করোনা শনাক্ত নিম্নমুখী কিন্তু হার ঊর্ধ্বমুখী

প্রতীকী ছবি। ছবি: রয়টার্স
প্রতীকী ছবি। ছবি: রয়টার্স

করোনায় আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সব দেশেই নমুনা পরীক্ষা বেড়েছে। বাংলাদেশে দুই সপ্তাহ ধরে এটি কমছে। এর ফলে দেশে শনাক্ত মানুষের সংখ্যা কমলেও হার বাড়ছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ভারতে ১৩ ও পাকিস্তানে ১২ শতাংশের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আর বাংলাদেশে এটি ২৫ শতাংশ ছাড়িয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, দেশে এক দিনে সর্বোচ্চ ৪ হাজার ১৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল ২ জুলাই। ওই দিন শনাক্তের হার ছিল প্রায় ২২ শতাংশ। এরপর থেকে শনাক্ত কমলেও শনাক্তের হার বাড়ছে। সর্বোচ্চ শনাক্তের দিন পরীক্ষা হয়েছিল ১৮ হাজার ৩৬২টি নমুনা। এরপর দিনে নমুনা পরীক্ষা আর ১৬ হাজার পার হয়নি। গত ১০ দিনে সর্বোচ্চ শনাক্ত হয়েছেন ৩ হাজার ৪৮৯ জন।

ভারতের দৈনিক ‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’ বলছে, শেষ ২৪ ঘণ্টায় ভারত ২ লাখ ১৯ হাজার ১০৩টি নমুনা পরীক্ষা করে ২৮ হাজার ৭০১ জনের করোনা শনাক্ত করেছে। আর পাকিস্তানের করোনাবিষয়ক সরকারি ওয়েবসাইট বলছে, ২২ হাজার ৫৩২টি নমুনা পরীক্ষা করে ২ হাজার ৭৬৯ জনকে শনাক্ত করেছে।

তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১২ হাজার ৪২৩টি। এতে ৩ হাজার ৯৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। দেশে সর্বোচ্চ নমুনা পরীক্ষা হয় ২৬ জুন, ১৮ হাজার ৪৯৮টি। এর পর থেকে দিনে দিনে কমেছে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, সংক্রমণ ধীরে ধীরে কমে আসছে। এটি এখন কমতে থাকবে। কোরবানির পশুর হাট নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে সংক্রমণ আর বাড়ার তেমন ঝুঁকি নেই।

দেশে ৮ মার্চ প্রথম করোনা শনাক্ত হয়। ওই দিন করোনা শনাক্তের হার ছিল ৪৩ শতাংশ। ৭ জনের পরীক্ষা করে ৩ জন শনাক্ত করা হয়। এরপর ধীরে ধীরে নমুনা পরীক্ষা বাড়তে থাকে। এরপর ২০ মে পর্যন্ত করোনা শনাক্তের হার ১৫ শতাংশের মধ্যেই ছিল। আর এখন এটি ২৫ শতাংশ। প্রথম দিনের পর এটি দেশে সর্বোচ্চ।

সামগ্রিকভাবে গতকাল পর্যন্ত ভারতে নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে করোনা শনাক্তের হার ৭ শতাংশ। পাকিস্তানে এটি প্রায় ১৬ শতাংশ। আর বাংলাদেশে এ হার প্রায় ২০ শতাংশ। প্রতি ১০ লাখ জনসংখ্যার বিপরীতে নমুনা পরীক্ষার দিক থেকে সারা বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৬তম।

এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ভাইরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সাইফ উল্লাহ মুনশি প্রথম আলোকে বলেন, পরীক্ষার সংখ্যা প্রত্যাশা অনুসারে বাড়েনি। পরীক্ষা যত বাড়বে, শনাক্তের হার তত কমে আসবে।

পরীক্ষাগার বাড়ে পরীক্ষা বাড়ে না

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, দেশে করোনা সংক্রমণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পরীক্ষা বাড়াতে পরীক্ষাগার বাড়ানো হচ্ছে। পরীক্ষাগার বাড়লেও পরীক্ষার সংখ্যা কমছে। দেশে এখন ৭৭টি পরীক্ষাগারে এর মধ্যে প্রতিদিনই কিছু না কিছু বন্ধ থাকে। গত শুক্রবার ৯টি ও শনিবার ৫টিতে কোনো পরীক্ষা হয়নি। তবে দেশে সর্বোচ্চ নমুনা পরীক্ষার সময় পরীক্ষাগার ছিল ৬৬টি। ওই দিন ৬১টি পরীক্ষাগারে নমুনা পরীক্ষা করা হয়।

