বেঙ্গল টাইগারকে পান্ডার উপহার

সুরক্ষাসামগ্রীর সঙ্গে চীনা শিশুদের আঁকা ‘বেঙ্গল টাইগারকে পান্ডার উপহার’ শীর্ষক এ চিত্রকর্মটি পাঠানো হয়। ছবি: সংগৃহীত
সুরক্ষাসামগ্রীর সঙ্গে চীনা শিশুদের আঁকা ‘বেঙ্গল টাইগারকে পান্ডার উপহার’ শীর্ষক এ চিত্রকর্মটি পাঠানো হয়। ছবি: সংগৃহীত

শিশু হাতে আঁকা চিত্রকর্ম। একদিকে বাংলাদেশ, অন্যদিকে চীনের জাতীয় পশু—বাঘ ও পান্ডার ছবি। চিত্রকর্মের ভাবনা—এই দুই প্রাণী লড়াই করে বিনাশ করবে করোনাভাইরাসকে। এমন আশাবাদ ব্যক্ত করা চিত্রকর্মটি এসেছে চীন থেকে। ৮৫ কার্টন ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জামের (পিপিই) সঙ্গে।

‘বেঙ্গল টাইগারকে পান্ডার উপহার’ শিরোনামে নদী ও পানি অধিকারবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংগঠন ‘ওয়াটারকিপার অ্যালায়েন্স’ থেকে এটির বাংলাদেশ শাখার সদস্যদের কাছে সামগ্রীগুলো পাঠানো হয়েছে। গত ১৩ মে এগুলো বাংলাদেশে পৌঁছায়। এরপর ঢাকা, খুলনা, সিলেট ও হবিগঞ্জে বিতরণ করা হয়। সর্বশেষ কাল রোববার সুনামগঞ্জে বিতরণের মধ্য দিয়ে এ কার্যক্রম শেষ হবে।

সংগঠনটির বাংলাদেশ শাখা সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশে যখন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়, তখন ওয়াটারকিপার অ্যালায়েন্সের চীনা অঞ্চলের সমন্বয়ক হাও জিংয়ের সঙ্গে করোনা মোকাবিলায় অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন এ দেশের সদস্যরা। চীনে ওয়াটারকিপার অ্যালায়েন্সের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন বাংলাদেশের শরীফ জামিল। তিনি বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক পদে আছেন। ওয়াটারকিপার অ্যালায়েন্সের চায়নার সদস্যদের পরামর্শ ও সহযোগিতা কামনা করলে হাও জিং নিজেদের অভিজ্ঞতা বিনিময়ের পাশাপাশি কীভাবে সাহায্য করতে পারেন, তা জানতে চান। শরীফ জামিল তখন বাংলাদেশে পিপিইসহ স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রীর সংকটের বিষয়টি জানান।

হাও জিং পরবর্তী সময়ে ওয়াটারকিপার অ্যালায়েন্সের চায়নার প্রতিনিধিদের সঙ্গে মিলে বাংলাদেশের জন্য স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উপহার হিসেবে দেওয়ার উদ্যোগ নেন। এ উদ্যোগে একাত্ম হয় চীনের কুয়ানতাং রিভার ওয়াটারকিপার, গ্রিনঝেজাং রিভার ওয়াটারকিপারসহ দেশটির কয়েকটি বেসরকারি সংস্থা। বাংলাদেশের জন্য তিন হাজারটি পিপিই, এক হাজার সুরক্ষা গগলজ (চশমা) ও ১৮ হাজার মাস্ক ৮২টি কার্টনে করে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। এই সুরক্ষাসামগ্রীর সঙ্গে চীনের হাংঝু ঝেজাং প্রাথমিক বিদ্যালয়ের রিভার এঞ্জেলখ্যাত শিশুকিশোরেরা বাংলাদেশের প্রতি চীনের সহমর্মিতার স্মারক হিসেবে বাঘ ও পান্ডার চিত্রকর্ম আঁকে।

চীনের উপহারের সঙ্গে শিশুদের শুভ কামনার চিত্রকর্মে বাংলাদেশি শিশুদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ। ছবি: সংগৃহীত
চীনের উপহারের সঙ্গে শিশুদের শুভ কামনার চিত্রকর্মে বাংলাদেশি শিশুদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ। ছবি: সংগৃহীত

