সব প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত, হাতপাখা দ্বিতীয়

নির্বাচন কমিশন
নির্বাচন কমিশন

পটুয়াখালীর চারটি আসনেই মহাজোটের প্রার্থীরা বিপুল ভোটে জয় পেয়েছেন। এসব আসনে পরাজিত ১৬ প্রার্থীরই জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। আর সবগুলো আসনেই হাতপাখা নিয়ে নির্বাচন করা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থীরা দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন।

পটুয়াখালীর চারটি আসনের ফলাফল বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে। এই জেলার চারটি আসনে বেশ কয়েকজন ‘হেভিওয়েট’ প্রার্থী থাকায় এখানকার নির্বাচন নিয়ে সবার বেশ আগ্রহ ছিল। কিন্তু নির্বাচনের ফলে শাসক দলের হেভিওয়েট প্রার্থীদের ভোটের সংখ্যা বিপুল হলেও বিরোধীদের চিত্র হতাশাজনক। তারা সবাই জামানত হারিয়েছেন।
নির্বাচনী আইন অনুসারে প্রদত্ত ভোটের ৮ শতাংশ না পেলে প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়। প্রার্থীরা নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় এই জামানত জমা দেন।

পটুয়াখালী-১
পটুয়াখালী ১ আসনে মোট প্রার্থী ছিলেন ৬ জন। এখানে প্রধান দুই প্রার্থী ছিলেন সাবেক দুই মন্ত্রী। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী ছিলেন বিএনপির সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরী। আর মহাজোটের প্রার্থী সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শাহজাহান মিয়া। দুজনই নিজ দলের জেলা কমিটির সভাপতিও। এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আলতাফুর রহমান, জাকের পার্টির আবদুর রশীদ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) আবদুল মতলেব মোল্লা ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) সুমন সন্যামত ভোটের মাঠে ছিলেন।
ভোটের ফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, এই আসনের ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৪৭৬ ভোটের মধ্যে ভোট পড়েছে ৩ লাখ ৪ হাজার ৫৭৬। ভোট পড়েছে ৭৭ দশমিক ৪ শতাংশ। চূড়ান্ত ফলে মহাজোট প্রার্থী শাহজাহান মিয়া ২ লাখ ৭২ হাজার ৭৯০ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। প্রদত্ত ভোটের ৮৯ দশমিক ৫৬ শতাংশ পেয়েছেন তিনি। এই আসনে ১৪ হাজার ৮৭৫ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আলতাফুর রহমান। বিএনপির প্রার্থী আলতাফ হোসেন চৌধুরী পেয়েছেন ১০ হাজার ৪১৩ ভোট। সিপিবির প্রার্থী ১ হাজার ১৩১, এনপিপির প্রার্থী ১ হাজার ১৬১, জাকের পার্টি ২ হাজার ৩৫৮ ভোট পেয়েছেন। বিজয়ী প্রার্থী বাদে অন্য পাঁচ প্রার্থীর কেউই ৮ শতাংশ ভোট না পাওয়ায় তাদের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।

পটুয়াখালী-২
এই আসনে প্রার্থী ছিলেন মোট চারজন। শাসক দলের চিফ হুইপ আসম ফিরোজ, বিএনপির সাবেক সাংসদ সহিদুল আলম তালুকদারের স্ত্রী সালম আলম, সিপিবির শাহাবুদ্দিন আহমেদ ও ইসলামী আন্দোলনের নজরুল ইসলাম ভোটের মাঠে ছিলেন। এই আসনে মোট ভোট ২ লাখ ৫১ হাজার ৮৭৩। ভোট পড়েছে ২ লাখ ২ হাজার ৭২৯, মোট ভোটের ৮০ দশমিক ৪৯ শতাংশ। বিজয়ী প্রার্থী আ স ম ফিরোজ পেয়েছেন ১ লাখ ৮৫ হাজার ৭৮৩। তিনি প্রদত্ত ভোটের ৯১ দশমিক ৬৪ শতাংশ পেয়েছে। এখানেও দ্বিতীয় হয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। তারা পেয়েছে ৯ হাজার ২৬৯ ভোট। বিএনপির প্রার্থী ৫ হাজার ৬৬০ ও সিপিবির প্রার্থী ১ হাজার ৯৯ ভোট পেয়েছেন। পরাজিত সব প্রার্থীরই জামানত বাজেয়াপ্ত হয়।

