প্রতারণার বিচার চেয়ে উল্টো মামলার শিকার হওয়ার অভিযোগ

বিদেশে চাকরির নামে প্রতারণার বিচার চেয়ে উল্টো মামলার শিকার হওয়ার অভিযোগ করেছেন মিজানুর রহমান (৩৪) নামের এক ব্যক্তি। তাঁর অভিযোগ, উচ্চ বেতনের চাকরির কথা বলে তাঁকে প্রতারণার মাধ্যমে অস্থায়ী ভিসায় সাইপ্রাসে নিয়ে যাওয়া হয়। ফলে তিনি দেশে ফেরত আসতে বাধ্য হন। এ বিষয়ে বিচার চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার দুই মাস পর অপরিচিত এক ব্যক্তি তাঁকে আসামি করে মামলা করেছেন।

মিজানুর রহমানের মতে, যে ব্যক্তিরা তাঁর সঙ্গে প্রতারণা করেছেন, তাঁরাই অন্য ব্যক্তিকে দিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলাটি করেছেন। এখন সেই মামলার সমন মাথায় নিয়ে তিনি ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
মিজানুর রহমানের অভিযোগ, আট লাখ টাকার বিনিময়ে তাঁকে সাইপ্রাসে নিয়ে যান ফরহাদ হোসেন (৩৫) নামের এক ব্যক্তি। সেখানে উচ্চ বেতনে চাকরি দেওয়ার কথা বলে নিয়ে যাওয়া হলেও অস্থায়ী ভিসার কারণে তাঁকে দেশে ফেরত পাঠানো হয় সাত মাসের ব্যবধানে।
দেশে ফিরে প্রতারণার অভিযোগে ফরহাদ হোসেনকে প্রধান আসামি করে তাঁর বাবা, সাইপ্রাসপ্রবাসী ভাইসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মিজানুর আদালতে মামলা করেন। তবে মামলায় হাজির না হয়ে ওই প্রবাসী ভিন্ন জেলার এক লোককে দিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা করেন।

মিজানুর রহমান নাটোর শহরের দক্ষিণ বড়গাছা মহল্লার মজিবুর রহমানের একমাত্র ছেলে।

আর ফরহাদ হোসেন শহরের বনবেলঘরিয়া মহল্লার জাকির হোসেন মজুমদারের ছেলে। তবে ফরহাদ হোসেনের বাবার আদি বাড়ি চাঁদপুরে।
মিজানুর জানিয়েছেন, তিনি মামলা করার পর নাটোরের বাড়িতে তালা মেরে পরিবার নিয়ে পালিয়ে যান ফরহাদ হোসেন।

নাটোর সদর আমলি আদালতে মিজানুর রহমানের দায়ের করা মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, নাটোর শহরের বনবেলঘরিয়া মহল্লার জাকির হোসেন মজুমদার কয়েক বছর আগে চাঁদপুর থেকে এসে বাড়িঘর করে বসবাস করছিলেন। তাঁর এক ছেলে শাহাদত হোসেন (৩৮) সাইপ্রাসে চাকরি করেন। অন্য ছেলে ফরহাদ হোসেন তাঁর সঙ্গে বসবাস করেন। সেই সুবাদে ফরহাদ হোসেন ও তাঁর বাবা মিজানুরকে উচ্চ বেতনে সাইপ্রাসে চাকরি দেওয়ার কথা বলে তাঁর কাছ থেকে দুই দফায় আট লাখ টাকা নেন। এ–সংক্রান্ত একটি চুক্তিপত্রও সম্পাদন করেন।
চুক্তি অনুযায়ী, গত বছরের ৩১ জানুয়ারি মিজানুরকে সাইপ্রাসে নিয়ে যাওয়া হয়। বিমানবন্দর থেকে তাঁকে শাহাদত হোসেন নিয়ে যান এবং একটি হোটেলে কাজ করতে দেন। প্রায় সাত মাস কাজ করলেও তিনি পারিশ্রমিক পাননি। পারিশ্রমিকের টাকা তুলে নেন শাহাদত হোসেন। এরপর ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার অভিযোগে পুলিশ তাঁকে আটক করে। খবর পেয়ে মিজানুরের বাবা দেশ থেকে আরও ৪৫ হাজার টাকা পাঠিয়ে তাঁকে গত ৭ সেপ্টেম্বর দেশে ফিরিয়ে আনেন।
দেশে ফিরে গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর ওই তিনজনের বিরুদ্ধে মিজানুর রহমান আদালতে মামলা করেন। আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে সমন দেন। তবে আসামিরা হাজির হননি। পরে তাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। এই অবস্থায় ফরহাদ হোসেন সপরিবার নাটোরের বাড়ি তালাবদ্ধ করে চাঁদপুরে চলে যান।
এর কিছুদিন পর মিজানুরের ঠিকানায় চাঁদপুরের একটি ফৌজদারি আদালত থেকে সমন আসে। খোঁজ নিয়ে তিনি জানতে পারেন, চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ উপজেলার জনৈক মাসুদ মজুমদার নামের এক ব্যক্তি তাঁকে ও তাঁর বাবাকে আসামি করে ১৫ লাখ টাকা দাবি করে এ বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি মামলা করেছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, তাঁরা চাল সরবরাহ করার কথা বলে ওই ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা নিয়েছিলেন।
করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে আদালত বন্ধ থাকায় মিজানুর ও তাঁর বাবা চাঁদপুরের আদালতে হাজির হতে পারেননি। সমন মাথায় নিয়ে তাঁরা এখন আদালতের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।
মিজানুর রহমান বলেন, ‘প্রতারণা করে ওঁরা আমার আট লাখ টাকা মেরে দিয়েছে। আমি বিচার চেয়েছি। ওঁরা বিচারের মুখোমুখি না হয়ে অন্যজনকে দিয়ে চাঁদপুরে আমাদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক পাল্টা মামলা করেছেন। আমরা জীবনে কখনো চালের ব্যবসা করিনি। ওই মামলার বাদীর সঙ্গে আমাদের কখনো দেখাও হয়নি। আমরা চিনিও না।’
মিজানুর রহমান জানান, তিনি ছাড়াও শহরের আরও চারজনের কাছ থেকে সাইপ্রাসে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে টাকা আত্মসাৎ করেছেন ফরহাদ ও তাঁর বাবা। প্রতারণার শিকার ওই চারজনও ফরহাদ ও তাঁর বাবাকে খুঁজছেন।
এ ব্যাপারে নাটোর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, মিজানুরের মামলাটি আদালতে বিচারাধীন। আর মিজানুরের বিরুদ্ধে যে মামলাটি হয়েছে, সেট চাঁদপুরের আদালতে হয়েছে।
মিজানুরের অভিযোগের ব্যাপারে ফরহাদ হোসেন ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোনো বক্তব্য জানা যায়নি। নাটোরের বনবেলঘরিয়া মহল্লার তাঁদের বাড়ির ঠিকানায় দুদিন গিয়ে তা তালাবদ্ধ পাওয়া যায়। আশপাশের লোকজনের কাছ থেকে জানা যায়, দুই মাস ধরে তাঁরা বাড়ি তালা মেরে চলে গেছেন। কোথায় গেছেন কেউ জানেন না। মিজানুরের কাছে ফরহাদের যে মুঠোফোন নম্বর ছিল, তাতে ফোন করে বন্ধ পাওয়া যায়।