ভাগ্যের শিকা এবারও ছিড়ল না বেড়াবাসীর

>

গত ৩৫ বছর সবগুলো মন্ত্রী পরিষদেই বেড়া থেকে কেউ না কেউ মন্ত্রী হয়েছেন। এবার বেড়াবাসী খুব আশা করেছিল, একজন মন্ত্রী পাবে তারা।

নতুন মন্ত্রিসভায় এবারও পাবনার বেড়া থেকে কাউকে মন্ত্রী করা হয়নি। এতে বেড়াবাসীর মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। ১৯৭৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত টানা ৩৫ বছর সব কটি মন্ত্রী পরিষদে পাবনার বেড়াবাসী অন্তত একজন হলেও মন্ত্রী পেয়েছে। শুধু ২০১৪ সালের মন্ত্রিসভা ব্যতিক্রম। সেবার বেড়াবাসীর মন্ত্রিত্বের ঐতিহ্যে ছেদ পড়ে। কারণ, আওয়ামী লীগ সরকার ২০১৪ সালে যে সরকার গঠন করে, তাতে বেড়ার কেউ মন্ত্রী হিসেবে ঠাঁই পাননি। সেই ধারা এবারের মন্ত্রিসভাতেও বজায় রইল।

আজ (৭ জানুয়ারি) বিকেলে নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যরা শপথ নেবেন। ইতিমধ্যেই মন্ত্রিসভার সদস্যদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। ২০১৪ সালের মতো এবারের মন্ত্রিসভাতেও বেড়ার কেউ ঠাঁই পাননি। অথচ বেড়াবাসী এবার আশা করেছিল, মন্ত্রিত্বের হারানো ঐতিহ্য এবার তারা ফিরে পাবে। সেই আশা পূরণ না হওয়ায় বেড়াবাসীর মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে।

বেড়াবাসী প্রথম মন্ত্রী পান ১৯৭৯ সালে। ওই বছর উপজেলার জয়নগর গ্রামের মির্জা আবদুল হালিম বেড়ার প্রথম মন্ত্রী হন। তিনি জিয়াউর রহমান সরকারের নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। এরশাদ সরকারের সময় নতুন ভারেঙ্গা গ্রামের এ কে খন্দকার পরিকল্পনামন্ত্রী ও নাকালিয়া গ্রামের মেজর (অব.) মনজুর কাদের ত্রাণ ও পুনর্বাসন প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। ১৯৯১ সালে খালেদা জিয়া সরকারের সংস্থাপন প্রতিমন্ত্রী হন ঘোপসেলন্দা গ্রামের ওসমান গণি খান (ওজি খান)। ১৯৯৬ সালে হাসিনা সরকারের তথ্য প্রতিমন্ত্রী হন বৃশালিখা মহল্লার আবু সাইয়িদ। তারপর চারদলীয় জোট সরকারের (২০০১-২০০৬) মন্ত্রী হন পাবনা-১ আসনের (সাঁথিয়া ও বেড়ার একাংশ) তৎকালীন সাংসদ মতিউর রহমান নিজামী। ২০০৯ থেকে ২০১৪ সালের মহাজোট সরকারের সময়ে বেড়ার তিনজন মন্ত্রিত্বের দায়িত্ব পালন করেন। তাঁরা হলেন নতুন ভারেঙ্গা গ্রামের এ কে খন্দকার (পরিকল্পনামন্ত্রী), বেড়া পৌর এলাকার বৃশালিখা মহল্লার শামসুল হক টুকু (স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী) ও জয়নগর গ্রামের মির্জা আবদুল জলিল (প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদায় প্রাইভেটাইজেশন বোর্ডের চেয়ারম্যান)।

২০১৪ সালে সরকার গঠনের পর মন্ত্রিত্ব থেকে বাদ পড়েন পাবনা-১ আসনের সাংসদ শামসুল হক টুকু। এবার সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত হয়ে তিনি হ্যাটট্রিক করেছেন। প্রথম দফায় (২০০৯-২০১৪) তিনি সাংসদ ও প্রতিমন্ত্রী হন। দ্বিতীয় দফায় শুধু সাংসদ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এবার তৃতীয়বারের মতো সাংসদ নির্বাচিত হন। এরপর বেড়া ও সাঁথিয়াবাসী ভেবেছিল, মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী হিসেবে আবার তাঁকে ফিরিয়ে আনা হবে। এ নিয়ে নির্বাচনের পর থেকেই দুই উপজেলায় চলছিল ব্যাপক আলোচনা। কিন্তু গতকাল রোববার ঘোষিত মন্ত্রিসভার সদস্যদের তালিকায় তাঁর নাম না থাকায় দুই উপজেলার মানুষ হতাশ হয়ে পড়ে।

বেড়া পৌর এলাকার ট্রাকচালক জানে আলম বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধইর‌্যা আমরা মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী পায়া আসছিল্যাম। কিন্তু গতবারের (২০১৪) থ্যা আমাগরে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী পাওয়ার ভাগ্য নষ্ট গ্যাছে। এবার আমরা মন্ত্রী নিয়্যা স্বপ্ন দেখছিল্যাম। কিন্তু সেই স্বপ্ন আর পূরণ হলো না।’

বেড়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ বলেন, মন্ত্রিত্ব নিয়ে বেড়া উপজেলার আলাদা একটা ঐতিহ্য রয়েছে। গত মেয়াদে না পেলেও এবার মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী পাওয়ার ব্যাপারে বেড়াবাসী খুব আশায় ছিল। কিন্তু এবারও সেই আশা পূরণ না হওয়ায় বেড়াবাসী হতাশ হয়ে পড়েছে।