স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে নিয়মিত আদালত চালু চায় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি

স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে অনতিবিলম্বে সুপ্রিম কোর্টসহ দেশের আদালতগুলো নিয়মিতভাবে চালুর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রধান বিচারপতির প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি। করণীয় বিষয়ে আজ বুধবার দুপুরে সমিতি ভবনে সমিতির কার্যকরী কমিটির এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় নিয়মিত আদালত চালুর ব্যাপারে করণীয় সম্পর্কে কমিটি কয়েক দফা সিদ্ধান্ত নেয়। সভা শেষে ওই সিদ্ধান্ত সংবলিত কার্যকরী কমিটির প্রস্তাবনা প্রধান বিচারপতি বরাবর পাঠানো হয়।

পরে সমিতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে সভার ওই সিদ্ধান্ত তুলে ধরা হয়। সমিতির সভাপতি জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম এম আমিন উদ্দিনের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে সিদ্ধান্তগুলো তুলে ধরেন সমিতির সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস। এ সময় সমিতির কার্যকরী কমিটির অপর সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।

প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠানো প্রস্তাবনাপত্রে বলা হয়, গত ১২ মার্চ থেকে অদ্যাবধি সুপ্রিম কোর্টের নিয়মিত ছুটি এবং ভয়াবহ করোনা পরিস্থিতিতে দেশব্যাপী সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটির কারণে দেশের সর্বোচ্চ আদালতসহ সারা দেশের আদালতগুলোতে নিয়মিত বিচার কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ১২ মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত সুপ্রিম কোট আইনজীবী সমিতির ৩৫ জন সদস্য মারা গেছেন। তাঁদের অনেকেরই করোনা উপসর্গ ছিল।...এমন পরিস্থিতিতেও ইতিমধ্যে সরকার সাধারণ ছুটি বাতিল করেছে। সরকারি-বেসরকারি অফিস, ব্যাংক, কলকারখানা, মার্কেট ও গণপরিবহন চালু হয়েছে। কিন্তু স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়মিত আদালতের মাধ্যমে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়নি। ফলে, একদিকে যেমন আইনজীবীরা যথাযথভাবে তাঁদের পেশা পরিচালনা করতে পারছেন না ও আর্থিক সংকটে পতিত হচ্ছেন, অন্যদিকে বিচারপ্রার্থী সাধারণ মানুষও ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

সমিতির সম্পাদক স্বাক্ষরিত ওই প্রস্তাবনাপত্রে বলা হয়, ‘এ কথা অনস্বীকার্য যে, অনিবার্য পরিস্থিতির কারণেই ভার্চ্যুয়াল আদালতের সৃষ্টি।...তবে আমাদের তথ্যানুযায়ী, অধিকাংশ আইনজীবী নানা সীমাবদ্ধতার কারণে ভার্চ্যুয়াল আদালতে মামলা করার সুযোগ পাচ্ছেন না। এ ছাড়া ভার্চ্যুয়াল আদালতে আগাম জামিনের মতো অতীব গুরুত্বপূর্ণ আইনি ব্যবস্থাপনা না থাকায় বিচারপ্রার্থী জনগণ ব্যাপক পুলিশি হয়রানির শিকার হচ্ছেন।’

নিয়মিত আদালত চালুর ব্যাপারে আশু করণীয় সম্পর্কে ওই প্রস্তাবনাপত্রে সাত দফা সিদ্ধান্ত রয়েছে। প্রথম দফায় বলা হয়, ভার্চ্যুয়াল আদালত নিয়মিত আদালতের বিকল্প হতে পারে না। সুতরাং স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে অনতিবিলম্বে নিয়মিত আদালত চালুর পক্ষে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির কার্যকরী কমিটি অভিমত প্রকাশ করে।

দ্বিতীয় সিদ্ধান্তে বলা হয়, যেহেতু করোনার ভয়াবহতার কারণে ইতিমধ্যে আদালতের মূল্যবান সময় অপ্রত্যাশিতভাবে নষ্ট হয়ে গেছে সুতরাং এ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ২০২০ সালের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের বাৎসরিক ছুটি এবং সব আদালতের ডিসেম্বরের ছুটি বাতিল করতে হবে এবং পরবর্তী বছরগুলোতে আদালতের ঐচ্ছিক ছুটিও কমিয়ে আনতে হবে।

চতুর্থটি হচ্ছে, করোনাকালে আদালত প্রাঙ্গণে বিচারক, আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থী মানুষের জন্য স্বাস্থ্য সুরক্ষা নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। সব পক্ষকে সুরক্ষা নীতিমালা কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে। ষষ্ঠ প্রস্তাবনার অংশবিশেষে হচ্ছে, যত দিন পর্যন্ত নিয়মিত আদালত চালু করা সম্ভব হচ্ছে না, তত দিন পর্যন্ত সব আইনজীবী যেন পেশা পরিচালনার সুযোগ পান সেটি নিশ্চিত করতে হবে এবং এ লক্ষ্যে বিদ্যমান ভার্চ্যুয়াল কোর্টের সংখ্যা, পরিধি এবং বিচারিক সময়সীমা বৃদ্ধি করতে হবে। আর বিচারপ্রার্থী মানুষের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য ভার্চ্যুয়াল আদালতেও আগাম জামিন চালু করতে হবে বলে সপ্তম দফায় উল্লেখ করা হয়েছে।