মোহছেনাদের দিন আর চলছে না

দুর্ঘটনায় মোহছেনা আক্তারের (২১) ডান পা ভেঙে গেছে অনেক আগে। বাবা বেকার। পরিবারে অভাব। পরিবার ও নিজের লেখাপড়ার খরচ মেটাতে ক্রাচে ভর করে আশপাশের বাড়িতে কয়েকটি টিউশনি করতেন। যা পেতেন, তা দিয়ে কোনো রকমে চলে যেত। করোনার প্রাদুর্ভাব শুরুর পর তাঁর টিউশনিগুলো বন্ধ। এখন আর দিন চলে না। পড়ার খরচ তো দূরের কথা, দুমুঠো আহারই জোটে না। করোনায় আটকে গেছে সবকিছু।

মোহছেনার বাড়ি চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার বলাইরকান্দি গ্রামে। তিনি মতলব সরকারি কলেজের স্নাতক (পাস) দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। করোনাকালে মোহছেনার মতো মতলব উত্তর ও মতলব দক্ষিণ উপজেলার টিউশনি করা কয়েক শ শিক্ষার্থী বিপাকে পড়েছেন। টিউশনি না থাকায় তাঁদের লেখাপড়া ও পকেটের খরচ মিলছে না। অভাবগ্রস্ত পরিবারকেও পারছেন না সহায়তা করতে।

মতলব দক্ষিণ উপজেলার স্নাতক তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মুক্তা আক্তার বলেন, ‘আগে তিনটি টিউশনি করতাম। মাস শেষে প্রায় চার হাজার টাকা পেতাম। ওই টাকায় কলেজের খরচ চালাতাম। ছোট এক ভাইকেও খাতা-কলম কেনা ও দুটি বিষয়ে প্রাইভেট পড়ার টাকা জোগাতাম। গত মার্চ থেকে এসব টিউশনি বন্ধ। পরিবারে আর কারও আয়ও নেই। নিজের লেখাপড়ার খরচ মেটাতে পারছি না। পরিবারকেও দিতে পারছি না কিছু। করোনায় আয়রোজগার সব কেড়ে নিয়েছে। খুব বিপাকে পড়েছি। এ অবস্থার শেষ কবে জানি না।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মতলব উত্তর উপজেলার ছেংগারচর এলাকার দ্বাদশ শ্রেণির এক শিক্ষার্থী বলে, বাবা নেই। মা ও দুই বোন নিয়ে সংসার। জমিজমা নেই। সম্বল বলতে থাকার ছোট্ট একটি টিনের ঘর। অষ্টম শ্রেণিতে পড়াকালে গ্রামে টিউশনি শুরু করে। অনেক কষ্টে এসএসসি পাস করে। টিউশনির টাকায় কলেজে ভর্তি হয়। পাশের গ্রামে চারটি টিউশিনি করত। কলেজে আসা-যাওয়ার ভাড়া এবং আনুষঙ্গিক খরচও চলত ওই টাকায়। ছোট দুই বোনের লেখাপড়া ও পরিবারের টুকটাক খরচও দিত। করোনার পর সব কটি টিউশনি বন্ধ হয়ে গেছে। মার্চের বেতন দিয়ে সোজা ‘না’ করে দেন। এখন বাড়িতে পড়ে আছেন।

মতলব দক্ষিণ উপজেলার কলাদী এলাকার এক শিক্ষার্থীর মা বলেন, তাঁর ছোট ছেলে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ছে। কলেজের এক ছাত্র তাঁর ছেলেকে ইংরেজি ও অন্যান্য বিষয় পড়াতেন। মাসে এক হাজার টাকা করে দিতেন। করোনা আসার পর ঝুঁকি এড়াতে ওই শিক্ষকের কাছে পড়ানো বন্ধ করে দেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ওই শিক্ষককে দিয়ে আবার ছেলেকে পড়াবেন।

‘হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট’ নামের একটি মানবাধিকার সংগঠনের মতলব দক্ষিণ উপজেলা শাখার আইনবিষয়ক সম্পাদক অশোক কুমার রায় বলেন, যেসব শিক্ষার্থী বাড়ি বা বাসায় গিয়ে টিউশনি করে পড়ালেখার খরচ মেটাতেন সেসব শিক্ষার্থীর কঠিন সময় যাচ্ছে। সচ্ছল ব্যক্তিদের উচিত এসব শিক্ষার্থীর সহায়তায় এগিয়ে আসা। তা হলে তাঁরা অন্তত নিজেদের লেখাপড়াটা চালিয়ে নিতে পারবেন।