রাজশাহী মেডিকেলে লোকবলের অভাবে পড়ে আছে আইসিইউ শয্যা

লোকবলের অভাবে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) অর্ধেক শয্যা পড়ে আছে। যে ১০টি শয্যা চালু রাখা হয়েছে, সেখানে দায়িত্বরত একটি দলের সাতজন নার্স ইতিমধ্যে করোনা পজিটিভ হয়েছেন। আর ওয়ার্ডবয়, সুইপারসহ চারজনের মধ্যে তিনজনই করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এই অবস্থায় আইসিইউ সেবা বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। অথচ আইসিইউয়ের জন্য হাসপাতালের রোগীদের তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আইসিইউয়ের সব রোগীই করোনা পজিটিভ। সেখানে সাত দিন দায়িত্ব পালন করার পরে নার্সদের চার দিন কোয়ারেন্টিনে থাকার ব্যবস্থা করা দরকার। কিন্তু হাসপাতালের হোস্টেলগুলোয় তা সুষ্ঠুভাবে হচ্ছে না। নার্সদের অভিযোগ, যাঁরা করোনা পজিটিভ হয়েছেন এবং করোনা রোগীদের সেবা দেওয়ার কারণে যাঁদের কোয়ারেন্টিনে থাকা দরকার, তাঁদের একই ফ্লোরে রাখা হচ্ছে। একই বাথরুম ব্যবহার করতে হচ্ছে। ফলে যাঁরা ভালো আছেন, তাঁদেরও আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যাচ্ছে। গত শনিবার পর্যন্ত হাসপাতালের ৬১ জন নার্স করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, বর্তমানে হাসপাতালে ১০ শয্যার আইসিইউ চালু রয়েছে। সেখানে চিকিৎসাধীন সব রোগীই করোনা পজিটিভ। এখানে দায়িত্ব পালনের জন্য নার্সদের একটি বিশেষায়িত দল রয়েছে। এই দলে ৫৫ নার্স আছেন। তাঁদের পাঁচটি দলে ভাগ করা হয়েছে। একটি দল সাত দিন দায়িত্ব পালন করার পরে স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী তাঁদের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে (সঙ্গনিরোধ) রাখতে হবে। তারপর নমুনা পরীক্ষা করে নেগেটিভ ফল পাওয়া গেলে তাঁরা আবার দায়িত্বে ফিরবেন। কিন্তু এই নার্সিং হোস্টেলে তাঁদের সাত দিন রেখেই বের করে দেওয়া হচ্ছে।

ভুক্তভোগী নার্সরা বলছেন, তাঁদের বাসায় কোয়ারেন্টিনে থাকার ব্যবস্থা নেই। বাসায় গেলে তাঁদের পরিবারের লোকজনের সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে। অনেক দেনদরবার করার পরে মেয়েদের জন্য হাসপাতালের ১৫ নম্বর ওয়ার্ড ও ছেলেদের জন্য ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে কোয়ারেন্টিনে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু সেখানে তাঁদের করোনা পজিটিভ রোগীর বাথরুমই ব্যবহার করতে হচ্ছে। আলাদা কোনো ব্যবস্থা নেই।

নার্সিং হোস্টেলে আগে থেকেই পাঁচজন করোনা পজিটিভ নার্স ছিলেন। গত ২৪ জুন তাঁদের ফ্যামিলি প্ল্যানিং হোস্টেলে পাঠানো হয়। সেখানকার পরিবেশ নোংরা। নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেই। দুই ঘণ্টা পরেই তাঁরা ফিরে আসেন।

সূত্র জানায়, হাসপাতালে হাইডিপেডেন্সি ইউনিট হিসেবে ব্যবহার করা যায়, এ রকম আরও ১০টি শয্যা রয়েছে। এর পাঁচটিতে ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা রয়েছে। আর পাঁচটিতে ভেন্টিলেশন না থাকলেও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম দুটি হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানলা দিয়েছেন। আর ন্যাশনাল মেডিকেল স্টোর ডাইরেক্টরেট থেকে আরও দুটি হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানলা দেওয়া হয়েছে। এত সব ব্যবস্থাসম্পন্ন ১০টি আইসিইউ শয্যা শুধুই পড়ে আছে। অথচ আইসিইউ শয্যার জন্য হাসপাতালে রোগীদের ভিড় লেগেই আছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৫ জুলাই করোনা পজিটিভ ২৫ জন রোগী আইসিইউয়ের জন্য অপেক্ষমাণ তালিকায় ছিলেন। গুরুতর আক্রান্ত সব রোগীরই আইসিইউ সাপোর্ট দরকার। সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র বলছে, গত শনিবার পর্যন্ত শুধু রাজশাহী জেলার ৯১৯ জন করোনা পজিটিভ রোগী চিকিৎসাধীন। এ ছাড়া দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের রোগীরা এই হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। তাঁদের ১০ শতাংশ রোগীর আইসিইউ-সুবিধার প্রয়োজন হতেই পারে। কিন্তু হাসপাতালে মাত্র ১০ জন রোগীর এই সেবার ব্যবস্থা রয়েছে, যা কোনো সময়ই খালি থাকে না।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জামিলুর রহমান সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন না। জানতে চাইলে উপপরিচালক সাইফুল ফেরদৌস এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।