নেত্রকোনায় বৃষ্টি-পাহাড়ি ঢলে আংশিক বন্যা

নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলায় বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে বাড়িঘরে। ছবিটি আজ রোববার দুপুরে কলমকান্দার বাসাউড়া এলাকা থেকে তোলা। ছবি: প্রথম আলো
নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলায় বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে বাড়িঘরে। ছবিটি আজ রোববার দুপুরে কলমকান্দার বাসাউড়া এলাকা থেকে তোলা। ছবি: প্রথম আলো

গত শুক্রবার থেকে অব্যাহত বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে নেত্রকোনার প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি বেড়েই চলেছে। এতে ১০টি উপজেলার মধ্যে কলমাকান্দা, দুর্গাপুর, বারহাট্টা ও মদনের আংশিক এলাকায় বন্যার সৃষ্টি হচ্ছে। প্রায় ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা ও জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বন্যায় সবচেয়ে বেশি পানি উঠেছে কলমাকান্দা উপজেলায়। উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের প্রায় ২৫০ গ্রামের অন্তত ২৮ হাজার মানুষ পানিবন্দী রয়েছে। পানিতে অধিকাংশ বীজতলা, রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস, পুকুর পানিতে তলিয়ে গেছে। গরু-ছাগলসহ গৃহপালিত পশু নিয়ে মানুষ বিপদে পড়েছেন।
আজ রোববার বেলা দুইটার দিকে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত জেলার প্রধান নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর মধ্যে কলমাকান্দায় উব্দাখালী নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কলমাকান্দা-ঠাকুরাকোনা সড়কের বাহাদুরকান্দা, পাঁচউড়া, হিরাকান্দাসহ বিভিন্ন স্থানে পানিতে প্রায় দুই কিলোমিটার অংশ তলিয়ে গেছে। এতে ওই উপজেলার সঙ্গে জেলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ আক্তারুজ্জামান আজ দুপুরে জানান, বন্যায় উব্দাখালী নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ওই নদীর কলমাকান্দা পয়েন্টে বিপৎসীমা ৬ দশমিক ৫৫ মিটার। সেখানে পানি প্রবাহিত হচ্ছে ৭ মিটার পর্যন্ত।
মুহাম্মদ আক্তারুজ্জামান জানান, অন্য নদ-নদীগুলোর পানি এখন পর্যন্ত বিপৎসীমার নিচে রয়েছে। দুর্গাপুরের সোমেশ্বরী নদীর বিজয়পুর পয়েন্টে বিপৎসীমা ১৫ দশমিক ৮৯ মিটার। সেখানে পানি প্রবাহিত হচ্ছে ১৫ দশমিক ১৫ মিটার। ওই নদীর দুর্গাপুর পয়েন্টে বিপৎসীমা ১২ দশমিক ৫৫ মিটার। সেখানে প্রবাহিত হচ্ছে ১২ দশমিক ২০ মিটার। কংস নদের জারিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমা ১০ দশমিক ৫৫ মিটার, সেখানে প্রবাহিত হচ্ছে ৯ দশমিক ৪৫ মিটার। আর খালিয়াজুরির ধনু নদের খালিয়াজুরি পয়েন্টে বিপৎসীমা ৭ দশমিক ১২ মিটার, সেখানে প্রবাহিত হচ্ছে ৬ দশমিক ৬৫ মিটার পর্যন্ত।


জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফজলুল কাদির জানান, বন্যায় জেলার তিন হাজারের মতো পুকুর ডুবে গেছে। এতে প্রায় ৭৫০ টন মাছের ক্ষতি হয়েছে, যার বাজারমূল্য প্রায় সাড়ে সাত কোটি টাকা। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে কলমাকান্দায়। ওই উপজেলায় প্রায় ২ হাজার ৭৬৫টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ওবায়দুল্লাহ জানান, জেলায় ১৯৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যার পানি ঢুকেছে। এর মধ্যে কলমাকান্দায় ১৩২টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলায় বন্যার পানিতে ঘরবাড়িসহ অধিকাংশ রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। ওই উপজেলার সঙ্গে সারা দেশের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। ঠাকুরাকোনা-কলমাকান্দা সড়কে ঝুঁকি নিয়ে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলতে দেখা গেছে। ছবিটি আজ রোববার দুপুরে ওই সড়কের বাহাদুরকান্দা এলাকা থেকে তোলা। ছবি: প্রথম আলো
নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলায় বন্যার পানিতে ঘরবাড়িসহ অধিকাংশ রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। ওই উপজেলার সঙ্গে সারা দেশের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। ঠাকুরাকোনা-কলমাকান্দা সড়কে ঝুঁকি নিয়ে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলতে দেখা গেছে। ছবিটি আজ রোববার দুপুরে ওই সড়কের বাহাদুরকান্দা এলাকা থেকে তোলা। ছবি: প্রথম আলো

জেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মনিরুল ইসলাম জানান, বন্যায় কলমাকান্দা, দুর্গাপুর, বারহাট্টা, মদনসহ কয়েকটি উপজেলার নিম্নাঞ্চলে প্রায় এক হাজার কিলোমিটার কাঁচা–পাকা বিভিন্ন গ্রামীণ সড়ক তলিয়ে গেছে। দেড় সপ্তাহ আগের বন্যায় কলমাকান্দায় প্রায় ২৭ কিলোমিটার কাঁচা-পাকা সড়কের ক্ষতি হয়।
বন্যায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মঈনউল ইসলাম। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, বন্যার জন্য জেলায় ৮ লাখ টাকা এবং ৪০০ মেট্রিক টন জিআর বরাদ্দ রয়েছে। এর মধ্যে আজ রোববার কলমাকান্দা উপজেলায় ৪০ মেট্রিক টন জিআর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এক সপ্তাহ আগে ওই উপজেলায় আরও ৭৬ মেট্রিক টন বরাদ্দ দেওয়া হয়।
মঈনউল ইসলাম বলেন, বন্যায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। কেউ আশ্রয়কেন্দ্রে আসেননি।