বড় দুই দলের প্রার্থীদের প্রচারে নারীরাও সরব

একাদশ সংসদ নির্বাচন
একাদশ সংসদ নির্বাচন

নেত্রকোনায় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বেশ জমে উঠেছে। বাসটার্মিনাল, রেলস্টেশন, হোটেল থেকে শুরু করে রাস্তার পাশের চায়ের দোকান, গ্রামগঞ্জ সর্বত্রই এখন নির্বাচনী আলোচনা। গ্রামীণ বাজার ছাড়াও শহরের প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে অলিগলিও ছেয়ে গেছে প্রার্থীদের পোস্টার-ফেস্টুনে। মিছিল-গণসংযোগ, পথসভা আর মাইকের শব্দে পুরো জেলাই মেতে উঠেছে নির্বাচনী উৎসবে।

জেলার পাঁচটি আসনে বড় দুই দল আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ অন্যান্য দলের ২৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে বড় দুই দলের প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণায় এবার নারীরাও বেশ সরব, যা আগের কোনো নির্বাচনে দেখা যায়নি। প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে প্রার্থীরা যেমন তাঁদের দলীয় ও সমর্থকদের সঙ্গে নিয়ে রাতদিন বিরামহীনভাবে ছুটছেন, তেমনি বসে নেই তাঁদের স্ত্রীরাও। দলীয় নারী নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে কোমর বেঁধেই স্বামীর পক্ষে প্রচারণার মাঠে নেমেছেন তাঁরা। এ ছাড়া পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে নারীরা দল বেঁধে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চাইছেন।

নেত্রকোনা-১ (কলমাকান্দা-দুর্গাপুর) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মানু মজুমদার। তাঁর পক্ষে স্ত্রী ক্যামেলিয়া বিশ্বাস মজুমদার দলীয় ও সমর্থিত নারীদের নিয়ে জোরেশোরেই প্রচারণায় নেমেছেন। গত সোমবার তিনি কলমাকান্দার লেঙ্গুরা, খারনৈ ইউনিয়নের চারটি বাজারসহ অন্তত আটটি গ্রামে নৌকার প্রচারণা চালান। এই আসনে বিএনপির প্রার্থী আইনজীবী কায়সার কামালের স্ত্রী অবশ্য প্রচারের মাঠে না থাকলেও তাঁর দলের নারীনেত্রী ও কলমাকান্দা উপজেলা পরিষদের মহিলা চেয়ারম্যান কলি আক্তারের নেতৃত্বে নারীরা এলাকায় এলাকায় গিয়ে ধানের শীষে ভোট চাইছেন।

নেত্রকোনা-২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ আলী খান। তাঁর স্ত্রী কামরুন্নেছা আশরাফ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী। তিনি নারীকর্মীদের নিয়ে ঘরোয়া বৈঠক, উঠান বৈঠক, পথসভা ও জনসভা করছেন। বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কথা বলে মানুষের হাতে নৌকার প্রচারপত্র তুলে দিচ্ছেন। নেত্রকোনাকে সন্ত্রাস-মাদকমুক্ত ও আধুনিক নগরী গড়ার পরিকল্পনার কথা জানাচ্ছেন। গত সোমবার তাঁর নেতৃত্বে পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকা ছাড়াও আমতলা ও ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে জনসংযোগ করেন। এ সময় জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবা রহমান খান, সদর উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান তুহিন আক্তার, আওয়ামী লীগের নেত্রী অনিতা নন্দী, মুরশেদা শিরিন চিশতি, সৈয়দা বিউটিসহ যুব মহিলা লীগ, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে, ওই আসনের বিএনপির প্রার্থী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক চিকিৎসক আনোয়ারুল হকের স্ত্রী চিকিৎসক লুৎফা হক অব্যাহতভাবে স্বামীর জন্য প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। গত সোমবার তিনি দলীয় নারীদের নিয়ে বারহাট্টা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় তাঁর স্বামীর পক্ষে গণসংযোগ করেন।

নেত্রকোনা-৩ (কেন্দুয়া-আটপাড়া) আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল। তাঁর স্ত্রী যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল দলীয় ও সমর্থিত নারীদের নিয়ে গত সোমবার আটপাড়ার বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে নৌকায় ভোট চান। এ ছাড়া এই আসনে বিএনপির প্রার্থী রফিকুল ইসলাম হিলালীর পক্ষে দলীয় নারীরা বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে ধানের শীষে ভোট চাচ্ছেন।

নেত্রকোনা-৪ (মোহনগঞ্জ-মদন-খালিয়াজুড়ি) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সাংসদ রেবেকা মমিন, বিএনপির প্রার্থী তাহমিনা জামান ও সিপিবির প্রার্থী জলি তালুকদারের দলীয় নারী নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছেন। প্রতিদিন এসব প্রার্থীর নারী সমর্থকেরা দল বেঁধে তিনটি উপজেলার প্রতিটি গ্রামে ঘুরে নৌকা, ধানের শীষ ও কাস্তে মার্কায় ভোট চাইছেন।

নেত্রকোনা-৫ (পূর্বধলা) আসনে বর্তমান সাংসদ ও পূর্বধলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল বীর প্রতীকের পক্ষে তাঁর স্ত্রী রওশন হোসেন বেলাল গত সোমবার সকাল থেকে উপজেলার নারানদিয়া, হোগলা ও গোহালাকান্দা ইউনিয়নে প্রচারণা চালিয়ে নৌকায় ভোট চান। এ সময় তাঁর সঙ্গে উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান হোসনে আরা বেগম, নারীনেত্রী চিত্রা খানম, মাজেদা বেগম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। ওই আসনে বিএনপির প্রার্থী জেলা বিএনপির সাবেক সম্পাদক আবু তাহের তালুকদারের পক্ষে দলীয় নারীরা রাতদিন ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছেন।

নির্বাচনী মাঠে নারীদের সরব উপস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) জেলা কমিটির সভাপতি শ্যামলেন্দু পাল প্রথম আলোকে বলেন, নারীরা এখন আগের চেয়ে অনেক রাজনীতিসচেতন। তাঁরা দেশের নেতৃত্ব থেকে শুরু করে বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে এগিয়ে আছেন। নেত্রকোনায় এখন দিনরাত নিরাপদে নারীরা নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছেন, যা আগে কখনো দেখা যায়নি। এটিকে দেশের অগ্রগতি ও গণতন্ত্রের একটি ধাপ বলা যায়।