আতঙ্কে বিক্রেতারা, কুষ্টিয়ায় পেঁয়াজশূন্য বাজার

পেঁয়াজ। ফাইল ছবি
পেঁয়াজ। ফাইল ছবি

প্রশাসনের ভয়ে পেঁয়াজ বিক্রি করছেন না কুষ্টিয়া পৌরবাজারের আড়তদার ও খুচরা বিক্রেতারা। দাম নিয়ে প্রশাসনের ভয়ে আড়তদারেরা পেঁয়াজ আনছেন না। আড়তদারের কাছ থেকে পেঁয়াজ নিয়ে খুচরা বিক্রেতারাও বিক্রি করছেন না। আজ শুক্রবার সরকারি ছুটির দিনে বাজারে ভিড় থাকলেও পেঁয়াজ কিনতে পারেননি অনেক ক্রেতা।

বিক্রেতাদের অভিযোগ, বাজারে পেঁয়াজ একেবারেই কম। তারপরও প্রশাসনের লোকজন এসে দাঁড়িয়ে থাকছেন। কেনা দামই পড়ছে কেজিপ্রতি ১৬১ টাকা। সেখানে ১৭০ টাকায় বিক্রি করলেও প্রশাসনের লোকজন চাপ দিচ্ছেন। তাই ভয়ে কেউ পেঁয়াজ বিক্রি করছেন না।

দুপুরে পৌরবাজার ঘুরে জানা গেল, পৌরবাজারে প্রতিদিনের পেঁয়াজের চাহিদা ৫০ মণের বেশি। সেখানে ৫ থেকে ৬ জন আড়তদার খুচরা বিক্রেতাদের কাছে পেঁয়াজ বিক্রি করেন। শুক্রবার সকালে বাজারের একমাত্র আলী ভান্ডারের আড়তে পেঁয়াজ বিক্রি হয়। ওই আড়তে যৌথভাবে লিয়াকত আলী, শফিউদ্দীন ও আলাউদ্দিন তিনজন ব্যবসা করেন।

আলাউদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, সকাল সাতটায় বাজারের খুচরা বিক্রেতারা তাঁর আড়তে ভিড় করেন। আড়তে মাত্র ৪ বস্তায় মোট ২৪০ কেজি পুরাতন পেঁয়াজ আসে। প্রতি কেজি ১৬১ টাকায় তিনি বিক্রি করছিলেন। ১০টার দিকে একজন নির্বাহী হাকিম এসে ২ হাজার টাকা জরিমানা করেন। কয়েকজন খুচরা বিক্রেতা তাঁর কাছ থেকে পেঁয়াজ কিনে নিয়ে যান।

জরিমানার কাগজ দেখে জানা গেল, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে ৩৮ ধারায় তাঁকে ২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অর্থাৎ আড়তে মূল্যতালিকা টাঙানো ছিল না। তবে আলাউদ্দীন আড়তে টাঙানো তালিকা দেখিয়ে এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘ভোর থেকেই মূল্যতালিকা টাঙানো ছিল। তবে আমার কাছে পেঁয়াজ কেনার চালান দেখতে চেয়েছিলেন, সেটা দেখাতে পারিনি।’

নির্বাহী হাকিমের তৎপরতা দেখে অনেক খুচরা বিক্রেতা পেঁয়াজ বিক্রি বন্ধ করে দেন। এ ছাড়া বাজারে আর কোনো পেঁয়াজ না থাকায় বিক্রিও বন্ধ হয়ে যায়। দুপুর ১২টায় বাজার ঘুরে আরও দেখা গেল, সবজি বিক্রেতাদের কাছে সব ধরনের সবজি, রসুন, আদা থাকলেও পেঁয়াজের ডালা খালি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক খুচরা বিক্রেতা বলেন, প্রশাসনের চাপাচাপির কারণে কেউ ঝুঁকি নিচ্ছে না। পুরাতন পেঁয়াজ ১৭০ টাকা কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছিল। নতুন পেঁয়াজ ১৫০ টাকা কেজি। পেঁয়াজ আমদানিও নেই।

একজন বিক্রেতা বলেন, বৃহস্পতিবার কেজিপ্রতি ১৪০ টাকায় বিক্রি করেছিলেন তিনি। শুক্রবার সকালে যেটুকু পেঁয়াজ পেয়েছিলেন, সেটার দাম পড়ছিল ১৭০ টাকা। বেশি দামে বিক্রি করলে প্রশাসন জরিমানা করতে পারে, এ জন্য ঝুঁকি না নিয়ে বিক্রি করছেন না।

দুপুরে খুচরা বাজার ঘুরে মাত্র একজনের কাছে দুই কেজি পেঁয়াজের দেখা মেলল, সেটার মান ভালো না। বিক্রেতারা বলছেন, বেশি দামে কিনে কোনো বিক্রেতাই কম দামে পেঁয়াজ বিক্রি করতে রাজি হচ্ছে না। বরং পেঁয়াজ বাদ দিয়ে অন্য পণ্য বিক্রি করা ভালো। এতে ঝামেলামুক্ত থাকা যাচ্ছে।

জেলা বাজার মনিটরিং কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, আজ বাজারে পেঁয়াজ খুবই কম ছিল। যেটুকু ছিল সেটা শেষ হয়ে যায়। তবে সমস্যা নেই, সন্ধ্যার মধ্যে বাজারে পেঁয়াজ ঢুকবে।