ধরমপাশার দুটি খাদ্যগুদামে সাত ভাগের এক ভাগও ধান সংগ্রহ হয়নি

সুনামগঞ্জের ধরমপাশা উপজেলার মধ্যনগর ও ধরমপাশা—এই দুটি সরকারি খাদ্যগুদামে সরকারি ন্যায্যমূল্যে কৃষকদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ কার্যক্রম চলছে ধীরগতিতে। এই দুটি গুদামে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ৫ হাজার ১১১ টন। সময়সীমা আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। ২০ মে থেকে ধান সংগ্রহের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। অথচ গত দেড় মাসে এখানে ধান সংগ্রহ করা হয়েছে মাত্র ৭০৫ টন, যা লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ১৩ দশমিক ৭৯ শতাংশ বা সাত ভাগের এক ভাগের কম। সময়সীমা প্রায় অর্ধেক ফুরিয়ে এই পরিমাণ ধান সংগ্রহ হওয়ায় বাকি অর্ধেক সময়ে ৮৬ দশমিক ২০ শতাংশ ধান কীভাবে সংগ্রহ হবে, তা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

এদিকে কৃষকেরা ধানের ভালো দাম পাওয়ায় খাদ্যগুদামে ধান নিয়ে আসতে তাঁরা আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। এতে ধান সংগ্রহ কার্যক্রমে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে উপজেলার মধ্যনগর ও ধরমপাশা এই দুটি সরকারি খাদ্যগুদামে সরকারি ন্যায্যমূল্যে ধান সংগ্রহের জন্য ৫ হাজার ১১১ টন ধান বরাদ্দ পাওয়া যায়। বরাদ্দ বিভাজন করে মধ্যনগর খাদ্যগুদামে ২ হাজার ৬০২ টন ও ধরমপাশা খাদ্যগুদামে ২ হাজার ৫০৯ টন ধান সংগ্রহ করার জন্য সিদ্ধান্ত হয়। প্রতি কেজি ধান ২৬ টাকা ও প্রতি মণ ধান ১ হাজার ৪০ টাকা দামে উন্মুক্ত লটারিতে বিজয়ী তালিকাভুক্ত প্রত্যেক কৃষক সর্বোচ্চ এক টন করে ধান বিক্রয় করতে পারবেন।

চলতি বছরের ২০ মে থেকে ওই দুটি খাদ্যগুদামে ধান সংগ্রহ শুরু হয় এবং তা চলবে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। অথচ আজ শনিবার পর্যন্ত উপজেলার মধ্যনগর খাদ্যগুদামে ৫৫৫ টন ও ধরমপাশা খাদ্যগুদামে ১৫০ টন ধান সংগ্রহ করা হয়েছে।

উপজেলার মধ্যনগর বাজারের বাসিন্দা কৃষক আলাল উদ্দিন বলেন, একবার রোদে ধান শুকিয়ে বাজারে ব্যবসায়ীদের কাছে প্রতি মণ ধান ৯৪০ থেকে ৯৬৫ টাকা দামে কৃষকেরা সহজেই বিক্রি করতে পারছেন। খাদ্যগুদামে এই ধান বিক্রি করতে হলে তিনবার রোদে শুকাতে হতো। গুদামে ধান নিয়ে গেলে শ্রমিক খরচসহ আরও নানা দিক দেখতে হয়। বাজারে দাম ভালো পাওয়ায় গুদামে ধান বিক্রিতে এখানকার কৃষকদের তেমন আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না।

উপজেলার মধ্যনগর বাজারের ব্যবসায়ী মধ্যনগর ধান–চাল আড়ত কল্যাণ সমিতির সভাপতি জহিরুল হক বলেন, করোনাভাইরাসের প্রভাবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ধানের দাম বেড়েছে। তা ছাড়া বাজারে চালের দামও কিছুটা বেশি। একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী রহস্যজনক কারণে হাটবাজারে ধানের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। ফলে কৃষকেরা খাদ্যগুদামে ধান বিক্রি না করে তা হাটবাজারের ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করছেন।

ধরমপাশা খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসিএলএসডি) সুজন রায় ও মধ্যনগর খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসিএলএসডি) অবিনাশ দাস বলেন, ‘এ উপজেলার হাটবাজারগুলোতে ধানের দাম ভালো পাওয়ায় কৃষকদের এই দুটি খাদ্যগুদামে সরকারি নির্ধারিত মূল্যে ধান বিক্রি করা নিয়ে তেমন আগ্রহ নেই। এ অবস্থায় ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে আমরা সব রকম চেষ্টা করছি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অবহিত রয়েছেন।’

ধরমপাশা উপজেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রকের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা তাহিরপুর উপজেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক বি এম মুশফিকুর রহমান বলেন, ‘হাটবাজারগুলোতে তুলনামূলক ধানের দাম কিছুটা বেশি। পরিবহন খরচ বেশি হওয়ার কারণে এক টন করে ধান গুদামে নিয়ে আসার জন্য কৃষকেরা তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। তাই সম্প্রতি জেলা প্রশাসক মহোদয়ের মৌখিক নির্দেশে তালিকাভুক্ত প্রত্যক কৃষক সর্বোচ্চ তিন টন করে ধান গুদামে বিক্রি করতে পারবেন। ১ জুলাই থেকে এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ইউএনও স্যারের সঙ্গে কথা বলেছি। এ অবস্থায় ধান সংগ্রহের গতি ফিরে আসবে বলে আশা করছি।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মুনতাসির হাসান প্রথম আলোকে বলেন, লটারিতে বিজয়ী তালিকাভুক্ত প্রকৃত কৃষকদের কাছ থেকে সরকারি নির্ধারিত মূল্যে ধান ক্রয় করে এ উপজেলায় ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। শিগগিরই এ নিয়ে সভা ডাকা হবে।