লকডাউন ওয়ারীতে নতুন করে ৪৮ জনের করোনা শনাক্ত

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ওয়ারীতে করোনাভাইরাস সংক্রমণ দ্রুত বাড়ছে। এখানে লকডাউনের এক সপ্তাহে কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়েছেন ৪৮ জন; যা এই সপ্তাহে সংগৃহীত নমুনার প্রায় ৫০ শতাংশ।

গত শনিবার ওয়ারী লকডাউন করা হয়। 

নমুনা পরীক্ষায় এমন ফলাফল ওয়ারীর করোনা সংক্রমণের সঠিক চিত্র উঠে এসেছে বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, এখন ওয়ারী করোনা সংক্রমণের সর্বোচ্চ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। সংক্রমিত পরিবারগুলোকে হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে হবে। এই এলাকায় কঠোরভাবে লকডাউন বাস্তবায়ন করতে হবে। তবে আজ শুক্রবার বিভিন্ন অজুহাতে কয়েকজনকে লকডাউন এলাকা থেকে বের হতে দেখা গেছে।

লকডাউনের সপ্তম দিন আজ ওয়ারীতে পাঁচজন করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন। এ ছাড়া ওয়ারী বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অস্থায়ী বুথে করোনা পরীক্ষায় নমুনা দিয়েছেন আরও ১৫ জন। কাল শনিবার পরীক্ষার ফলাফল জানানো হবে বলে জানিয়েছে আইইডিসিআর।

গত ৪ জুলাই ভোর ছয়টা থেকে ওয়ারীর টিপু সুলতান রোড, যোগীনগর রোড ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক (জয়কালী মন্দির থেকে বলধা গার্ডেন), লারমিনি স্ট্রিট, হেয়ার স্ট্রিট, ওয়্যার স্ট্রিট, র‌্যাংকিন স্ট্রিট ও নবাব স্ট্রিট লকডাউনে শুরু হয়। এলাকাগুলোতে এক লাখের বেশি লোকের বাস। করোনা প্রতিরোধে আগামী ২৫ জুলাই পর্যন্ত ওয়ারীতে লকডাউন চলবে। তবে লকডাউনের আগে এই এলাকায় আরও ৪৭ জন করোনা সংক্রমিত হয়েছিলেন।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র জানায়, গত শনিবার থেকে আজ শুক্রবার পর্যন্ত লকডাউন এলাকার ১০৫ জন করোনা নমুনা দিয়েছেন। তাদের মধ্যে ৪৮ জনই সংক্রমিত হয়েছেন। এর মধ্যে গত বুধবার সর্বোচ্চ ২৬ জন নমুনা দিয়েছিলেন; করোনা শনাক্ত হয়েছেন ১২ জন। আজ শুক্রবার যে ১৫ জন নমুনা দিয়েছেন। এদের অনেকের মধ্যেই সুস্পষ্ট উপসর্গ রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

আজ সকাল ১০টা থেকে ১২ পর্যন্ত ওয়ারী লকডাউন এলাকা থেকে তেমন কেউ বের হননি। ভেতরের সড়কগুলো ছিল ফাঁকা। তবে সাড়ে ১২ টার দিকে জুমার নামাজ আদায়ে মসজিদে যাওয়ার জন্য দু-একজন করে বাসা থেকে বের হন। এ সময় ফার্মেসি এবং কয়েকটি সুপার শপ ছাড়া বাকি সব দোকানপাট বন্ধ দেখা গেছে।

বেলা ১১টার দিকে ওয়্যার স্ট্রীট ফটক দিয়ে লকডাউন এলাকা থেকে বের হন যোগীনগরের বাসিন্দা কামরুল ইসলাম। তিনি বলেন, তার বড় ভাই মগবাজারের একটি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তার চিকিৎসার জন্য টাকা নিয়ে যাচ্ছেন। কিছুক্ষণের মধ্যে তিনি আবার ফিরে আসবেন।

এই ফটকে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করছেন নাজির উদ্দিন। কেউ লকডাউন এলাকা থেকে বের হলে তার নাম ঠিকানা খাতায় লিখে রাখেন তিনি। তবে কামরুল ইসলামের বের হওয়া নিয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।

ওয়ারী লকডাউন এলাকাটি ডিএসসিসির ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাধীন। স্থানীয় কাউন্সিলর সারোয়ার হোসেন এই লকডাউন বাস্তবায়নে নেতৃত্বে দিচ্ছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তারা খুব কঠোরভাবে লকডাউন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছেন। খুব বেশি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কাউকে বের হতে এবং ঢুকতে দিচ্ছে না। কিন্তু তারপরও সংক্রমণের এই হার অনেকটা বেশি। এটি কীভাবে কমানো যায়, তা নিয়ে তারা কাজ করছেন।

৯ থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ডিএনসিসির পূর্ব রাজাবাজার লকডাউন ছিল। তখন পূর্ব রাজাবাজারে লকডাউনের প্রথম সপ্তাহে ১৩১ জন নমুনা দিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে ৩৩ জন বা ২৫ দশমিক ১৯ শতাংশ সংক্রমিত হয়েছিলেন। এই তুলনায় ওয়ারীতে সংক্রমণের হার অনেক বেশি বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

আইইডিসিআরের উপদেষ্টা মুশতাক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ওয়ারী ঘনবসতিপূর্ণ একটি আবাসিক এলাকা। এখানে আগে করোনা পরীক্ষার তেমন সুযোগ ছিল না। করোনা আতঙ্ক হলে সামাজিকভাবে হেয় হতে হবে, এমন আতঙ্কে অনেকে পরীক্ষাও করেননি। এখন সেখানে বিনা মূল্যে করোনা পরীক্ষার সুযোগ রয়েছে। তাই সংক্রমণের সঠিক চিত্রটি বেরিয়ে আসছে। তিনি বলেন, লকডাউনের ১৪ দিন পর্যন্ত করোনা শক্তিশালী থাকে। যথাযথ ভাবে লকডাউন বাস্তবায়ন হলে তৃতীয় সপ্তাহে সংক্রমণের হার কমবে। এবং লকডাউন শেষে চলাচল সীমিত আকারে চালু করলে এবং সবাই সচেতন থাকলে করোনা মোকাবিলা সম্ভব হবে।