বনানীর এফআর টাওয়ারে নকশা জালিয়াতি: জামিন পেলেন জমির মালিক ফারুক

বনানীর এফআর টাওয়ারের নকশা জালিয়াতির অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় গ্রেপ্তার জমির মালিক এস এম এইচ আই ফারুক জামিন পেয়েছেন। আজ মঙ্গলবার ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ ইমরুল কায়েস জামিনের আদেশ দেন।

আদালত সূত্র বলছে, ২৯ আগস্ট পর্যন্ত ফারুকের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন মঞ্জুর করেন আদালত।

এর আগে গতকাল সোমবার মামলার এজাহারভুক্ত আসামি বিএনপি নেতা তাসভীর উল ইসলাম জামিন পান।

রাজধানীর গুলশান ২ নম্বর এলাকা থেকে দুদকের উপপরিচালক আবু বকর সিদ্দিকের নেতৃত্বে একটি দল জমির মালিক এস এম এইচ আই ফারুককে গ্রেপ্তার করে দুদক।

দুদক সূত্র জানায়, গত ২৫ জুন রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান হুমায়ূন খাদিম, টাওয়ারের জমির মালিক এস এম এইচ আই ফারুক, রূপায়ণ গ্রুপের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী, এফ আর টাওয়ারের পরিচালনা কমিটির সভাপতি তাসভীর উল ইসলামসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে আলাদা দুটি মামলা করে দুদক ।

দুদকের মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, তাসভীর উল ইসলাম এফ আর টাওয়ারের ২১, ২২ ও ২৩তম তলা বন্ধক রেখে আর্থিক প্রতিষ্ঠান জিএসপি ফিন্যান্স থেকে ৫ কোটি ৬৫ লাখ টাকা নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। তিনি কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপিরও সভাপতি। ওই টাওয়ারের ২১, ২২ ও ২৩তম তলার মালিকানা রয়েছে প্রযুক্তি খাতের কোম্পানি কাশেম ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের হাতে। এই কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তাসভীর।

এর আগে গত ২৯ জুলাই একই মামলায় গ্রেপ্তার করা হয় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সাবেক সহকারী পরিচালক শাহ মো. সদরুল আলমকে। তিনিও মামলার এজাহারভুক্ত আসামি।

চলতি বছরের ২৮ মার্চ বনানীর এফ আর টাওয়ারে আগুন লাগে। এর পরপরই ভবনটির নির্মাণে অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য উঠে আসে।

আগুন লাগার ঘটনায় পুলিশের করা মামলায় তিনজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করা হয়। তিন আসামি হলেন এফ আর টাওয়ারের জমির মালিক এস এম এইচ আই ফারুক, ভবন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান রূপায়ণ গ্রুপের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী খান মুকুল এবং এফ আর টাওয়ারের বর্ধিত অংশের মালিক বিএনপির নেতা তাসভীর উল ইসলাম। এঁদের মধ্যে এস এম এইচ আই ফারুক ও তাসভীর উল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। পরে তাঁরা জামিন পান। মামলাটির তদন্ত করছে গোয়েন্দা পুলিশ।

এফ আর টাওয়ারে অনিয়মের ঘটনায় গঠিত গণপূর্ত মন্ত্রণায়ের তদন্ত কমিটি অর্ধশতাধিক ব্যক্তিকে দায়ী করেছে। গত ২২ মে গণপূর্তমন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম এক সংবাদ সম্মেলনে তদন্ত কমিটির ওই প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। ওই দিন তিনি বলেন, এফ আর টাওয়ারের নকশা অনুমোদনে বিধি লঙ্ঘন এবং নির্মাণের ক্ষেত্রে ত্রুটি-বিচ্যুতি ছিল। শুধু তা-ই নয়, অবৈধভাবে নির্মাণ করা হয়েছে ভবনটির ১৯ থেকে ২৩তম তলা। আর এসব অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ছিলেন রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান মো. হুমায়ূন খাদেমসহ অর্ধশতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী। মন্ত্রী আরও বলেন, অবৈধভাবে নির্মিত ১৯ থেকে ২৩তম তলা পর্যন্ত ভেঙে ফেলা হবে। এ জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আলাদা মামলা করা হবে। আর ১৬ থেকে ১৮তম তলা পর্যন্ত অনুমোদনের ক্ষেত্রে আইনি ত্রুটি থাকায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের শাস্তির আওতায় আনা হবে।

মন্ত্রণায়ের তদন্ত প্রতিবেদনে ভবন নির্মাণের অনিয়ম ও ত্রুটিতে যেসব ব্যক্তিকে দায়ী করা হয়েছে তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান হুমায়ূন খাদিম, রাজউকের সাবেক সদস্য ডি এম ব্যাপারী, রাজউকের সাবেক নগর-পরিকল্পনাবিদ জাকির হোসেন, সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মো. সাইদুর রহমান, সাবেক অথরাইজড অফিসার-২ সৈয়দ মকবুল আহমেদ, সাবেক সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ উল্লাহ, জমির মূল মালিক এস এম এইচ আই ফারুক, সাবেক অথরাইজড অফিসার এ টি এম কামরুজ্জামান, সাবেক অথরাইজড অফিসার নাজমুল হুদা, সাবেক সহকারী অথরাইজড অফিসার মো. বদরুজ্জামান মিয়া, সাবেক সহকারী অথরাইজড অফিসার বশির উদ্দিন খান, ইমারত পরিদর্শক ইমরুল কবির, ইমারত পরিদর্শক মো. শওকত আলী, উচ্চমান সহকারী মুহাম্মদ আবদুর রহমান, উচ্চমান সহকারী (সাময়িক বরখাস্ত) মো. সফিউল্লাহ, নিম্নমান সহকারী মো. মজিবুর রহমান (সাময়িক বরখাস্ত), সাবেক তত্ত্বাবধায়ক জাহানারা বেগম, বিষয় পরিদর্শক মো. মেহেদুজ্জামান, সহকারী পরিচালক (এখন সাবেক) শাহ মো. সদরুল আলম, উপপরিচালক মুহাম্মদ শওকত আলী (প্রেষণ), পরিচালক শামসুল আলম (প্রেষণ), সদস্য (এস্টেট) রাজউল করিম তরফদার, তত্ত্বাবধায়ক মোফাজ্জল হোসেন, তৎকালীন সহকারী পরিচালক মো. এমদাদ আলী বিশ্বাস (মৃত), পরিচালক আবদুল্লাহ আল বাকি, সদস্য আ ই ম গোলাম কিবরিয়া, অফিস সহকারী মো. এনামুল হক, তৎকালীন ইমারত পরিদর্শক নজরুল ইসলাম প্রমুখ।

এফ আর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ২৭ জন মারা যান। তাঁদের মধ্যে কেউ ভবন থেকে পড়ে আবার কেউ আগুনে পুড়ে মারা যান।