ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে শ্রমিকদের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার ইব্রাহিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের নেতা আবু মোছার বিরুদ্ধে মাটি কাটার প্রকল্পের হতদরিদ্র শ্রমিকদের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। ২ জুন ওই প্রকল্পের পাঁচজন ভুক্তভোগী শ্রমিক জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খানের কাছে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার কথা জানিয়েছে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়।

ওই প্রকল্পের তালিকায় নাম থাকা পাঁচজন ভুক্তভোগী শ্রমিক উপজেলার ইব্রাহিমপুর ইউনিয়নের জাফরপুর গ্রামের মো. আলাউদ্দিন, আক্তার হোসেন, রেজাউল করিম, আবুল হোসেন ও এরশাদ মিয়া এই অভিযোগ দেন। ইউপি চেয়ারম্যান আবু মুছা একই সঙ্গে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

ইব্রাহিমপুর ইউপি সচিব আবু জামাল জানান, ২০১৯-২০ অর্থবছরের কর্মসৃজন কর্মসূচির আওতায় জাফরপুর গ্রামে মাটি কাটার কাজ শুরু করেন হতদরিদ্র শ্রমিকেরা। গত বছরের অক্টোবর মাসে মাটি কাটা কাজ করেন। কাজের বাজেট আসে গত মার্চ মাসে।

জেলা প্রশাসকের কাছে দেওয়া লিখিত অভিযোগ থেকে জানা গেছে, গত বছরের নভেম্বর ও ডিসেম্বর এবং চলতি বছরের এপ্রিল-মে মাসে জাফরপুর গ্রামে ৪০ দিনের কমর্সূচিতে মাটি কাটার কাজে অংশ নেন ৯৪ জন শ্রমিক। তাঁরা সপ্তাহে পাঁচ দিন করে কাজ করেন। প্রতিদিন প্রত্যেক শ্রমিক ২০০ টাকা করে ৪০ দিনে ৮ হাজার টাকা করে মজুরি পাওয়ার কথা, যার মোট পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় সাড়ে সাত লাখ টাকা। কিন্তু ওই ৯৪ জন শ্রমিকের অনেকেই প্রকল্পের টাকা পাননি বলে দাবি করেন।

শ্রমিকেরা জানান, মাটি কাটার টাকা উত্তোলনের জন্য তাঁদের উপজেলার ভোলাচং জনতা ব্যাংক শাখায় হিসাব খোলা ছিল। ইউপি চেয়ারম্যানের কথায় উপজেলার ইব্রাহিমপুর ব্যাংক এশিয়া লিমিটেডের এজেন্ট ব্যাংকিং শাখায় ৯৪ জন শ্রমিক নতুন করে ব্যাংক হিসাব খোলেন। কিন্তু কাজ শেষে অনেক শ্রমিক তাঁদের মজুরি এখনো পাননি।

শ্রমিকদের অভিযোগ, গত ৬ এপ্রিল ৮ হাজার টাকা করে জমা হওয়ার বার্তা শ্রমিকদের মুঠোফোনে আসে। পরদিন সকালে চেয়ারম্যান ও ব্যাংক কর্মচারীরা তাঁদের বাড়িতে গিয়ে ডিজিটাল মেশিনে আঙুলের ছাপ নিয়ে যান। কয়েক দিনের মধ্যে টাকা পাওয়ার আশ্বাস দেন ইউপি চেয়ারম্যান। আঙুলের ছাপ দেওয়ার পরদিনই ওই টাকা উত্তোলন করা হয়েছে বলে অনেকের মুঠোফোনে আরেকটি বার্তা যায়। কিন্তু তালিকায় নাম থাকা কেউ টাকা পাননি।

শ্রমিক আলাউদ্দিন, আক্তার মিয়া, রেজাউল করিম, আবুল হোসেন, এরশাদ মিয়া জানান, মাটি কাটার শ্রমিকদের তালিকায় চেয়ারম্যানের আপন চাচাতো ভাই দুবাইপ্রবাসী হাবিবুর রহমানের স্ত্রী বিউটি আক্তার, ইরাকপ্রবাসী দেলোয়ার হোসেন, ওমানপ্রবাসী আল-আমিনের নাম ছিল। চেয়ারম্যানের স্বজন কুয়েতপ্রবাসী মো. জিলানী এবং ইউনিয়নের ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্য আসমা বেগমের স্বামী ব্যবসায়ী শাহিন মিয়াসহ কয়েকজন বিত্তশালীর নামও ছিল।

ইউনিয়ন চেয়ারম্যান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে আঙুলের ছাপ ছাড়া একজনের টাকা অন্যজন কোনোভাবেই তুলতে পারেন না। এসব তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। পরিষদের পাশে ব্যাংক এশিয়া লিমিটেডের এজেন্ট ব্যাংকিং থাকায় সবার সুবিধার্থে শ্রমিকদের নতুন করে হিসাব খোলার কথা বলেছেন। তাঁকে হেয়প্রতিপন্ন করতে এসব মিথ্যা অভিযোগ সাজানো হয়েছে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আবু বকর সিদ্দিক প্রথম আলোকে জানান, এপ্রিল-মে মাসের শ্রমিকদের মাটি কাটার কর্মসূচির টাকা আত্মসাতের বিষয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। একজন শ্রমিকের প্রতিদিন ২০০ টাকা করে পাওয়ার কথা ছিল। বৃহস্পতিবার সরেজমিন ভুক্তভোগী, ব্যাংকের এজেন্ট, ইউপি সচিবদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মাসুম জানান, বিভিন্ন মাধ্যমে অভিযোগের বিষয়টি শুনেছেন। তবে অনুলিপি এখনো হাতে পাননি। দিনভর করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলার কাজে ব্যস্ত ছিলেন, কার্যালয়ে পৌঁছেছে কি না জানেন না। অভিযোগের অনুলিপি পাওয়ার পর তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।