ভোট 'মনের মণিকোঠায়'

বারবার সরকার বদল হলে দীর্ঘমেয়াদি বৃহৎ উন্নয়ন ব্যাহত হয়। আবার একই দল দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকলে স্বেচ্ছাচারী হয়ে ওঠার প্রবণতা থাকে। এ দুই ভাবনা সামনে রেখে যোগ্য প্রার্থীকেই বেছে নেবেন মণিপুরি সম্প্রদায়ের ভোটাররা। তবে আসলেই কাকে ভোট দেবেন, বিষয়টি ঘুণাক্ষরেও প্রকাশ করেন না তাঁরা। যেন মনের মণিকোঠায় থাকে তাঁদের ভোট। 

এমন মতামত পাওয়া গেছে মণিপুরি ভোটারদের সঙ্গে আলাপচারিতায়। তবে এসব কথা হচ্ছে মণিপুরিদের মনের কথা। এর বেশি নিজেদের মধ্যেও কথা বলা থেকে সংযত থাকছেন তাঁরা।

ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী মণিপুরি সম্প্রদায়। বাংলাদেশের মধ্যে কেবল সিলেট অঞ্চলেই এই জনগোষ্ঠীর বসবাস। সিলেট শহরসহ বিভাগের মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলায় প্রায় দেড় লাখ মণিপুরি বাসিন্দা রয়েছেন। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে এই জনগোষ্ঠীর বৃহৎ অংশের বসবাস।

কাকে ভোট দেবেন, এ বিষয়ে মণিপুরি সম্প্রদায়ের প্রবীণ কয়েকজনকে প্রশ্ন করা হয়। তাঁদের কথা, দেশের সার্বিক উন্নয়নের পাশাপাশি ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে যে দল ভূমিকা রাখবে, সম্প্রদায়টির বৃহৎ অংশ সে দলের প্রার্থীকেই বেছে নেবে। মণিপুরি জনগোষ্ঠী নিজেদের নিরাপত্তা চায়। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখে সম–অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে সরকারের ভূমিকা প্রয়োজন বলে মনে করে তারা। এই জনগোষ্ঠী এখনো অনেকটা পিছিয়ে রয়েছে। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আর্থিক সচ্ছলতা ফেরাতে সরকারের উদ্যোগ নেবে, এমন প্রার্থীকে সমর্থন জানাবে তারা। দেশের সব নাগরিকের সম–অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় উদ্যোক্তা হিসেবে যে প্রার্থী দিকনির্দেশনা দেবন, তিনিই ভোট পাওয়ার যোগ্য বলে মনে করে মণিপুরিরা।

মণিপুরি সমাজকল্যাণ সমিতি সিলেট জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সংগ্রাম সিংহ বলেন, মণিপুরি জনগোষ্ঠীর সর্বস্তরের ভোটাররা অনেক সচেতন। এটা স্থানীয় নয়, জাতীয় নির্বাচন তাঁরা ভালো করেই জানেন।  তিনি আরও বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন হওয়া এ দেশে যথাযথভাবে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ, ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর জন্য সংসদে সংরক্ষিত আসন সংরক্ষণসহ সুসম উন্নয়নের লক্ষ্যে আমরা ১৪ প্রস্তাবনা উপস্থাপন করে আসছি। এসব প্রস্তাবনার ব্যাপারে যারা আন্তরিক হবে, তাদের প্রতি এই সম্প্রদায়ের ভোটারদের সমর্থন থাকবে, এটাই স্বাভাবিক।’

কথা হয় মণিপুরি সম্প্রদায়ের তরুণদের সঙ্গেও। ১০ জন তরুণ ভোটার বলেছেন, কারও প্ররোচনায় কিংবা চাপে এখন কেউই ভোট দেন না। দেশ সমাজ ও সম্প্রদায়ের উন্নতিতে যে প্রার্থী যোগ্য এবং অবদান রাখবেন, সেই প্রার্থীই মনোনীত হবেন।