সংসদে যেতে চান গণফোরামের দুজন

গণফোরামের নেতা সুলতান মোহাম্মদ মনসুর ও মোকাব্বির খান।
গণফোরামের নেতা সুলতান মোহাম্মদ মনসুর ও মোকাব্বির খান।

চলতি মাসের শুরুর দিকেই গণফোরামের দুই সদস্যের শপথ নেওয়ার ব্যাপারে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন। ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে নির্বাচন করা গণফোরামের সুলতান মোহাম্মদ মনসুর ও মোকাব্বির খান এবার নিজেরাই বলছেন, তাঁরা সংসদে যাওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক। তবে এ ব্যাপারে ঐক্যফ্রন্ট থেকে দলীয়ভাবে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

অবশ্য ঐক্যফ্রন্টের প্রধান শরিক বিএনপির সিদ্ধান্ত সংসদে না যাওয়ার। দলটি থেকে নির্বাচিত ৬ সদস্যের কেউই দলীয় অবস্থানের বাইরে গিয়ে কোনো কথা বলেননি।

ডাকসুর সাবেক ভিপি ও আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা সুলতান মোহাম্মদ মনসুর একাদশ জাতীয় সংসদে নির্বাচন করেন বিরোধীশিবির ঐক্যফ্রন্ট থেকে। তিনি গণফোরাম থেকে মনোনয়ন নিয়ে ধানের শীষ প্রতীকে মৌলভীবাজার-২ আসন থেকে নির্বাচিত হন। তবে এখনো শপথ নেননি। এ ব্যাপারে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা এই মুহূর্তে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেনও বলেছেন ইতিবাচক। ৯০ দিন হাতে আছে, যেকোনো একসময় হবে।’

গণফোরামের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোকাব্বির খান ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে উদীয়মান সূর্য প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হন সিলেট-২ আসন থেকে। শপথ নেওয়া প্রসঙ্গে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘শপথের ব্যাপারে তো আমরা পজিটিভ। আমাদের বর্ধিত সভা হয়েছে। দলেরও সমর্থন আছে সংসদে যাওয়ার ব্যাপারে। কিন্তু আনুষ্ঠানিক কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। যা-ই করি না কেন, ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে আলোচনা করেই করব।’

গণফোরামের দুই সদস্য শপথ নিলে জোটের মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব হবে কি না জানতে চাইলে মোকাব্বির খান বলেন, ‘ঝামেলা হওয়ার কোনো কারণ দেখছি না। এই যাওয়াটাও আন্দোলনের অংশ।’

চিকিৎসার জন্য ড. কামাল হোসেন এখন সিঙ্গাপুরে আছেন। আজ সোমবার অথবা আগামীকাল মঙ্গলবার রাতে তাঁর দেশে ফেরার কথা। গত ৫ জানুয়ারি গণফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে ড. কামাল হোসেন বলেছিলেন, শপথের ব্যাপারে তাঁরা ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেবেন। অবশ্য তার পরদিন ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের বৈঠক শেষে মোস্তফা মহসীন মন্টু সাংবাদিকদের জানান, তাঁরা কেউই শপথ নিচ্ছেন না।

গণফোরামের একটি সূত্র জানায়, দলটির ভেতরে সংসদে নিজেদের প্রতিনিধি দেওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব আছে। কিন্তু ঐক্যফ্রন্টের বৈঠকের পর সংসদে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে কেউ আর আলোচনা তোলেননি।

বিএনপি বারবার বলছে, ‘ভোট ডাকাতির’ নির্বাচনের ফল তারা প্রত্যাখ্যান করেছে। এ অবস্থায় তারা সংসদে যাবে না। সম্প্রতি ২০-দলীয় জোটের প্রধান সমন্বয়ক ও লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি অলি আহমদ বিএনপির উদ্দেশে বলেছেন, সংসদে গেলে বেইমানি করা হবে। এই বক্তব্যের ব্যাপারে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কর্মীদের রক্তের ওপর পা দিয়ে, যাঁদের ওপর হামলা-মামলা হয়েছে, তাঁদের প্রতি অসম্মান দেখিয়ে, কেউ যেন নিজের লাভ বা সুবিধা না দেখে। ভোট ডাকাতির নির্বাচন আমরা প্রত্যাখ্যান করেছি। যে বা যাঁরা সংসদে যাবেন, তাঁরা জোটের সঙ্গে বেইমানি করবে। জাতির সঙ্গে প্রতারণা করবে।’

ঐক্যফ্রন্টের নেতারা বলছেন, জোটগতভাবে সংসদে না যাওয়া সিদ্ধান্ত এখনো বহাল আছে। ড. কামাল হোসেন দেশে ফিরলে শপথসহ নানান বিষয়ে আলোচনা হবে। ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘না যাওয়ার ব্যাপারে ঐক্যফ্রন্ট ও গণফোরামের সিদ্ধান্ত একই। ওনারা (মনসুর ও মোকাব্বির) তো ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে নির্বাচন করেছেন। একজন ধানের শীষে, আরেকজন উদীয়মান সূর্যে। এখন পর্যন্ত না যাওয়ার সিদ্ধান্তই আছে।’

জোটগতভাবে না নিয়ে এককভাবে সিদ্ধান্ত নিলে তাতে জোটের মধ্যে সমস্যা তৈরি হবে বলে মনে করেন ঐক্যফ্রন্টের আরেক নেতা ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি বলেন, তাঁরা যদি এখন যেতে চান, তবে তা ঐক্যফ্রন্টের সামগ্রিক সিদ্ধান্ত না। কোনো বৈঠকে এখন পর্যন্ত এ রকম কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এককভাবে সিদ্ধান্ত নিলে সেটা বিএনপি বা গণফোরাম যে-ই নেবে, সমস্যা তৈরি হওয়ার আশঙ্কার আছে।

জাফরুল্লাহ চৌধুরী আরও বলেন, ‘আমর মনে হয়, যা কিছুই হবে, ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্তেই হবে। ৬ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংলাপ হলে সিদ্ধান্ত নেওয়াটা সহজ হবে।’