পটুয়াখালী-৩
আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের সাংসদ আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইনকে বাদ দিয়ে এই আসনে দলটি মনোনয়ন দেয় প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদার ভাগনে এস এম শাহজাদাকে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে তিন ঘন্টার মধ্যে বিএনপিতে যোগ দিয়ে মনোনয়ন বাগিয়ে নেন গোলাম মাওলা রনি। এই দুজনের জন্য এই আসনের নির্বাচনের দিকে সবারই আগ্রহ ছিল। কিন্তু সেখানেও নির্বাচনে হয়েছে একতরফা। মাঠেই ছিলেন না গোলাম মাওলা রনি। যদিও রনির অভিযোগ ছিল তাঁকে ‘গৃহবন্দী’ করে রাখা হয়। এই আসনে ইসলামী আন্দোলনের কামাল খান ও জাতীয় পার্টির সাইফুল ইসলাম মাঠে ছিলেন।
ভোটের ফলে দেখা যায়, ২ লাখ ৯৮ হাজার ৬৭৩ ভোটের মধ্যে ২ লাখ ৩৫ হাজার ৫৯৯ ভোট পড়েছে সেখানে। ভোট পড়ার হার ৭৮ দশমিক ৮৮। বিজয়ী প্রার্থী এস এম শাহজাদা পেয়েছেন ২ লাখ ১৭ হাজার ২৬১ ভোট যা প্রদত্ত ভোটের ৯২ দশমিক ২২ শতাংশ। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী পেয়েছেন ৯ হাজার ৯ ভোট। বিএনপি ৬ হাজার ৪৫৯ ও জাতীয় পার্টি পেয়েছে ২ হাজার ২ ভোট। এখানেও পরাজিত ৩ প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়।

পটুয়াখালী-৪
এই আসনে প্রার্থী মোট ৬ জন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী মহিব্বুর রহমান প্রথমবারের মতো নির্বাচন করেন। তিনি পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। ৯১ এর নির্বাচন থেকেই তিনি মনোনয়ন চেয়ে আসছিলেন। সাবেক সাংসদ ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুবুর রহমানের আপন ফুপাতো ভাই তিনি। আর বিএনপি প্রার্থী সাবেক ছাত্রনেতা মোশাররফ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী। অন্য প্রার্থীরা হলেন ইসলামী আন্দোলনের হাবিবুর রহমান হাওলাদার, ইসলামী ঐক্যজোটের আবদুর রহমান, জাতীয় পার্টির আনোয়ার হাওলাদার ও বাম গণতান্ত্রিক জোটের বাসদ নেতা জহিরুল আলম।
এই আসনে ২ লাখ ৪৯ হাজার ৩৬ ভোটের মধ্যে ২ লাখ ৫ হাজার ১৯০ ভোট পড়েছে। ভোট পড়ার হার ৮২ দশমিক ৩৯ শতাংশ। বিজয়ী প্রার্থী মহিব্বুর রহমান পেয়েছেন ১ লাখ ৮৮ হাজার ৭৮১ ভোট, যা প্রদত্ত ভোটের ৯২ শতাংশ। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী ৭ হাজার ২৫১ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন। অন্য প্রার্থীদের মধ্যে বিএনপি ৬ হাজার ৯৭, ইসলামী ঐক্যজোট ৯৬৭, জাতীয় পার্টি ৯৫৮ ও বাসদ ৩০৮ ভোট পেয়েছেন। এখানেও পরাজিত ৫ প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।