বর্জ্যবাহী জাহাজ এমটি প্রডিউসারকে দেওয়া আমদানির অনুমতি বেআইনি: হাইকোর্ট

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

তেজস্ক্রিয়যুক্ত বর্জ্যবাহী স্ক্র্যাপ জাহাজ এমটি প্রডিউসারকে দেওয়া আমদানি, সৈকতায়ন ও ভাঙার অনুমতি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী বলে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট।

জনস্বার্থে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) করা একটি রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ও বিচারপতি মো. সেলিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রায় দেন। একই সঙ্গে জাহাজভাঙা কার্যক্রম পরিচালনায় দেশীয় ও আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ হচ্ছে উল্লেখ করে তা নিয়ন্ত্রণে পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি কয়েক দফা নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।

জাহাজটির বেশ কিছু অংশ ভাঙা হয়ে গেছে। এ বিবেচনায় বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন, পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ ও মেগা পোর্ট অথরিটির যৌথ তত্ত্বাবধানে এবং একজন জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানীর সার্বক্ষণিক উপস্থিতিতে পরমাণু শক্তি কমিশনের তেজস্ক্রিয় বর্জ্য এবং মানবস্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনাবিষয়ক ইউনিটকে জাহাজটির বর্জ্য বিষয়ে শতভাগ নিরীক্ষা শেষ করতে একটি কর্মপরিকল্পনা প্রস্তুত করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। নিরীক্ষার ক্ষেত্রে জাহাজটির আমদানিকারক জনতা স্টিল করপোরেশন সব ব্যয় বহন করবে। এ ছাড়া পরিবেশ ছাড়পত্রের সংশ্লিষ্ট শর্ত ভঙ্গ ও দূষণ করে থাকলে পরিবেশ অধিদপ্তর জাহাজ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান জনতা স্টিল করপোরেশনকে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ আরোপ করতে পারবে।

এর আগে ২০১৬ সালের আগস্টে জনতা স্টিল করপোরেশন ড্যানিশ জাহাজ প্রতিষ্ঠান মার্কসের কাছ থেকে ওই জাহাজটি কেনে এবং তা ভাঙার জন্য দেশে আমদানি করে। তবে প্রচলিত আইন ও আদালতের আদেশ অমান্য করে এমটি প্রডিউসারকে আমদানি, সৈকতায়ন ও ভাঙার অনুমতির বিরুদ্ধে বেলা ২০১৭ সালের জুনে হাইকোর্টে রিট করে।

আদালতে বেলার পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, তাঁকে সহায়তা করেন আইনজীবী সাঈদ আহমেদ কবীর। জনতা স্টিল করপোরেশনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী আহসানুল করিম ও খায়রুল আলম চৌধুরী।

পরে রিজওয়ানা হাসান প্রথম আলোকে বলেন, রায়ের পর্যবেক্ষণে এসেছে যে জাহাজভাঙা কর্মকাণ্ডের প্রতিটি ধাপ পরিচালিত হচ্ছে ব্যাপক অস্বচ্ছতা, আইন ও আদালতের নির্দেশনা লঙ্ঘন ও অমান্য করে। তেজস্ক্রিয়যুক্ত ৫২ হাজার টনের জাহাজটি অসত্য ও অসম্পূর্ণ তথ্য দিয়ে দেশে আসে। জাহাজটি সৈকতায়ন ও ভাঙার অনুমতিও পেয়ে যায়।

তবে আইনজীবী আহসানুল করিম জানান, জাহাজ ভাঙার ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছেন হাইকোর্ট। যথাযথ কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে জাহাজটি ভাঙা যাবে।

রায়ে জাহাজ আমদানির ক্ষেত্রে বর্জ্যমুক্ত সনদ প্রদানকারী ক্যাশবায়ারের তালিকা তৈরি এবং তাদের কার্যক্রম কঠোর আইনি বিধানের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জাহাজের পতাকা পরিবর্তন রোধে এবং বর্জ্য বিষয়ে সঠিক তথ্য নিশ্চিত করতে ‘ধূসর’ ও ‘কালো’ পতাকাবাহী দেশ থেকে জাহাজ আমদানি নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।