পরীক্ষার হলে খাতা দেখতে না দেওয়ায় কুপিয়ে জখম

হামলায় আহত এসএসসি পরীক্ষার্থী তারেক সরদার (১৬)
হামলায় আহত এসএসসি পরীক্ষার্থী তারেক সরদার (১৬)

মাদারীপুরের কালকিনিতে তারেক সরদার (১৬) নামের এক এসএসসি পরীক্ষার্থীকে কুপিয়ে জখম করেছে কয়েকজন শিক্ষার্থী। পরীক্ষার হলে খাতা দেখতে না দেওয়ার জেরে তারেককে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গুরুতর অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে পাঠিয়েছেন চিকিৎসক।

আজ রোববার দুপুর ১২টায় কালকিনি উপজেলার বাঁশগাড়ি ইউনিয়নের খাশেরহাট সৈয়দ আবুল হোসেন স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে এ ঘটনা ঘটে। আহত তারেক লক্ষ্মীপুর গ্রামের জাকির সরদারের ছেলে এবং লক্ষ্মীপুর ইউনাইটেড উচ্চবিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, রোববার সকাল ১০টায় উপজেলার খাশেরহাট সৈয়দ আবুল হোসেন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে এসএসসি ব্যবহারিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। বিজ্ঞান বিভাগের উচ্চতর গণিত বিষয়ে ব্যবহারিক পরীক্ষায় অংশ নেয় তারেক। পরীক্ষা শেষে তারেক ওই কেন্দ্রের মাঠের দক্ষিণ পাশে সহপাঠীদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে কথা বলছিল। এ সময় কয়েকজন পরীক্ষার্থীর সঙ্গে তারেকের বাগবিতণ্ডা বাধে। একপর্যায়ে কয়েকজন শিক্ষার্থী ধারালো অস্ত্র দিয়ে তারেককে এলোপাতাড়ি কোপাতে শুরু করে। চিৎকার শুনে স্থানীয় লোকজন ও কেন্দ্রে দায়িত্বরত শিক্ষকেরা এগিয়ে এলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। তারেককে উদ্ধার করে কালকিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় বেলা দুইটার দিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে পাঠানো হয়।

কালকিনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নাসিরউদ্দিন মৃধা প্রথম আলোকে বলেন, খবর শুনেই পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। ওই পরীক্ষাকেন্দ্রের শিক্ষক ও পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পরীক্ষার হলে খাতা দেখতে না দেওয়ায় তারেককে কয়েকজন পরীক্ষার্থী কুপিয়ে জখম করে। পুলিশের একটি দল অভিযুক্ত ব্যক্তিদের আটক করতে অভিযানে নেমেছে। এ ছাড়া এ ঘটনায় থানায় একটি মামলা হচ্ছে।

তারেকের সহপাঠীরা জানায়, এসএসসি পরীক্ষা চলাকালে দুজন শিক্ষার্থী তারেককে বিরক্ত করত। তারা তার খাতা দেখে লিখতে চাইত। খাতা না দেখালে হুমকি দিত। মাঝে কয়েকটি পরীক্ষায় কোনো কিছু না দেখানোয় তারা তারেকের ওপর ক্ষিপ্ত হয়। এর জের ধরে আজ ব্যবহারিক পরীক্ষা শেষে ওই দুই শিক্ষার্থীসহ কয়েকজন মিলে তারেকের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়।

কালকিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কর্মকর্তা অভিজিৎ কুমার গোস্বামী প্রথম আলোকে বলেন, ‘তারেকের বাঁ হাত ও পায়ে ধারালো অস্ত্রের গুরুতর আঘাত রয়েছে। প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। আমরা তিনজন চিকিৎসক বোড গঠন করে তার চিকিৎসা দিয়েছি। তার অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক থাকায় আমরা তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে রেফার করেছি।’

আহত পরীক্ষার্থীর বাবা জাকির সরদার বলেন, ‘তারেককে পরীক্ষার হলে কয়েকজন ছাত্র বিরক্ত করে, খাতা না দেখালে হুমকি দেয়, এসব কথা ওর মাকে আগেও বলেছে। কিন্তু এর জন্য যে আমার ছেলেকে মেরে ফেলতে এ রকম হামলা করবে, তা আমরা কল্পনাও করতে পারিনি। ওরা আমার ছেলের হাত-পায়ের রগ কেটে দিয়েছে। আমি ওদের বিচার চাই।’

অভিযুক্ত এক ছাত্রের চাচা বলেন, পরীক্ষাকেন্দ্রে ছাত্ররা মারামারি করেছে। এর সঙ্গে তাঁর ভাতিজারা যুক্ত নন।

খাশেরহাট সৈয়দ আবুল হোসেন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ও কেন্দ্রসচিব সাইদুল বাশার প্রথম আলোকে বলেন, ‘হামলার পর ওই ছেলেটা দৌড়ে বাঁচাও বাঁচাও বলে লাইব্রেরির দিকে চলে আসে। পরে আমরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। তবে কেন তারেকের ওপর হামলা করা হলো, তা আমার জানা নেই। পুলিশের কাছে প্রাথমিক ঘটনা সব বলেছি। এ ঘটনা তদন্ত করে সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানিয়ে আমরা থানায় একটি লিখিত ডায়েরি করব।’