শ্যামনগরে পাউবোর জমি দখল করে পাকা ঘর নির্মাণ

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনীর খোলপেটুয়া নদীর পাড়ে স্থায়ীভাবে নির্মাণ করা হচ্ছে পাকা ঘর। মঙ্গলবার তোলা ছবি। প্রথম আলো
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনীর খোলপেটুয়া নদীর পাড়ে স্থায়ীভাবে নির্মাণ করা হচ্ছে পাকা ঘর। মঙ্গলবার তোলা ছবি। প্রথম আলো

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনীতে খোলপেটুয়া নদীর পাড় দখল করে স্থায়ীভাবে ১০টি পাকা ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) জায়গায় প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে প্রকাশ্যে এসব ঘর নির্মাণের কাজ চলছে। পাউবো শুধু সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নোটিশ দিয়ে তাদের দায়িত্ব সেরেছে।

মঙ্গলবার বুড়িগোয়ালিনীতে গিয়ে দেখা গেছে, বুড়িগোয়ালিনীতে জেলা পরিষদের ডাকবাংলোর সামনের সড়কের পাশে পাউবোর জায়গায় পাঁচটি ও খেয়াঘাটের দিকে পাঁচটি পাকা ঘর নির্মাণের কাজ চলছে। খোলপেটুয়া নদীর ধারে নির্মাণাধীন এসব ঘরের প্রস্থ ১২-১৫ ফুট ও দৈর্ঘ্য ২০-২৫ ফুট।

বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য আবদুল গণি জানান, বুড়িগোয়ালিনীতে খোলপেটুয়া নদীর পাড় ভরাট করে গোলপাতার ছাউনি দিয়ে অস্থায়ীভাবে কয়েকটা দোকানঘর গড়ে তুলে স্থানীয় লোকজন কয়েক বছর আগে থেকে ব্যবসা করছেন। ২০ মে ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ওই সব ঘরের অধিকাংশই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আম্পানে ভেঙে যাওয়া ওই ঘরগুলো সংস্কারের নামে বুড়িগোয়ালিনী গ্রামের আশরাফুল শেখ, মাসুম বিল্লাল, আমিনুর রহমান, সাহাদাত ঢালী, আবদুল মাজেদ ঢালী, সোহেল হোসেন, আনিসুর রহমান মোড়ল, আবদুল গফুর জমাদ্দার, আবদুল হামিদ জোয়াদ্দার ও গাবুরা গ্রামের মনজুর রহমান স্থায়ীভাবে ইট, বালি ও সিমেন্ট দিয়ে পাকা ঘর নির্মাণ করছেন।

আবদুল গণি আরও জানান, স্থায়ীভাবে ঘর নির্মাণ না করার জন্য বলা হলেও তাঁরা তা না শুনে প্রকাশ্যে এসব ঘর নির্মাণ করে চলছেন। পাউবো কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থাই নিচ্ছে না।

বুড়িগোয়ালিনী গ্রামের আশরাফুল শেখ বলেন, তিনি ওই স্থানে গোলপাতার ছাউনি ও তক্তার ঘের দিয়ে ঘর তৈরি করে ২০ বছর ধরে ব্যবসা করে আসছেন। ২০ মে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে তাঁর ঘর ভেঙে যায়। ঝড় এলে বারবার ঘর ভেঙে যাওয়ায় তিনি স্থায়ীভাবে পাকা ঘর নির্মাণ করছেন।

একই গ্রামের শাহাদাত ঢালী বলেন, তিনি এখানে ৩০ বছর থেকে গোলপাতার ছাউনি আর তক্তার বেড়া দিয়ে ঘর তৈরি করে ব্যবসা করে আসছেন। আম্পানে তাঁদের সব ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বারবার ঝড়ে ঘর ভেঙে যাওয়ায় সবাই আলোচনা করে পাকা ঘর নির্মাণ করছেন। পাউবো থেকে নোটিশ দিয়ে কাজ বন্ধ রাখার জন্য বলা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এত দিন কেউ আপত্তি করেনি। এখন আমরা কাজ বন্ধ রাখব কেন। আমরা তো জমি দখল করিনি। পুরোনো জায়গায় পাকা ঘর নির্মাণ করছি মাত্র।’

পাউবোর শ্যামনগরের উপসহকারী প্রকৌশলী শাহনাজ পারভীন বলেন, তাঁদের জায়গায় স্থায়ীভাবে ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে জানতে পেরে তিনি ঘটনাস্থলে যান। নির্মাণকাজ বন্ধ করার জন্য বলে আসেন তিনি। এরপর গত ৩০ জুন তাঁদের নোটিশ দিয়ে ঘর নির্মাণ বন্ধ করতে বলা হয়। পাশাপাশি আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে তাঁদের কাগজপত্র থাকলে তা লিখিতভাবে জানানোর জন্য বলা হয়, কিন্তু তাঁরা তা জানাননি। তবে তাঁরা ঘর নির্মাণকাজ বন্ধ রেখেছেন। মঙ্গলবার সেখানে গিয়ে ঘর নির্মাণ করতে দেখা গেছে জানালে তিনি বলেন, ‘আমি অসুস্থ ছিলাম, এ জন্য খোঁজ নিতে পারিনি। তবে ঘর নির্মাণ বন্ধ না করে থাকলে আগামী শনিবার অথবা রোববার দখলদারদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করব।’