ভোট গ্রহণ শেষ, চলছে গণনা

ভোট গ্রহণ শেষে শুরু হয়েছে গণনা। বিকেল চারটার পর বাক্স থেকে ব্যালট পেপারগুলো বের করা হয়। জুবিলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গাইবান্ধা, ৩০ ডিসেম্বর। ছবি: ফোকাস বাংলা
ভোট গ্রহণ শেষে শুরু হয়েছে গণনা। বিকেল চারটার পর বাক্স থেকে ব্যালট পেপারগুলো বের করা হয়। জুবিলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গাইবান্ধা, ৩০ ডিসেম্বর। ছবি: ফোকাস বাংলা

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে। অনেক স্থানে সহিংসতা, নাশকতা, কারচুপি, ভোট দিতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তবে অনেক আসনে শান্তিপূর্ণ ভোট গ্রহণের খবরও পাওয়া গেছে।

ভোটে সরকারবিরোধী প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির প্রায় অর্ধশত প্রার্থী ভোট বর্জন করেছেন। দেশের বেশির ভাগ আসনেই ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের কর্মীদের উপস্থিতি দেখা গেছে। নির্বাচনে সহিংসতায় নিহত ব্যক্তিদের বেশির ভাগই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী। এ ছাড়া বিএনপির কর্মী ও সাধারণ ভোটারও নিহত হয়েছেন।

ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার পর সকালে অনেকটা উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটাররা ভোট দিয়েছেন। তবে বেশির ভাগ কেন্দ্রে বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলের এজেন্ট না থাকার খবর সকাল থেকেই পাওয়া গেছে। অবশ্য সকালে যাঁরা ভোট দিতে গেছেন, তাঁরা ভোট দিতে পেরেছেন। কিন্তু বেশির ভাগ আসনে বেলা ১১টার পর থেকে পরিস্থিতির পরিবর্তন হতে থাকে। কেন্দ্রগুলোতে ক্ষমতাসীনদের আধিপত্য বাড়তে থাকে। সাধারণ ভোটারের উপস্থিতি কেন্দ্রে কমতে থাকে।

নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে আজ রোববার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯৯টি আসনে একযোগে ভোট গ্রহণ করা হয়। প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে গাইবান্ধা-৩ আসনে ভোট হয়নি।

এবারের নির্বাচনের দিন সারা দেশে মোট ১২ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের স্থানীয় পর্যায়ের নেতা ৬ জন। এ ছাড়া একজন বিএনপির ও একজন ইসলামী ছাত্র সেনার নেতা। বিভিন্ন ঘটনায় আহত হয়েছেন শতাধিক। যশোরের একজন প্রার্থীর ওপরও হামলার ঘটনা ঘটেছে। ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ের চেষ্টা হয়েছে। ভোটাররাও ভোট দেওয়া নিয়ে নানা অভিযোগ করেছেন; বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দলের কর্মীদের সামনে সিল দিতে বাধ্য করা, ব্যালট নিয়ে কর্মীদের সিল দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয় গত ৮ নভেম্বর। এরপর একবার পুনঃ তফসিল করা হয়। এর ফলে ভোটের তারিখ ২৩ ডিসেম্বর থেকে ৩০ ডিসেম্বর করা হয়।

৩৯টি রাজনৈতিক দল অংশ নিলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা মূলত আওয়ামী লীগ (নৌকা) ও বিএনপির (ধানের শীষ) মধ্যে। ভোটে আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব দিচ্ছে মহাজোটের। ১৪–দলীয় জোটের নেতৃত্বেও আছে দলটি। আর বিএনপি আছে ২০ দলের নেতৃত্বে ও ড. কামাল হোসেনের জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রধান শরিক হিসেবে। আর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই জানা যাবে কারা পরবর্তী ৫ বছরের জন্য দেশ পরিচালনার দায়িত্বে আসছে, রাষ্ট্রক্ষমতায় আসছে।

এবারই প্রথমবারের মতো ছয়টি আসনে ইভিএমে ভোট হচ্ছে। ইভিএমে ভোট হবে ঢাকা-৬, ঢাকা-১৩, চট্টগ্রাম-৯, রংপুর-৩, খুলনা-২ ও সাতক্ষীরা-২ আসনে। এসব আসনে ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার দুই ঘণ্টার মধ্যে ফলাফল পাওয়ার কথা জানিয়েছেন নির্বাচন কর্মকর্তারা। তবে ব্যালটে ভোট হওয়া আসনগুলোর ফল পেতে কিছুটা সময় লাগবে। অবশ্য নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা আশা করছেন, রাত ১০টা থেকে ১২টার মধ্যে পরবর্তী সরকার কারা গঠন করছে, সে সম্পর্কে জানতে পারবে সাধারণ মানুষ।

আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানীর ঢাকা সিটি কলেজ কেন্দ্রে ভোট দিয়ে বলেছেন, নৌকার জয় হবেই।

আর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন ভিকারুননিসা নূন কলেজ কেন্দ্রে ভোট দিয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তাঁদেরই জয় হবে।

আর প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা বলেছেন, কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া এবার ভোট ভালোই হয়েছে।


ভোটের পরিবেশ সুষ্ঠু রাখতে ৬ লাখ ৮ হাজার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এর মধ্যে সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ, র‌্যাব, আনসার, কোস্টগার্ড, বিজিবির সদস্যরা রয়েছেন।

একনজরে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন:

ভোটকেন্দ্র: ৪০ হাজার ১৮৩টি
ভোটকক্ষ: ২ লাখ ৭ হাজার ৩১২টি
মোট ভোটার: ১০ কোটি ৪২ লাখ ৩৮ হাজার ৬৭৭ জন
পুরুষ ভোটার: ৫ কোটি ২৫ লাখ ৭২ হাজার ৩৬৫ জন
মহিলা ভোটার: ৫ কোটি ১৬ লাখ ৬৬ হাজার ৩১২ জন
অংশগ্রহণকারী দলের সংখ্যা: ৩৯টি
মোট প্রার্থী: ১ হাজার ৮৬১ জন
রাজনৈতিক দলের প্রার্থী: ১ হাজার ৭৩৩ জন
স্বতন্ত্র প্রার্থী: ১২৮ জন

আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ৬ লাখ ৮ হাজার
ভোটকেন্দ্র ও নির্বাচনী এলাকায় সেনাবাহিনী ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স ভোটকেন্দ্রে নিয়োজিত ফোর্স সংখ্যা প্রায় ৬ লাখ ৮ হাজার। এর মধ্যে পুলিশ প্রায় ১ লাখ ২১ হাজার, আনসার প্রায় ৪ লাখ ৪৬ হাজার, গ্রাম পুলিশ প্রায় ৪১ হাজার। সেনাবাহিনী (প্রতি প্লাটুনে ৩০ জন) ৩৮৯টি উপজেলায় ৪১৪ প্লাটুন, নৌবাহিনী ১৮টি উপজেলায় ৪৮ প্লাটুন, কোস্টগার্ড (প্রতি প্লাটুনে ৩০ জন) ১২টি উপজেলায় ৪২ প্লাটুন, বিজিবি (প্রতি প্লাটুনে ৩০ জন) ৯৮৩ প্লাটুন, র‌্যাব (প্রতি প্লাটুনে ৩০ জন) প্রায় ৬০০ প্লাটুন ভোটের মাঠে নিয়োজিত আছে।

এ ছাড়া মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্সের সংখ্যা (র‌্যাবসহ) প্রায় ২ হাজার প্লাটুন (প্রায় ৬৫ হাজার)। এ ছাড়া সারা দেশে জেলা ও মেট্রোপলিটনে পুলিশের টহল দল নিয়োজিত রয়েছে।

নির্বাচনে নিয়োজিত ১ হাজার ৩২৮ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মধ্যে আচরণবিধি প্রতিপালনের জন্য ৬৫২ জন, অবশিষ্ট ৬৭৬ জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মোবাইল বা স্ট্রাইকিং ফোর্সের সঙ্গে নিয়োজিত রয়েছেন। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৬৪০ জন, ১২২টি ইলেকট্রোরাল ইনকোয়ারি কমিটিতে ২৪৪ জন।

ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা
এবার ভোটে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে ৬৬ জন দায়িত্ব পালন করছেন। এর মধ্যে দুজন বিভাগীয় কমিশনার এবং ৬৪ জন জেলা প্রশাসক।
নির্বাচনে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ৪০ হাজার ১৮৩ জন, সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ২ লাখ ৭ হাজার ৩১২ জন এবং পোলিং অফিসার ৪ লাখ ১৪ হাজার ৬২৪ জন।

পর্যবেক্ষক
নির্বাচনে দেশি ৮১টি পর্যবেক্ষক সংস্থার ২৫ হাজার ৯০০ জন এবং ওআইসি ও কমনওয়েলথ থেকে আমন্ত্রিত ও অন্যান্য বিদেশি পর্যবেক্ষক ৩৮ জন, কূটনৈতিক বা বিদেশি মিশনের কর্মকর্তা ৬৪ জন এবং বাংলাদেশে দূতাবাস বা হাইকমিশন বা বিদেশি সংস্থায় কর্মরত বাংলাদেশি ৬১ জন নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করছেন।