'যোগ্য প্রতিপক্ষ' না থাকার আক্ষেপ আওয়ামীলীগের

আলতাফ হোসেন, শাহজাহান মিয়া, এস এম শাহজাদা, গোলাম মাওলা
আলতাফ হোসেন, শাহজাহান মিয়া, এস এম শাহজাদা, গোলাম মাওলা

একতরফা প্রচার চলছে পটুয়াখালীর দুটি আসনে। হামলা–মামলায় কোণঠাসা বিএনপির কোনো নেতা–কর্মী মাঠে নেই। তবে সরকারদলীয়রা বলছে, দলীয় কোন্দলের কারণেই বিএনপি মাঠে নামতে পারছে না।

বিএনপির অনুপস্থিতিতে একচেটিয়া প্রচার চালাচ্ছে সরকারি দল। অন্য প্রার্থীদের মধ্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রচার চোখে পড়ে। এই অবস্থায় সরকারি দলের দুই প্রার্থীই বলছেন, শক্ত বা যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বীর অভাব দেখছেন তাঁরা। সে কারণে নেতা–কর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা কিছুটা কম।

পটুয়াখালী–১ আসনে প্রধান দুই দলের প্রার্থী মন্ত্রিসভার সাবেক দুই সদস্য। বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরী। আর মহাজোট ও আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শাহজাহান মিয়া। অন্যদিকে পটুয়াখালী–৩ আসনে প্রধান দুই দলের প্রার্থীর মধ্যে গোলাম মাওলা রনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বিএনপিতে যোগ দেন। বাগিয়ে নেন বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের মনোনয়ন। অন্যদিকে এই আসনে আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইনের পরিবর্তে মনোনয়ন পেয়ে যান প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদার ভাগনে শাহজাদা। ভোটের মাঠে নেমেই কার্যত সবকিছু্ তাঁর নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।

মাঠ কাঁপাচ্ছে আ.লীগ, মাঠের বাইরে বিএনপি

পটুয়াখালী সদর, মির্জাগঞ্জ আর দুমকি উপজেলা নিয়ে পটুয়াখালী–১ আসন। এই আসনের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ধানের শীষ প্রতীকের পোস্টার তেমন চোখে পড়েনি। এ বিষয়ে আলতাফ হোসেন চৌধুরী প্রচারণা শুরু হওয়ার পর থেকেই দলীয় নেতা–কর্মীদের ওপর হামলা–মামলার অভিযোগ করলেন। তিনি বলেন, ‘শুরুতে আমরা পোস্টার লাগিয়েছিলাম। সেগুলো ক্ষমতাসীনেরা হয় পুড়িয়েছে, না হয় ছিঁড়ে ফেলেছে। এমন কোনো রাত নেই যেদিন দলের নেতা–কর্মীদের বাড়ি বাড়ি দিয়ে হুমকি দেওয়া হচ্ছে না। পুরুষেরা সবাই বাড়িছাড়া। সক্রিয় যাঁরা ছিলেন, তাঁরা হয় আদালতের বারান্দায়, না হয় আত্মগোপনে।

আলতাফ হোসেন চৌধুরীর এই অভিযোগ অস্বীকার করলেন প্রতিদ্বন্দ্বী শাহজাহান মিয়া। তাঁর মতে, বিএনপির দলীয় কোন্দলের কারণে কেউ আলতাফ হোসেন চৌধুরীর হয়ে মাঠে নামছে না। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কেউ বিএনপিকে বাধা দিচ্ছে না। তিনি তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীকে তাঁর সঙ্গেই ভোট চাইতে মাঠে নামার আহ্বান জানান।

এ বিষয়ে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক মো. মতিউল ইসলাম চৌধুরীর দাবি, জেলায় নির্বাচনী পরিবেশ স্বাভাবিক আছে। আইনশৃঙ্খলার অবনতি হওয়ার মতো কিছুই হয়নি। 

গৃহবন্দী রাখার দাবি রনির, আ.লীগ বলছে অভিনয়

পটুয়াখালী–৩ আসনে সোমবার দশমিনা ও গলাচিপা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ব্যাপক প্রচারে আছেন সরকারি দলের প্রার্থী এস এম শাহজাদা। দু–একটি জায়গায় ধানের শীষের পোস্টার দেখা গেছে।

সরকারি দলের নেতা–কর্মীরা বলছেন, গোলাম মাওলা রনি মাঠে না নেমে শুধু শুধু অভিযোগ তুলছেন। হঠাৎ করে মনোনয়ন পাওয়ায় বিএনপির নিবেদিত নেতা–কর্মীরা তাঁকে মেনে নিতে পারছেন না। তাই ‘একলা’ রনি মাঠে নামতে পারছেন না। স্থানীয় রাজনৈতিক কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০০৮ সালে সরকারি দলের সাংসদ হওয়ার পর নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ড করে সমালোচিত হয়েছিলেন রনি। ওই সময়ে পক্ষ হয়ে যাঁরা মাঠ দখল করে রাখা এবং বিরোধীদের ওপর চড়াও হয়েছিলেন, তাঁরাই এবার তাঁকে মাঠ থেকে দূরে রাখতে ভূমিকা রাখছেন।

 গোলাম মাওলা রনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার বাড়ির সামনে প্রচুর লোক পাহারা দিচ্ছে। তারা চায় আমি এলাকা ছেড়ে ঢাকা চলে যাই। কিন্তু আমি যাব না। পুলিশ যদি আমাকে গ্রেপ্তার করতে চায়, বাড়ি থেকে করুক। আমি এলাকা ছাড়ব না।’

রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মো. মতিউল ইসলাম চৌধুরী বললেন, ‘অভিযোগ পাওয়ার পর ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ ও র‍্যাব পাঠিয়ে আমি তদন্ত করিয়ে দেখেছি। কিন্তু এর সত্যতা পাওয়া যায়নি। তিনি বাড়িতে বসে মাইকে নানা রকম বক্তব্য দেওয়ায় তাঁর এলাকার মানুষই বিরক্ত হয়ে তাঁকে বাধা দিয়েছে।’

এ প্রসঙ্গে সরকারি দলের প্রার্থী এস এম শাহজাদা বলেন, মাঠে না নেমে তিনি ঘরে বসে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। আর তাঁর সঙ্গে কেউই নেই। তাই মাঠে নামতে পারছেন না। আমিও নির্বাচনে এসে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী না পেয়ে হতাশ। এভাবে জিততে কার ভালো লাগে? 

[প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন শংকর দাস, পটুয়াখালী]