লাখ ভোটের ব্যবধানে জয়

আওয়ামী লীগের দাপুটে প্রচারণা। অন্যদিকে মামলা ও ধরপাকড়ে কোণঠাসা বিএনপি। ভোটের দিনও মাঠ দখলে ছিল আওয়ামী লীগের। ফলাফল বরিশাল জেলার ছয়টি আসনের পাঁচটিতেই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের একক প্রার্থীরা বড় ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন।

আরেকটি আসনে মহাজোটের নৌকার প্রার্থীকে হারিয়ে আওয়ামী লীগেরই আরেক শরিক জাতীয় পার্টির প্রার্থী লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে জয়ী হয়েছেন। ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, এই আসনে ভোট পড়ার হারও অনেক কম। আবার যে পাঁচটি আসনে মহাজোটের একক প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন, তাঁরা লাখ ভোটের ব্যবধানে জয় পেয়েছেন।

বরিশালের যে আসনটিতে বিএনপির সঙ্গে লাঙ্গলের প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়, সেটি বাবুগঞ্জ-মুলাদী উপজেলা নিয়ে গঠিত বরিশাল-৩ আসন। এ মহাজোটের প্রার্থী ছিলেন বর্তমান সাংসদ ওয়ার্কার্স পার্টির শেখ টিপু সুলতান। তাঁর প্রতীক ছিল নৌকা। জাতীয় পার্টি আসনটি উন্মুক্ত করে দিলে প্রার্থী হন সাবেক সাংসদ গোলাম কিবরিয়া টিপু। আর বিএনপির প্রার্থী ছিলেন জয়নুল আবেদীন। আসনটিতে ট্রাক প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন যুবমৈত্রীর সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা আতিকুর রহমান।

ফলাফলে দেখা যায়, গোলাম কিবরিয়া টিপু ৫৪ হাজার ৭৭৮ ভোট পেয়ে জয়ী হন। তাঁর নিকটতম বিএনপির জয়নুল আবেদীন পান ৪৭ হাজার ২৮৭ ভোট। আর নৌকার শেখ টিপু সুলতান পান ১৯ হাজার ২১৯ ভোট ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আতিকুর রহমান ১২ হাজার ৯৫৫ ভোট। এই আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৫৩ হাজার ৬৪৯। এখানে ভোট পড়ে ১ লাখ ৫০ হাজার ৭৯০। ৬০ শতাংশ ভোট পড়েছে।

বিপরীত চিত্র ছিল বাকি পাঁচটি আসনে। এই আসনগুলোতে ভোট পড়ার হার বেশি। এই পাঁচটি আসনের মধ্যে সর্বোচ্চ ভোট পড়েছে বরিশাল-৫ (সদর) আসনে। প্রায় ৯১ শতাংশ। এখানে আওয়ামী লীগের জাহিদ ফারুক শামীম প্রায় ১ লাখ ৮৩ হাজার ভোটে বিএনপির মজিবর রহমান সরোয়ারকে হারিয়েছেন।

বরিশাল-১ আসনে ভোট পড়েছে প্রায় ৮২ শতাংশ। এই আসনে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ। তিনি বিএনপির প্রার্থী জহির উদ্দিন স্বপনের চেয়ে দুই লাখ ভোট বেশি পেয়েছেন।

তৃতীয় সর্বোচ্চ ভোট পড়েছে বরিশাল-৪ আসনে, ৮১ দশমিক ৬০ ভাগ। এখানে আওয়ামী লীগের পংকজ দেবনাথ ২ লাখ ৩০ হাজার ভোটে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী জে এমন নুরুর রহমানকে হারিয়েছেন।

বরিশাল-৬ ও বরিশাল-২ আসনে ৭৮ শতাংশ ভোট পড়েছে। বরিশাল-৬ আসনের মহাজোটের নাসরিন জাহান বিএনপির সাবেক সাংসদ আবুল হোসেন খানকে ১ লাখ ৪৫ হাজার ভোট ও বরিশাল-২ আসনে আওয়ামী লীগের মো. শাহে আলম বিএনপির সরফুদ্দিন আহমেদকে ২ লাখ ভোটে হারিয়েছেন।

ভোটের ফলাফলে এমন তারতম্যের বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) বরিশাল নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলম বলেন, বরিশাল-৩ আসনে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে বলে সেখানে ভোট পড়ার হার ও দুই প্রার্থীর মধ্যে ব্যবধান কমে গেছে। এ থেকে বোঝা যায়, সেখানে ভোট প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়েছে এবং ফলাফলে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটেছে। বাকি পাঁচটি আসনে ভোট প্রাপ্তির ব্যবধান দেখে সহজে অনুমান করা যায়, সেখানে জন–ইচ্ছার প্রতিফলন অতটা হয়নি। এমন ফলাফল মানুষের বিশ্বাসকে নষ্ট করছে। এটা গোটা নির্বাচনী ব্যবস্থার জন্য হুমকি। যা রাজনীতি ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় দীর্ঘ মেয়াদে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।