'রোহিঙ্গাদের সাহায্য করুন, তাতেই চলবে'

প্রায় দুই বছর আগে জাতিসংঘ মহাসচিবের মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূত হিসেবে কাজ শুরু করেন সুইজারল্যান্ডের সাবেক কূটনীতিক ক্রিস্টিন শ্র্যানার বার্গনার। ছবি: প্রথম আলো
প্রায় দুই বছর আগে জাতিসংঘ মহাসচিবের মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূত হিসেবে কাজ শুরু করেন সুইজারল্যান্ডের সাবেক কূটনীতিক ক্রিস্টিন শ্র্যানার বার্গনার। ছবি: প্রথম আলো

প্রায় দুই বছর আগে জাতিসংঘ মহাসচিবের মিয়ানমারবিষয়ক বিশেষ দূত হিসেবে কাজ শুরু করেন সুইজারল্যান্ডের সাবেক কূটনীতিক ক্রিস্টিন শ্র্যানার বার্গনার। এ নিয়ে তিনি পাঁচবার বাংলাদেশে এলেও কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির ঘুরে দেখেছেন মাত্র একবার। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু না হওয়ায় গত সপ্তাহে ইয়াঙ্গুনে এক কূটনৈতিক ব্রিফিংয়ে তিনি প্রকারান্তরে বাংলাদেশকেই দোষারোপ করেছেন। তাই সব মিলিয়ে আজ মঙ্গলবার বিকেলে পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হকের সঙ্গে দেখা করতে এসে তোপের মুখে পড়েন ক্রিস্টিন শ্র্যানার বার্গনার।

ইয়াঙ্গুনে জাতিসংঘের দপ্তরের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ৯ জুলাই থেকে মিয়ানমারে ১০ দিন সফর করেন জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূত ক্রিস্টিন শ্র্যানার বার্গনার। এ সময় তিনি সেখানকার মন্ত্রী ও সরকারি কর্মকর্তা, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, গবেষণা প্রতিষ্ঠান, জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করেন।

ক্রিস্টিন শ্র্যানার বার্গনার গতকাল সোমবার বাংলাদেশে এসেছেন। আজ মঙ্গলবার বিকেলে তিনি পররাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে তাঁর দপ্তরে দেখা করেন। আলোচনা শেষে এ নিয়ে জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করেননি জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূত।

এ নিয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, মিয়ানমার সফরে তিনি কি দেখেছেন তাঁর পর্যবেক্ষণ কি—তা নিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূতের সঙ্গে কথা হয়েছে।

বৈঠকে উপস্থিত কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাখাইনের পরিবেশের কথা বলতে গিয়ে আলোচনার শুরুতেই জাতিসংঘের মহাসচিবের দূত বিপাকে পড়েন। বার্গনার স্বীকার করেন যে, রাখাইনে তাদের চলাফেরা একেবারেই সীমাবদ্ধ। শুধু সেই জায়গাগুলোতেই তাঁরা যেতে পারেন, যেখানে মিয়ানমার সরকার তাদের নিয়ে গেছে। এ সময় তাঁকে থামিয়ে দিয়ে শহীদুল হক বলেন, রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ফেরানোর মতো সহায়ক পরিবেশ হয়নি, এটি নিশ্চয়ই আপনাকে উদ্ধৃত করে বলা যাবে? তখন ক্রিস্টিন বার্গনার বলেন, হ্যাঁ, রাখাইনে এখনো রোহিঙ্গাদের ফেরানোর মতো পরিবেশ হয়নি।

এরপর পররাষ্ট্রসচিব তাঁর কাছে জানতে চান, ইয়াঙ্গুনে কূটনীতিকদের শেষ ব্রিফিংয়ে তো আপনি সেটা বলেননি? শুধু বাংলাদেশ দূতাবাস নয়, অনেকের কাছ থেকেই এটা জেনেছি প্রত্যাবাসন নিয়ে আপনি প্রকারান্তরে বাংলাদেশের ঘাড়ে দায় চাপিয়েছেন। এমনকি মিয়ানমারের গঠিত স্বাধীন তদন্ত কমিশনের বাংলাদেশে আসা নিয়ে অভিযোগ করেছেন। একপর্যায়ে পররাষ্ট্রসচিবের বক্তব্য অস্বীকার করতে চাইলে শহীদুল হক মিয়ানমারে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে পাঠানো প্রতিবেদন তাঁকে পড়ে শোনান। এতে বিব্রত হন জাতিসংঘ মহাসচিবের মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূত।

বাংলাদেশে এসে ক্রিস্টিন কেন কক্সবাজারের শিবিরে গিয়ে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে দেখা করেন না—সেই বিষয়েও জানতে চান পররাষ্ট্রসচিব। শহীদুল হক বলেন, ‘আপনি বাংলাদেশে আসেন, কক্সবাজারে যান না কেন? রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা না বললে তো আপনি জানতেই পারবেন না তারা কি যেতে চায়, নাকি চায় না। তারা আসলে কি চায়।’এর কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূত।

একপর্যায়ে ক্রিস্টিন বার্গনার বলেন, ‘বিশ্বাস করুন, আমি বাংলাদেশকে সাহায্য করতে চাই।’ এর উত্তরে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘আমরা কি সাহায্য চেয়েছি! রোহিঙ্গাদের সাহায্য করুন, তাতেই চলবে।’

পররাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে আলোচনার একপর্যায়ে ক্রিস্টিন শ্র্যানার বার্গনার তাঁর এক সহকর্মীকে (আলোচনায় উপস্থিত) শিবির পরিদর্শনে পাঠানোর সিদ্ধান্তের কথা জানান। বৈঠকে উপস্থিত অন্য এক কর্মকর্তা জানান, পরবর্তী কূটনৈতিক ব্রিফিং নিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূতকে সতর্ক করেছেন পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হক। তিনি বলেন, ‘পরের বার কূটনৈতিক ব্রিফিংয়ের সময় আমরা আপনার ওপর নজর রাখব। এ নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করব, তা প্রকাশ্যে নিয়ে আসব। আর প্রথম প্রতিবেদনটা পাঠাব জাতিসংঘ মহাসচিবের কাছে।’