ভোটের লড়াইয়ের আলোচনায় রোহিঙ্গারা

রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির। ফাইল ছবি
রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির। ফাইল ছবি
>
  • শিবির থেকে রোহিঙ্গারা বের হওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধ আছে
  • তবু শহরের নির্বাচনের রাজনীতিতে তারা এখন আলোচিত

বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষা পর্যটন শহর কক্সবাজার প্রায় নিশ্চুপ হয়ে গেছে। রোহিঙ্গা সমস্যা মোকাবিলায় শহরে যেসব উন্নয়ন সংস্থার দেশি-বিদেশি প্রায় ২০ হাজার কর্মী ছিলেন, তাঁদের বেশির ভাগই নেই। শহর ছেড়ে আপাতত বিদায় নিয়েছেন। ১৫ দিনের জন্য টেকনাফ ও উখিয়ার রোহিঙ্গা শিবিরে যাতায়াত সীমিত করে দেওয়ায় এসব কর্মীর বেশির ভাগই প্রায় ছুটিতেই আছেন বলা যায়। তবে শিবির থেকে রোহিঙ্গারা বের হওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধ থাকলেও শহরের নির্বাচনের রাজনীতিতে তারা এখন আলোচিত।

কক্সবাজার সদর ও রামু উপজেলা নিয়ে কক্সবাজার-৩ আসন। এই সংসদীয় আসনের পাশের দুই উপজেলা টেকনাফ ও উখিয়া। কক্সবাজার–৩ আসনে নৌকার প্রার্থী সাইমুম সরওয়ার। আর ধানের শীষের প্রার্থী লুৎফর রহমান। দুই প্রার্থীই একে অপরের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের নির্বাচনে ব্যবহার করার পরিকল্পনার অভিযোগ তুলেছেন। রোহিঙ্গাদের দিয়ে ভোটকেন্দ্র দখল, প্রতিপক্ষের ওপর হামলা ও নানা ধরনের নাশকতা চালানোর পরিকল্পনার অভিযোগ এখন কক্সবাজারের নির্বাচনের রাজনীতিতে আলোচিত হচ্ছে।

এ ব্যাপারে বিএনপির প্রার্থী লুৎফর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘কক্সবাজারের বেশির ভাগ মানুষ ধানের শীষের পক্ষে। নৌকার প্রার্থীর সঙ্গে কেউ নেই। তাই আমার বিজয় নিশ্চিত জেনে তিনি নির্বাচনের দিন রোহিঙ্গাদের দিয়ে কেন্দ্র দখলের পরিকল্পনা করছেন।’

এই অভিযোগের বিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাইমুম সরওয়ার বলেন, ‘একই অভিযোগ আমিও করতে পারি। আমার প্রতিপক্ষ রোহিঙ্গাদের নির্বাচনের কাজে ব্যবহার করতে পারে। তবে প্রশাসন রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে যাতায়াত নিষিদ্ধ করে দেওয়ায় সেই সুযোগ নেই।’

কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্বাচন উপলক্ষে রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে নেওয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তাব্যবস্থা। কক্সবাজার সদর থেকে টেকনাফ-উখিয়ায় যাওয়ার সড়কে দুই-এক কিলোমিটার পর পর বসানো হয়েছে নিরাপত্তাচৌকি। পুলিশ, র্যাব ও সামরিক বাহিনীর সদস্যরা সেখানে তল্লাশি করছেন। স্থানীয় এবং বিশেষ জরুরি চিকিৎসাসেবা দেওয়া ছাড়া কাউকে ওই সড়ক দিয়ে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। জরুরি প্রয়োজনে কাউকে যেতে দেওয়া হলেও দেখাতে হচ্ছে জাতীয় পরিচয়পত্র।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক কামাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘টেকনাফ ও উখিয়ার শিবিরগুলোতে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা থাকে। এই বিপুলসংখ্যক মানুষকে যেকোনো গোষ্ঠী নানা ধরনের উসকানি দিতে পারে। তবে এ ধরনের কোনো ঘটনা যাতে না ঘটে, সে জন্য আমরা যথেষ্ট সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিয়েছি।’

এত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া সত্ত্বেও কক্সবাজারে রাজনৈতিক দলগুলো থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে, রোহিঙ্গারা নানা পথে কক্সবাজার শহর ও এর আশপাশের এলাকায় জড়ো হচ্ছে। শহরের পাশের পাহাড়ি এলাকাগুলোতে তারা অবস্থান করছে। শহরের রিকশা, টমটম ও সিএনজি চালনা, হোটেলের কর্মচারীসহ নানা পেশায় তারা যুক্ত হয়ে পড়ছে।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) মোহাম্মদ আবুল কালাম প্রথম আলোকে বলেন, রোহিঙ্গাদের আশ্রয়শিবিরের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বিশেষ করে নির্বাচনের দিন ও তার আগের এবং পরের দিন তাদের শিবিরের বাইরে কোনোভাবেই বের হতে দেওয়া হবে না। নির্বাচনে তাদের যাতে কেউ ব্যবহার করতে না পারে, সে জন্যই এই ব্যবস্থা।

এ আসনের হালনাগাদ ভোটারসংখ্যা ৪ লাখ ১৪ হাজার ৯৩০ জন। এর মধ্যে কক্সবাজার সদরে ২ লাখ ৫৬ হাজার ৬৪৪ এবং রামুতে ১ লাখ ৫৮ হাজার ২৮৬ জন। আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বাড়ি রামুতে। বিএনপির প্রার্থীর বাড়ি কক্সবাজার সদরে। এ আসনে আরও তিনজন প্রার্থী থাকলেও মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে নৌকা আর ধানের শীষের মধ্যে।