ইতিহাসে পৃষ্ঠা যুক্ত হবে কোভিড ঘিরে

>

করোনাভাইরাস পাল্টে দিয়েছে আমাদের জীবনের বাস্তবতা। দেশ-বিদেশের পাঠকেরা এখানে লিখছেন তাঁদের এ সময়ের আনন্দ-বেদনাভরা দিনযাপনের মানবিক কাহিনি। আপনিও লিখুন। পাঠকের আরও লেখা দেখুন প্রথম আলো অনলাইনে। লেখা পাঠানোর ঠিকানা: [email protected]

মনে আছে সে দিনটার কথা। ৮ মার্চ ২০২০, রোববার।

নতুন করে প্রথম তিনজন করোনা রোগী ধরা পড়ায় আতঙ্কিত হয়েছিল অনেক মানুষ। সবাই ছুটেছিল মাস্ক আর হ্যান্ডওয়াশের পেছনে। একদল সাধু ব্যবসায়ীও ঝোপ বুঝে কোপ মেরেছিল। অনেকে আবার রাস্তায় ফ্রি মাস্কের সঙ্গে চেতনানাশক মিশিয়ে লুটে নিয়েছে অনেককেই।

সকালবেলা বন্ধুর জন্য অপেক্ষা করেছিলাম আজিমপুর এতিমখানার সামনে। ক্যাম্পাসে যাওয়ার বাস ভাড়াটা অবশ্য সেদিন আমার দেওয়া লাগেনি। ক্যানটিনে বসিয়ে শিঙাড়া খাওয়ানোর বিলটাও দিয়ে দিল হলে থাকা এক বন্ধু। ক্যারম খেলে দুর্ভাগ্যবশত গেম খেলাম নিল বোর্ডে। স্যারদের সঙ্গে ক্লাসটাও করলাম প্রতিদিনের মতো চমৎকারভাবে। কিন্তু কখনো ভাবিনি সেদিনটাই হবে ক্যাম্পাসের জীবনের শেষ দিন। বন্ধুদের সঙ্গে শিঙাড়া-সমুচা খাওয়ার মতো আড্ডা দেওয়ার শেষ দিন।

লকডাউন ঘোষণার পর বন্ধুরাও চলে গেল হল ছেড়ে। নীলক্ষেত নিউমার্কেট ফিরে পেল হারানো সৌন্দর্য। কিছু তরুণ-তরুণীকে দেখা গেছে নিজ উদ্যোগে খাবার দিচ্ছে কুকুরগুলোকে। প্রতিনিয়ত শোনা যাচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ছে অনেকে। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা নেমে এসেছে অনেক নিচে। ক্ষুধার যন্ত্রণায় চারদিকে দেখা যাচ্ছে মানুষের হাহাকার। সরকারও কমতি রাখেনি যথাসাধ্য চেষ্টার।

হ্যাঁ, এই পৃথিবী একদিন সুস্থ হবে। ব্যস্ত নগরীগুলো আবার ব্যস্ত হবে তার হারানো ব্যস্ততা নিয়ে। বিশ্বকাপের দিনগুলোতে ক্রিকেট ফুটবল স্টেডিয়ামের মতো গাড়িগুলো আবার জড়ো হবে শহরের প্রতিটি রাস্তায়। রিকশা নগরীর জ্যামে পড়ে থাকবে আবারও ঘণ্টার পর ঘণ্টা। ক্যাম্পাসে কাটানো সেদিনগুলো আবারও আসবে। মানুষও একসময়ে ভুলে যাবে কোভিড-১৯-এ মারা যাওয়া তার প্রিয় মানুষটিকে।

হ্যাঁ, ইতিহাসের বইয়ে আরও কিছু পৃষ্ঠা যুক্ত হবে কোভিড-১৯ ঘিরে। সে রকম একটা দিন আসবেই। হ্যাঁ, সে রকম একটা দিনকে আসতেই হবে।


*দ্বিতীয় বর্ষ, ব্যবস্থাপনা বিভাগ, ঢাকা কলেজ। [email protected]