শর্টসার্কিটের ফুলকি থেকে তুলার গুদামে আগুন

গুদামের পাশে থাকা সড়কে বৈদ্যুতিক খুঁটিগুলো এলোমেলোভাবে স্থাপন করা। বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুন লাগে বলে স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান। ছবি: প্রথম আলো
গুদামের পাশে থাকা সড়কে বৈদ্যুতিক খুঁটিগুলো এলোমেলোভাবে স্থাপন করা। বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুন লাগে বলে স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান। ছবি: প্রথম আলো

গাজীপুরের টঙ্গীতে কয়েকটি তুলার গুদামে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। আজ শনিবার দুপুর ১২টার দিকে টঙ্গীর মাছিমপুর নামাবাজার এলাকার এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিটের প্রায় চার ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। ফায়ার সার্ভিস জানায় এসব গুদামের কোনো অনুমোদন নেই।

স্থানীয় বাসিন্দা ও ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা যায়, দুপুর ১২টার দিকে মাছিমপুর নামাবাজার এলাকার বিএনপি সড়কের একটি তুলার গুদামে আগুন লাগে। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের গুদামে। খবর পেয়ে প্রথমে ঘটনাস্থলে আসে টঙ্গী ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট। আগুনের ভয়াবহতা বাড়ায় যোগ দেয় উত্তরা ও পূর্বাচলের ছয়টি ইউনিট। প্রায় চার ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে তারা।

সরেজমিন দেখা যায়, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে মিলগেট সড়ক ধরে কিছু দূর পশ্চিমে এগোলেই মাছিমপুর নামাবাজার এলাকা। এখান থেকে কয়েক গলি ভেতরে এগোলেই বিএনপি সড়ক। সেখানে গুদামগুলো গড়ে উঠেছে খুব ঘিঞ্জি আকারে। প্রতিটি গুদামের সামনে ও সড়কে এলোমেলোভাবে রাখা আছে তুলার বস্তা ও অন্য জিনিসপত্র। এর মধ্যে সড়কের শুরুতে দুটি এবং শেষের দিকে কয়েকটি গুদামে আগুন জ্বলছে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মী ও গুদামের লোকজন সেই আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ করে যাচ্ছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুর ১২টার দিকে সড়কের শুরুতে গুদাম–সংলগ্ন একটি বৈদ্যুতিক খুঁটিতে শর্টসার্কিট হয়। এ সময় একটি আগুনের ফুলকি এসে পড়ে গুদামের সামনে থাকা তুলার ওপর। মুহূর্তেই তা ছড়িয়ে পড়ে পুরো গুদামে। ঠিক একই সময় সড়কের শেষের দিকে থাকা আরেকটি বৈদ্যুতিক খুঁটিতে একটি বিকট শব্দ হয়। এ সময় সেখান থেকেও একধরনের আগুনের ফুলকি পড়ে তুলার ওপর। এরপর তা ছড়িয়ে আশপাশের গুদামে। তারা জানান, আগুনে প্রায় ২০ থেকে ২৫টি তুলার গুদাম পুড়েছে। আগুন লাগার সময় অধিকাংশ শ্রমিক গুদামের ভেতরেই ছিলেন। পরে তাঁরা দ্রুত বের হয়ে জীবন বাঁচান।

স্থানীয় বাসিন্দা ও একাধিক গুদাম–মালিকদের অভিযোগ, বৈদ্যুতিক খুঁটিগুলোর এলোমেলোভাবে স্থাপন করা হয়েছে পুরো এলাকায়। তারগুলো ঝুলে আছে ঝুঁকিপূর্ণভাবে। ঠিক একই কারণে এর আগেও কয়েকবার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু কেউ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। তা ছাড়া গুদামের আশপাশের সড়কগুলোও ট্রাক-মালিকদের দখলে। এখানে কোনো ঘটনা ঘটলে উদ্ধারকারী দল আসবে, সেই ব্যবস্থাটাও নেই। এসব কারণে ফায়ার সার্ভিসের গাড়িগুলোও ঠিক জায়গামতো পৌঁছাতে পারেনি। নাম না প্রকাশের শর্তে একজন গুদাম–মালিক বলেন, ‘আগুন লাগলে কার কী? ক্ষতি যা হওয়ার আমাদের হয়। এসব দেখার কেউ নেই।’

চিকন গলিতে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢুকতে গিয়ে বেশ বেগ পেতে হয়। ছবি: প্রথম আলো
চিকন গলিতে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢুকতে গিয়ে বেশ বেগ পেতে হয়। ছবি: প্রথম আলো

তবে ফায়ার সার্ভিসের দাবি, এখানে তুলার গোডাউনগুলো গড়ে উঠেছে সম্পূর্ণ ঝুঁকিপূর্ণভাবে। গোডাউনগুলোর নিজস্ব কোনো পানির উৎস নেই, ফায়ার ফাইটিং সিস্টেম ও অন্য যে আনুষঙ্গিক বিষয়গুলো থাকার দরকার, তার কিছুই নেই। তারা কোনো নিয়মও মানে না। এমনকি তারা তুলার গুদাম করার আগে ফায়ার সার্ভিস থেকে অনুমতিও নেয়নি। তাহলে গুদামগুলো এত দিন চলছে কীভাবে, জানতে চাইলে গাজীপুর-২–এর জোন কমান্ডার মো. মানিকুজ্জমান বলেন, ‘আমরা তাদের বারবার নিষেধ করেছি,নোটিশ দিয়েছি। কিন্তু তারা এসবের কিছুই মানছে না। তাই সব সময় এই মিলগেট এলাকা নিয়ে চিন্তাই থাকি।’

এদিকে বেলা ৩টা ৪০ মিনিটে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে জানান টঙ্গী ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড ডিফেন্স অফিসের সিনিয়র স্টেশনমাস্টার মো. আতিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আগুনের ভয়াবহতা দেখে আমরা অন্য ইউনিটগুলো যোগ করি। আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তদন্ত সাপেক্ষে জানা যাবে।’