সম্প্রীতি দূরে ঠেলে বাড়ছে সংঘাত

শিবগঞ্জের বাইপাস সড়কের দুপাশে অসংখ্য আমগাছ। গাছগুলোর ফাঁকে ফাঁকে সারি সারি বিদ্যুতের খুঁটি। এসব খুঁটিতে পাশাপাশি বাঁধা আছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী সামিল উদ্দিন আহমেদ ও বিএনপির শাহজাহান মিঞার পোস্টার। বাইপাস সড়কের ইসরাইল মোড়ে দুই প্রার্থীর দুটি নির্বাচনী প্রচার কেন্দ্রও রয়েছে।

ইসরাইল মোড়ের একটি প্রচার কেন্দ্র থেকে নৌকা প্রতীকে ভোট দেওয়ার জন্য গান বাজানো হলে একটু পরই পাশের প্রচার কেন্দ্র থেকে ধানের শীষের পক্ষে ভোট চেয়ে আরেকটি গান বাজানো হয়। ভোটের মাঠের এই চিত্র সম্প্রীতির বার্তা দিলেও ২২ ডিসেম্বর রাত থেকে পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। নির্বাচনের সময় যতই এগিয়ে আসছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সীমান্তঘেঁষা এই উপজেলায় উত্তেজনা ততই বাড়ছে।

২২ ডিসেম্বর রাতে উপজেলার বিনোদপুর বাজারে বিএনপি প্রার্থীর একটি প্রচার কেন্দ্র ভাঙচুর করা হয়। হামলার সময় দলের প্রার্থীর পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হয়। ভাঙা হয় প্লাস্টিকের চেয়ার।

এর আগে সেদিন দুপুরে একই এলাকায় আওয়ামী লীগের একটি মিছিলে হামলার ঘটনা ঘটে। আওয়ামী লীগের প্রার্থী সামিল উদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, রসুনচকে তাঁর প্রচার কেন্দ্রের সামনে বিএনপির কর্মীরা ছাত্রলীগের নেতা মাসুদের ওপর হামলা করেন। তাঁর ডান হাতের একটি আঙুল কেটে ফেলেছেন বিএনপির লোকজন। এ ছাড়া ২৩ ডিসেম্বর ঘোড়াপাকিয়া এলাকায় একটি প্রচার কেন্দ্রে বোমা হামলা করেছেন তাঁরা। তবে পাল্টা অভিযোগ করেন বিএনপির প্রার্থী শাহজাহান মিঞা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ২৩ ডিসেম্বর রাতে তাঁর দুটি প্রচার কেন্দ্রে হামলা চালান আওয়ামী লীগ প্রার্থীর লোকজন। প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। উল্টো তাঁর দলের কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। মামলা দেওয়া হচ্ছে। ভোটের দিন সহিংসতা হতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন তিনি।

বিনোদপুর বাজার, রসুনচক ও ঘোড়াপাকিয়া এলাকায় হামলার পাল্টাপাল্টি অভিযোগ সম্পর্কে জানতে গতকাল এই প্রতিবেদক তিনটি এলাকাতেই যান। তবে স্থানীয় বাসিন্দারা হামলার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি।

সামিল উদ্দিনের বাবা মইন উদ্দিন আহমেদ ১৯৭০ ও ১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগের সাংসদ ছিলেন। এরপর জাতীয় পার্টিতে যোগ দিয়ে ১৯৮৫ সালে শিবগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান হন তিনি। ১৯৮৬ সালে আবার সাংসদ নির্বাচিত হন। পরে আবার আওয়ামী লীগে ফিরে আসেন।

অন্যদিকে বিএনপির শাহজাহান মিঞা ১৯৭৯, ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ সালে সাংসদ নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এনামুল হকের কাছে হেরে যান তিনি।

শাহজাহান মিঞা বলেন, এবারের মতো আগে কোনো নির্বাচনে এত বাধার সম্মুখীন হননি তিনি। প্রশাসন তাঁর কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।