্গে থাকা আয়েশা আক্তার বলেন, ‘বাড়িতে মাইনসের মুহে (মুখে) হুনি বিএনপির সবাইরে পুলিশ মামলা দিয়া রাখছে, জেলে পাডাইছে। ভয়ে অহন কেউ প্রচারে বাইর হয় না, ভোটও চায় না।’

তবে পাঁচটি আসনেই বিএনপির প্রার্থীরা বিভিন্ন সময় সংবাদ সম্মেলন করে সাংবাদিকদের কাছে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগের কথা তুলে ধরছেন। তাঁরা বলছেন, বিএনপির প্রার্থী, নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের পুলিশ মিথ্যা মামলা গ্রেপ্তারসহ নানাভাবে হয়রানি করছে। পাশাপাশি সরকারি দলের লোকজনও প্রচারে বাধা দিচ্ছেন। তাই বিএনপির প্রচারে নামতে পারছে না।

জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শামছুর রহমান বলেন, শেখ হাসিনা সরকারের উন্নয়নের ওপর আস্থা রেখে ভোটাররাও বেইমানি করবেন না। তাঁরা আওয়ামী লীগের পক্ষে রায় দিতে প্রস্তুত।