চীন ও বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার সঙ্গে ‘বেঙ্গল টাইগারকে পান্ডার উপহার’ শীর্ষক চিত্রকর্ম দেখিয়ে ই-মেইলে শুভেচ্ছা বিনিময় হয়। কৃতজ্ঞতাস্বরূপ বাংলাদেশ থেকে চীন ও বাংলাদেশের জাতীয় পতাকাসংবলিত বাংলাদেশের শিশুদের আঁকা আরেকটি চিত্রকর্ম পাঠানো হয়। এই ছবি বিনিময়ের পর পাঠানো হয় সুরক্ষাসামগ্রী।

শরীফ জামিল জানান, সুরক্ষাসামগ্রী পাঠাতে অনেক বিড়ম্বনা সইতে হয়। যুক্তরাষ্ট্রের সাভানা রিভার ওয়াটারকিপারের সহায়তায় চীন থেকে বাংলাদেশে পাঠানো হয়। এরপর বাপার পক্ষ থেকে বাংলাদেশ রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে (আইইডিসিআর) যোগাযোগ করে তাঁদের মাধ্যমে ১৩ মে বাংলাদেশে পৌঁছায় এই উপহার। বাংলাদেশের চারটি রিভার ওয়াটারকিপার এলাকা ঢাকায় বুড়িগঙ্গা রিভার ওয়াটারকিপার, খুলনার পশুর রিভার ওয়াটারকিপার, হবিগঞ্জের খোয়াই রিভার ওয়াটারকিপার ও সিলেটে সুরমা রিভার ওয়াটারকিপারে এগুলো বিতরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়।

ঢাকা ও খুলনার পর শেষভাগে বিতরণ করা হয় সিলেট বিভাগে। হাসপাতাল ছাড়াও কাস্টমস বিভাগ, ব্যক্তিগত উদ্যোগে যাঁরা করোনা পরিস্থিতিতে ত্রাণসহ নানা সেবামূলক কাজে নিয়োজিত, তাঁদের হাতেও তুলে দেওয়া হয়েছে সুরক্ষাসামগ্রী। ১৮ থেকে ২৫ মে পর্যন্ত এক সপ্তাহ সিলেট অঞ্চলে সুরক্ষাসামগ্রী বিতরণের পর কাল রোববার শেষ পর্যায়ে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে পিপিই বিতরণ করার মাধ্যমে শেষ হবে এ কর্মসূচি।

সিলেটে করোনাযোদ্ধাদের মধ্যে চীনের সুরক্ষাসামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। ছবি: প্রথম আলো
সিলেটে করোনাযোদ্ধাদের মধ্যে চীনের সুরক্ষাসামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। ছবি: প্রথম আলো

সিলেটে ওয়াটারকিপার অ্যালায়েন্স সংগঠক ও বাপার কেন্দ্রীয় সদস্য আবদুল করিম চৌধুরী বলেন, ‘এই সুরক্ষাসামগ্রী খুবই উন্নতমানের। চীন থেকে করোনা ছড়িয়েছে সারা বিশ্বে। তাই সুরক্ষাসামগ্রী বিতরণকালে চীনের শিশুদের আঁকা পান্ডা ও বেঙ্গল টাইগার চিত্রকর্মটিও আলোচনায় এসেছে। পান্ডার পর এবার বাঘ মোকাবিলায় করছে করোনা। এ যেন বাংলাদেশের প্রতি তাঁদের অকৃত্রিম ভালোবাসা। বিতরণকালে এই আবেগটিই প্রকাশ পেয়েছে বেশি।’

সংগঠনের সেখানকার সদস্যদের সংগ্রহ করা সুরক্ষাসামগ্রীর সঙ্গে শুভেচ্ছার স্মারক হিসেবে চিত্রকর্মটি করেছে প্রাথমিক স্কুলপড়ুয়া চীনা শিশুরা। করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতে চীন থেকে এভাবেই স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী ‘উপহার’ হিসেবে পেয়ে বাংলাদেশের চারটি নদী অববাহিকা এলাকাগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে।