সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভ্রান্তি ছড়ালে জরিমানা: তথ্যমন্ত্রী

হাছান মাহমুদ (ফাইল ছবি)
হাছান মাহমুদ (ফাইল ছবি)

তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভ্রান্তি ছড়ানো হলে উন্নত দেশের মতো বাংলাদেশেও সার্ভিস প্রোভাইডার তথা সেবা প্রদানকারীর বিরুদ্ধে জরিমানার বিধিমালা তৈরি করা হচ্ছে। বিশ্বে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভ্রান্তি ছড়ানো, চরিত্রহনন ও গুজব প্রচার করা এখন বড় সমস্যা। এই সমস্যার মধ্যে বাংলাদেশও আছে।

আজ শুক্রবার দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসের সম্মেলনকক্ষে ‘বিশ্ব টেলিভিশন দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথি হিসেবে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বক্তব্য দেন। বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্র, চট্টগ্রাম টিভি জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন ও টিভি ক্যামেরাপারসন অ্যাসোসিয়েশন যৌথভাবে এই গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে।

তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, সম্প্রচার নীতিমালা ইতিমধ্যে প্রণয়ন করা হয়েছে। এ–সংক্রান্ত আইনও পাস হলে সম্প্রচারমাধ্যমের সাংবাদিকদের আইনি সুরক্ষা দেওয়া সম্ভব হবে। তারপরও সম্প্রচার নীতিমালা যেহেতু বিদ্যমান আছে, এই নীতিমালার আলোকে কীভাবে আইনি সুরক্ষা দেওয়া যায়, সেটি নিয়েও আমরা চিন্তাভাবনা করছি।

আলোচনায় অংশ নিয়ে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, দেশে বেসরকারি টিভির যাত্রা শুরু হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে। এখন ৩৪টি চ্যানেলে সংবাদ ও অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার হচ্ছে। আরও ১১টি সম্প্রচারে আসার অপেক্ষায় আছে। ১১ বছরে বেসরকারি টিভির সংখ্যা সাড়ে তিন গুণ বেড়েছে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এক লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। আসলে টেলিভিশন নতুন প্রজন্মের মনন তৈরিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কৃষ্টি-সংস্কৃতি লালনের পাশাপাশি দেশ–জাতি গঠনে ভূমিকা রাখতে হবে।

টেলিভিশন যেন কারও ব্যক্তিগত বা ব্যবসায়ী স্বার্থে ব্যবহার না হয়, সে বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘শিশু-কিশোরসহ আমাদের পুরো জনগোষ্ঠীর ওপর টেলিভিশনের প্রভাব ব্যাপক। যে মাধ্যমের এত বড় প্রভাব, সেটিকে আমরা জাতিগঠনের বিশাল কাজে লাগাতে পারি।’

টেলিভিশনে কর্মরত বেশির ভাগই মেধাবী বলে মন্তব্য করেন তথ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘টেলিভিশনে কর্মরত সাংবাদিক ভাই-বোনদের আইনি সুরক্ষা দেওয়া প্রয়োজন। যাঁরা ওয়েজ বোর্ডের আওতাধীন প্রিন্ট মাধ্যমে কাজ করেন, তাঁদের জন্য আইনি সুরক্ষা আছে। কিন্তু টেলিভিশনের ক্ষেত্রে আইনি সুরক্ষা এখন পর্যন্ত নেই। সরকার এ বিষয়ে কাজ করছে।’

তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, টিভির সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় বিজ্ঞাপন ভাগ হয়ে যাচ্ছে। আগে ৪০০-৫০০ কোটি টাকার বিজ্ঞাপন বিদেশে চলে যেত, যা বন্ধ করা হয়েছে। সম্প্রচারমাধ্যম পুরোপুরি ডিজিটালাইজড হলে বিদেশেও বিজ্ঞাপন দেখানো যাবে। সে লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার। সামাজিক মাধ্যমে বিজ্ঞাপনে কর আরোপের জন্য এনবিআরকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

আলোচনায় অংশ নিয়ে চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, এখন টিভির গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনেক বেশি। আগামী দিনের টিভির চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে এখনই ভাবতে হবে। বেসরকারি টিভি সরকারি গাইডলাইনে সম্প্রচার হয়। দায়িত্ব পালনে নিরপেক্ষ থাকতে হবে। তাহলে দর্শকের আস্থাহীনতা তৈরি হবে না।

মেয়র নাছির দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে সংবাদ পরিবেশন করতে সাংবাদিকদের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এতে দর্শকের আস্থা বাড়বে। দেশ লাভবান হবে। সাংবাদিকেরা ঐক্যবদ্ধ হলে সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার মধ্য দিয়ে রুটি রুজি নিশ্চিত করা সম্ভব।

বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্রের মহাব্যবস্থাপক নিতাই কুমার ভট্টাচার্যের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নান, বাংলাদেশ টেলিভিশনের উপমহাপরিচালক (বার্তা) অনুপ কুমার খাস্তগীর উপস্থিত ছিলেন।