নতুন আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে বিক্ষোভ

জি এম সিরাজকে বগুড়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক করার প্রতিবাদে বিএনপি একাংশের নেতা–কর্মীরা দলীয় কার্যালয়ের সামনে আগুন ধরিয়ে প্রতিবাদ জানান। ছবি: সোয়েল রানা
জি এম সিরাজকে বগুড়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক করার প্রতিবাদে বিএনপি একাংশের নেতা–কর্মীরা দলীয় কার্যালয়ের সামনে আগুন ধরিয়ে প্রতিবাদ জানান। ছবি: সোয়েল রানা

গোলাম মোহাম্মদ সিরাজকে (জি এম সিরাজ) আহ্বায়ক করে জেলা বিএনপির কমিটি ঘোষণার প্রতিবাদে বগুড়ায় বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। বিএনপিতে একসময়ের সংস্কারপন্থী নেতা হিসেবে পরিচিত দলের সাবেক সাংসদ সিরাজ। আজ বুধবার রাত পৌনে আটটার দিকে শহরের নওয়াববাড়ি সড়কে দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন শেষে জি এম সিরাজের কুশপুত্তলিকা দাহ করেছেন জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি সাইফুল ইসলাম–সমর্থিত নেতারা-কর্মীরা। তাঁরা জেলা বিএনপি কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন।

‘বিএনপির দুর্গ’ হিসেবে পরিচিত বগুড়ায় এর আগেও পাল্টাপাল্টি আহ্বায়ক কমিটি গঠনের ঘটনা ঘটেছে। গত ২৯ এপ্রিল বগুড়া জেলা বিএনপির একাংশ তৎকালীন সভাপতি সাইফুল ইসলামকে আহ্বায়ক ও সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীনকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে ৪৫ সদস্যের কমিটির ঘোষণা দেয়। একই দিন সাইফুলবিরোধীরা সংবাদ সম্মেলন করে খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও বগুড়া পৌরসভার মেয়র এ কে এম মাহবুবর রহমানকে আহ্বায়ক এবং ফজলুল বারীসহ আরও চারজনকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে ৩১ সদস্যের পাল্টা কমিটি ঘোষণা দেন।

কমিটি নিয়ে এই বিতণ্ডার মধ্যে আজই বগুড়া জেলা বিএনপির ৩১ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বুধবার বগুড়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দেন।

৩১ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটিতে যাঁরা স্থান পেয়েছেন তাঁরা হলেন আহ্বায়ক জি এম সিরাজ, যুগ্ম আহ্বায়ক দুজন। তাঁরা হলেন এ কে এম সাইফুল ইসলাম ও ফজলুল বারী তালুকদার। সদস্য বগুড়া পৌরসভার মেয়র এ কে এম মাহবুবর রহমান, সাবেক সাংসদ হেলালুজ্জামান তালুকদার, সাবেক সভাপতি সাইফুল ইসলাম, সাবেক সম্পাদক জয়নাল আবেদীন, সাবেক সাংসদ কাজী রফিকুল ইসলাম, বিএনপি নেতা মো. শোকরানা, মাহবুবর রহমান, আলী আজগর তালুকদার, রেজাউল করিম বাদশা, আবদুর রহমান, খাজা ইফতেখার আহম্মেদ, মামুনুর রশিদ, মাহবুবুর রহমান, এ কে এম আহসানুল তৈয়ব জাকির, শাহজাদী লায়লা আরজুমান, শাহ মো. শাহজাহান আলী, এম আর ইসলাম স্বাধীন, হামিদুল হক চৌধুরী, তৌহিদুল আলম মামুন, সহিন উন নবী সালাম,

শেখ তাহা উদ্দিন নাইন, এনামুল কাদির, ওমর ফারুখ খান, এ কে এম খায়রুল বাসার, সাইদুজ্জামান শাকিল, মুনিরুজ্জামান মনি, শামীমা আক্তার এবং মোরশেদ মিলটন।

কমিটি গঠনের পর প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে জি এম সিরাজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এক–এগারোর প্রেক্ষাপটে জোরজবরদস্তি করে দল এবং দলীয় নেতাদের সম্পর্কে কিছু কথা বলতে বাধ্য করা হয়েছিল। এতে ভুল–বোঝাবুঝি তৈরি হয়েছিল। তবে তৃণমূলের নেতা–কর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল এবং বিপদে–আপদে মামলা-মোকদ্দমা চালানোর খরচ বহনসহ তাঁদের পাশে ছিলাম।’

তবে সিরাজকে আহ্বায়ক করার পর ক্ষোভে ফেটে পড়েছে দলের একাংশ। আজ সন্ধ্যায় সিরাজবিরোধী সাইফুলের সমর্থকেরা জেলা কমিটির কার্যালয়ের সামনে সিরাজের কুশপুত্তলিকা জ্বালায়।

বিক্ষোভ সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন সাইফুলপন্থী নেতা হিসেবে পরিচিত জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি (বর্তমানে পদ স্থগিত করা হয়েছে) শাহ মেহেদী হাসান, জেলা জাসাসের সম্পাদক ও বগুড়া পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর দেলওয়ার হোসেন, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক শাহাবুল আলম, পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি ও পৌর কাউন্সিলর তৌহিদুল ইসলাম, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম, জেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুকুল ইসলাম, শহর যুবদলের সভাপতি মাসুদ রানা, জেলা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক রবিউল ইসলাম, শ্রমিক দলের সভাপতি লিটন শেখ প্রমুখ।

জানতে চাইলে বগুড়া পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর এবং জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি শাহ মেহেদী হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুর্দিনের কান্ডারি ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে দলে সংস্কারপন্থী এবং বগুড়া বিএনপিতে “অতিথি” নেতা হিসেবে পরিচিত জি এম সিরাজকে কোনোভাবেই আহ্বায়ক মেনে নিতে পারছেন না এত দিন মাঠে থাকা সাধারণ নেতা–কর্মীরা। বগুড়া বিএনপির সঙ্গে জি এম সিরাজের কোনো যোগাযোগ নেই। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে ভুল বুঝিয়ে টাকার বিনিময়ে আহ্বায়ক পদ তিনি বাগিয়ে নিয়েছেন। এ কারণে তাঁর কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়েছে। তাঁকে প্রতিহতের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। কমিটি পরিবর্তন না করা পর্যন্ত আমরা রাজপথে থাকব।’

এই বিক্ষোভের পর জি এম সিরাজের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ফোন ধরেননি।