চাকরিতে যোগদানের কয়েক ঘণ্টা আগে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক জানাল নিয়োগ স্থগিত, ভোগান্তিতে ২৭৮ জন

পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক
পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক

মুনতাজীর রাশেদীন কাজ করতেন আইএফআইসি ব্যাংকে। পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার পদে যোগদানের চিঠি পেয়ে গত সপ্তাহে চাকরি ছেড়ে দেন। নতুন চাকরিতে যোগদানের তারিখ ছিল বুধবার। মঙ্গলবার রাতে কুমিল্লা থেকে ঢাকায় আসার পথে জানতে পারেন নিয়োগ স্থগিত হয়েছে।


মুনতাজীর প্রথম আলোকে বলেন, ‘যোগদানের মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ মুঠোফোনে খুদে বার্তা পাঠিয়ে জানায় নিয়োগ স্থগিত হয়েছে। ব্যাংক কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তে হঠাৎ বেকার হয়ে গেলাম। পরিবার নিয়ে চরম অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।’

মুনতাজীরের মতো এমন অনিশ্চয়তায় পড়েছেন পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার পদে নিয়োগ পাওয়া ২৭৮ জন। জাতীয় বেতন স্কেলের নবম গ্রেডের এই চাকরিতে যোগ দিতে প্রার্থীদের অনেকেই আগের চাকরি ছেড়ে দেন। কিন্তু যোগদানের মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য নিয়োগ স্থগিত করা হয়েছে জানিয়ে বার্তা পাঠায়।

কর্তৃপক্ষের এমন নোটিশে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা। বুধবার সকালে তাঁরা জড়ো হন রাজধানীর পুরোনো এলিফ্যান্ট রোডের পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের কার্যালয়ে। দিনভর উৎকণ্ঠা নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন ক্ষুব্ধ প্রার্থীরা।

ভুক্তভোগী প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ৩০ মে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাঁদের নিয়োগপত্র দেয়। পত্রে উল্লেখ ছিল, ১৯ জুন সকাল নয়টায় তাঁদের যোগদানপত্র কর্তৃপক্ষের কাছে দাখিল করতে হবে। প্রার্থী অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরিরত থাকলে ওই প্রতিষ্ঠানের ছাড়পত্র জমা দিতে হবে। সেই হিসেবে অনেক প্রার্থী আগের চাকরিতে ইস্তফা দিয়েছেন।

মো. ইবনে খালেদ সোনালী ব্যাংকের অফিসার পদে কর্মরত ছিলেন। গত বৃহস্পতিবার সোনালী ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে দেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি পরিবারের বড় ছেলে। প্রথম শ্রেণির চাকরি পাওয়ায় আগের চাকরি ছেড়ে দিই। ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে সুখের বদলে এখন হয়রানি হচ্ছে।’

ভুক্তভোগী প্রার্থীরা বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে তাঁদের প্রাথমিক বাছাই, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা হয়। পুলিশ যাচাই-বাছাই শেষে তাঁদের নিয়োগ চূড়ান্ত করে। নিয়োগপত্র দেওয়ার প্রায় ২০ দিন পরে যোগদানের আগের রাতে নিয়োগ স্থগিত করায় তাঁরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

এ বিষয়ে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আকবর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার বাড়ি, আমার খামার’ প্রকল্পের উপজেলা সমন্বয়কারীরা পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার পদে পদোন্নতি চান। তাঁরা এ বিষয়ে উচ্চ আদালতে রিট করেন। রিটের রুলে আদালত উপজেলা সমন্বয়কারীদের জন্য ১২৯টি পদ ফাঁকা রাখার নির্দেশ দেন।

আকবর হোসেন বলেন, আদালতের এই আদেশের বিপরীতে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ চেম্বার আদালতে যায়। চেম্বার আদালত আদেশটি স্থগিতাদেশ দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ নিয়োগের বিষয় চূড়ান্ত করে। কিন্তু রিটকারীরা চেম্বার আদালতের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার চেয়ে আবেদন করেন। গতকাল (মঙ্গলবার) আবেদনের শুনানি শেষে আপিল বিভাগ চেম্বার আদালতের স্থগিতাদেশ তুলে নিয়ে হাইকোর্টে রুলের শুনানি করতে বলেন। আপিল বিভাগের এ আদেশের ফলে সিনিয়র অফিসার নিয়োগের বিষয়টি স্থগিত করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।

ভুক্তভোগী একাধিক প্রার্থী অভিযোগ করেন, চেম্বার আদালতের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার চেয়ে করা আবেদনটির শুনানির তারিখ ছিল আগামী সপ্তাহে। রিটকারীদের আইনজীবী সরকারের সাবেক আইনমন্ত্রী হওয়ায় প্রভাব খাঁটিয়ে গতকাল (মঙ্গলবার) এই শুনানি করা হয়। তাঁরা দ্রুততম সময়ে তাঁদের যোগদান নিশ্চিত করার দাবি জানান।