চাকরি হয়নি, তাই রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ

ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শাফীয়ার রহমানের বিরুদ্ধে অনিয়মের নানা অভিযোগ তুলে তাঁর বদলি দাবি করেছেন মুক্তিযোদ্ধারা। আজ মঙ্গলবার সকালে বালিয়াডাঙ্গী চৌরাস্তায় মানববন্ধন করে এ দাবি জানানো হয়।

উপজেলা কৃষি বিভাগের জিপ গাড়িটির জন্য চালক পদে নিজের গাড়ির চালক স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা বসিরউদ্দিনের ছেলে মিজানুর রহমানের নাম সুপারিশ করেছিলেন উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। স্থানীয় সাংসদও সুপারিশ করেন। কিন্তু মিজানুরের চাকরি না হওয়ায় মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়। তাঁরা সংগঠিত হয়ে আশপাশের উপজেলার কৃষি বিভাগ থেকে বিভিন্ন প্রদর্শনী প্লটের বরাদ্দের তথ্য সংগ্রহ করে, তা যাচাই করে কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনিয়ম খুঁজে পান বলে দাবি করেন।

ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধনে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবদুস সোবহান, মকসেদ আলী, মীরানাথ, তোয়াব আলী প্রমুখ বক্তব্য দেন।

মুক্তিযোদ্ধারা দাবি করেন, সাংগঠনিক কাজে রানীশংকৈল ও হরিপুর উপজেলা ভ্রমণের সময় তাঁরা কৃষি কার্যালয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সে সময় তাঁরা কৃষকপর্যায়ে চলমান বিভিন্ন প্রকল্পের বরাদ্দের তথ্য নেন। পরে তাঁরা সেই তথ্য বালিয়াডাঙ্গীর কৃষকদের দেওয়া বরাদ্দের সঙ্গে মিলিয়ে দেখেন। তথ্য মেলাতে গিয়ে বালিয়াডাঙ্গীতে অনিয়মের তথ্য উঠে আসে।

মুক্তিযোদ্ধারা অভিযোগ করেন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৫০ শতক জমির বিপরীতে মাল্টা প্রদর্শনীতে এ দুই উপজেলার কৃষি বিভাগ যে পরিমাণ চুন, বালাইনাশক ও মালচিং সরবরাহ করেছে; তার মূল্য দাঁড়ায় ২৬ হাজার ৫০০ টাকা। আর বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার কৃষকদের দেওয়া উপকরণের মূল্য হিসাব করলে হয় ১৬ হাজার ৬০০ টাকা। প্রতিটি প্রদর্শনীতে কম দেওয়া হয়েছে প্রায় ১০ হাজার টাকা। উপকরণ সরবরাহের রেজিস্ট্রারে উপকরণের পরিমাণ উল্লেখ না করেই কৃষকের সই নেওয়া হয়েছে। প্রদর্শনীতে নিম্নমানের সাইনবোর্ড সরবরাহ করা হয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে রানীশংকৈল ও হরিপুর উপজেলায় ৬০টি করে লেবুজাতীয় ফসলের প্রদর্শনী বাস্তবায়ন করা হলেও বালিযাডাঙ্গীতে কোনো প্রদর্শনী বাস্তবায়ন করা হয়নি। প্রদর্শনীর বরাদ্দের টাকা আত্মসাৎ করেছেন কৃষি কর্মকর্তা। এ ছাড়া ভুট্টার ৯০টি, গমের ৩০টি ও বেগুনের ২০টি প্রদর্শনী প্লটে বরাদ্দের পরিমাণের চেয়ে সার কম সরবরাহ করে এক লাখ টাকার ওপরে আত্মসাৎ করেছেন তিনি।

মুক্তিযোদ্ধারা আরও অভিযোগ করেন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রানীশংকৈল ও হরিপুর উপজেলায় বাস্তবায়িত প্রদর্শনীর ১০ শতাংশ মাঠ দিবস পালন করা হয়। প্রতিটি মাঠ দিবসে ১০ হাজার টাকা বরাদ্দ রয়েছে। কিন্তু বালিয়াডাঙ্গীতে কোনো মাঠ দিবস আয়োজন করা হয়নি। গত ৬ জুন বোরো ব্লক প্রদর্শনীর মাঠ দিবস করা হলে অংশগ্রহণ করা কৃষকদের কোনো ভাতা দেওয়া হয়নি। তাঁরা আরও বলেন, ‘উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ উপজেলায় পাঁচ বছর ধরে চাকরি করছেন। এ সময়ে তিনি নানা অনিয়মের মধ্যে জড়িয়ে পড়েছেন। তাঁর কাছে কৃষি ও কৃষক নিরাপদ নন। তাই তাঁর বদলি চাইছি।’

কৃষি বিভাগ ও বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২৯ জুন বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা কৃষি বিভাগ একটি জিপ গাড়ি বরাদ্দ পায়। ওই গাড়ির চালকের জন্য নিজের গাড়ির চালক মুক্তিযোদ্ধা বসিরউদ্দিনের ছেলে মিজানুরের নাম সুপারিশ করেন উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সফিকুল ইসলাম। মিজানুরের চাকরির জন্য সাংসদ দবিরুল ইসলামও একটি সুপারিশপত্র (ডিও) দেন। কিন্তু মিজানুরের চাকরি না হওয়ায় মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়। কৃষি কর্মকর্তার বিচার চেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে স্মারকলিপিও দিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধারা।

মানববন্ধনে অংশ নেওয়া এক মুক্তিযোদ্ধা বলেন, ‘আমাদের এক মুক্তিযোদ্ধার ছেলের চাকরির জন্য আমরা সুপারিশ করেছিলাম। কিন্তু কৃষি কর্মকর্তা তাঁকে চাকরি দিলেন না। এ কারণে আমরা তাঁর অনিয়মের তথ্য খুঁজে বের করেছি।’

আরেক মুক্তিযোদ্ধা বলেন, ‘মিজানুরকে চাকরি না দিয়ে কৃষি কর্মকর্তা আমাদের অসম্মান করেছেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁর অনিয়মের প্রতিবাদে আন্দোলনে নেমেছি।’

মুঠোফোন বন্ধ পাওয়ায় এ বিষয়ে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবদুস সোবহানের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

কৃষি কর্মকর্তা শাফীয়ার রহমান সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আউটসোর্সিংয়ের একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে গাড়িচালক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ওই বীর মুক্তিযোদ্ধার ছেলেকে চাকরি দেওয়ার ক্ষমতা আমার ছিল না। তবু তাঁরা বিষয়টি না বুঝে আমার ওপর দোষ চাপাচ্ছেন। আর প্রকল্প বাস্তবায়নের যে অভিযোগ করা হচ্ছে, সেটাও ঠিক নয়। মিজানুরের চাকরি হলে আমার নামে এসব অভিযোগ উঠত না। আমি বরাদ্দের চেয়ে কৃষকদের বেশি উপকরণ সরবরাহ করেছি। মাঠ যাচাই করলেই আপনারা তার প্রমাণ পাবেন।’

ইউএনও মো. খায়রুল আলম জানান, কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ এনে মুক্তিযোদ্ধারা একটি স্মারকলিপি দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে তিনি বিব্রত বোধ করছেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।