কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকার খবরের প্রতিবাদ বিজিবির

ভারতের ‘আনন্দবাজার পত্রিকা’য় প্রকাশিত ‘অরক্ষিত জমিতে পা পড়েছে বাংলাদেশির’ খবরের আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানিয়েছে বিজিবি।

শুক্রবার বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ৭ জুলাই ‘আনন্দবাজার পত্রিকা’র ওই প্রতিবেদনটি ছিল ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো শরিফুল ইসলামের পাঠানো ওই বিজ্ঞপ্তি বলছে, ‘মূলত মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় বিএসএফের সঙ্গে জনগণের বৈরী সম্পর্ক, স্থানীয় গরু চোরাকারবারিদের এই মৌসুমে কোনো কাজ করতে না পারা, মাছ ধরার সময় বিএসএফের স্থানীয় জেলেদের থেকে চাঁদা আদায় এবং সর্বোপরি স্থানীয় বিএসএফ ব্যাটালিয়নের ব্যর্থতাকে ঢাকতে ভারতীয় গণমাধ্যমে এমন খবর ছাপা হয়েছে।’

ওই এলাকার ভারতের নাগরিক অথবা স্বার্থান্বেষী মহল খবরটি সরবরাহ করেছে বলে অনুমান বিজিবির।

বিজিবি বলছে, পত্রিকায় ঘটনাস্থল রানীনগর সীমান্তের কথা বলা হয়েছে। এলাকাটি রাজশাহী বিজিবির দায়িত্বপূর্ণ এলাকা । এটি চারঘাট বিওপি থেকে শুরু করে তালাইমারি বিওপি পর্যন্ত বিস্তৃত। এখানে পদ্মা নদী বরাবর শূন্য লাইন অতিক্রম করেছে। এর দুদিকে বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল।

‘আনন্দবাজার’–এর সংবাদে বলা হয়, সীমান্তের রানীনগর ১ ও ২ ব্লক এবং জলঙ্গি জুড়ে প্রায় ২২ হাজার একর অরক্ষিত জমিতে বাংলাদেশিরা অবাধে চাষাবাদ করছে।

বিজিবি বলছে, বাস্তব চিত্র পুরোপুরি আলাদা। ভারতের অভ্যন্তরে গিয়ে চাষাবাদ করা তো দূরের কথা, বর্তমানে আন্তর্জাতিক সীমারেখা বরাবর চাষাবাদ করাই অসম্ভব একটি ব্যাপার।

এর কারণ হিসেবে বিজিবি যে তথ্য দিয়েছে তা হলো, ওই এলাকায় শূন্যরেখা বরাবর বিজিবির সদস্যরা রাত দিন টহল দিয়ে সীমান্ত রক্ষা করছেন।

প্রকাশিত সংবাদে আরও বলা হয়, দিন কয়েক আগে দুজন বাংলাদেশি সীমান্ত পেরিয়ে ভারতীয় এলাকায় চলে এলে বিএসএফ তাঁদের আটক করে। এর মুক্তিপণ হিসেবে রানীনগর সীমান্তের গ্রাম থেকে দুজন গ্রামবাসীকে তুলে নিয়েছে বাংলাদেশি দুষ্কৃতকারীরা।

আদতে ঘটনা সম্পূর্ণ উল্টো এবং প্রকাশিত সংবাদটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

বিজিবি বলছে, ‘গত ২ জুলাই জলঙ্গি সীমান্তে দুটি ঘটনা ঘটে, যা পত্রিকার মূল বক্তব্যের সম্পূর্ণ বিপরীত।’

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বলেছে, ২ জুলাই রাত সাড়ে ১১টার দিকে নয়ন শেখ ও শহিদুল শেখ নামের দুই ব্যক্তি জলঙ্গিনিবাসী ভারতীয় চোরাকারবারি অবৈধভাবে জলঙ্গি সীমান্ত দিয়ে আন্তর্জাতিক সীমারেখা অতিক্রম করে বাংলাদেশে ঢুকে যান।

বাংলাদেশের ভেতরে ইউসুফপুর গ্রামে মাদক ব্যবসা এবং অর্থ লেনদেনকে কেন্দ্র করে তাঁরা স্থানীয় লোকজনের ওপর চড়াও হন। স্থানীয় লোকজন ব্যাপারটি সহজভাবে না নিয়ে তাঁদের ঘেরাও করে ফেলেন।

পরে ইউসুফপুর বিজিবি ক্যাম্প খবর পেয়ে নিরাপত্তার কথা ভেবে তাঁদের দুজনকে হেফাজতে নেয়।

অন্যদিকে একই দিন ১২টায় বিএসএফ টহল দল অবৈধভাবে আন্তর্জাতিক সীমারেখা অতিক্রম করে ৩০০ মিটার বাংলাদেশের ভেতরে (পিলার ৭২/৪-এস বরাবর) ঢুকে ইউসুফপুর এলাকা থেকে তিনজন নিরীহ ও নিরপরাধ কৃষককে ধরে নিয়ে যায় । ওই কৃষকেরা চর এলাকায় শুধু চাষাবাদ করে বাড়ি ফিরছিলেন।

দুটি ঘটনার জের ধরে একই দিনে বিজিবি-বিএসএফ পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

 ৩ জুলাই শান্তিপূর্ণভাবে দুই দেশের নাগরিক হস্তান্তর-গ্রহণের মাধ্যমে ব্যাপারটি সুষ্ঠুভাবে মীমাংসা হয়েছে।