আইইডিসিআরের দুজন কর্মকর্তা বলছেন, সরকারিভাবে বাসা থেকে নমুনা আনা বন্ধ হয়ে গেছে। রোগীর সুস্থতার সংজ্ঞায় পরিবর্তন আনায় দ্বিতীয় ও ‍তৃতীয় পরীক্ষা হচ্ছে না। বন্যাকবলিত কয়েকটি জেলায় নমুনা সংগ্রহ ব্যাহত হচ্ছে। এ ছাড়া উপসর্গ না থাকলে নমুনা সংগ্রহ না করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এসব কারণেই আগের চেয়ে পরীক্ষা কমেছে। একই সঙ্গে শনাক্তের হার বেড়েছে।

আজ অনলাইন ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা বলেন, নমুনা ও পরীক্ষার সংখ্যা আগের চেয়ে কমেছে। দ্বিতীয়বার পরীক্ষা না করা, ২০০ টাকা ফি নির্ধারণ করায় কিছুটা কমতে পারে। তবে মানুষের আগ্রহও কমে গেছে। দুপুর একটার পর কোনো বুথে লাইন থাকছে না। উপসর্গ থাকলে সবাইকে পরীক্ষা করাতে আসার অনুরোধ করেন তিনি।

পরীক্ষার সঙ্গে শনাক্ত বাড়ে-কমে:
দেশে প্রথম করোনা শনাক্ত হয় ৮ মার্চ। এরপর প্রথম শতক পূর্ণ করতেই লেগে যায় ৩০ দিন। তারপর গতি কিছুটা বাড়তে থাকে। ৩৮ দিনের মাথায় ১ হাজার এবং ৫৮ দিনের মাথায় ১০ হাজার পার করে বাংলাদেশ।

মে মাসের শেষ দিকে দিনে ১০ হাজারের বেশি নমুনা পরীক্ষা শুরু হয়। এর বিপরীতে দুই হাজারের বেশি শনাক্ত হতে থাকে। ধাপে ধাপে ১৪ থেকে ১৫ হাজারে বাড়ানো হয় নমুনা পরীক্ষা। ৯ জুন থেকে প্রতিদিন তিন হাজারের বেশি শনাক্ত হতে থাকে। ১৭ জুন প্রথম এটি ৪ হাজার ছাড়ায়। এরপর নমুনা পরীক্ষা কমার সঙ্গে সঙ্গে শনাক্তের সংখ্যাও কমতে থাকে।

তবে বর্তমানে লকডাউন চলা ঢাকার ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ওয়ারীতে প্রথম এক সপ্তাহে নমুনা পরীক্ষা করে প্রায় ৫০ শতাংশের করোনা শনাক্ত হয়েছে।

করোনায় মৃত্যু বাড়ছে
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, দেশে করোনা আক্রান্ত হয়ে আজ সোমবার পর্যন্ত মারা গেছেন ২ হাজার ৩৯১ জন। এর মধ্যে ৭৯ শতাংশ পুরুষ ও ২১ শতাংশ নারী। তবে এর বাইরে দেশে করোনার উপসর্গ নিয়ে অনেকেই মারা যাচ্ছে, যা সরকারি হিসাবে যুক্ত হয় না।

দেশে করোনায় প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে ১৮ মার্চ। গত মার্চে সব মিলে করোনায় মারা যান মাত্র ৫ জন। এপ্রিলে মৃত্যু বেড়ে দাঁড়ায় ১৬৩ জনে। এরপর মে মাসে মারা যান ৪৮২ জন। জুনে মারা যান ১ হাজার ১৯৭ জন। আর জুলাইয়ের ১৩ দিনেই মারা গেছেন ৫৪৪ জন। দিনে সর্বোচ্চ ৬৪ জনের মৃত্যু হয় গত ৩০ জুন। আর সবশেষ ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ৩৯ জন।

মৃত্যুও আগের চেয়ে বাড়ছে। গত ২ জুলাই পর্যন্ত করোনায় মৃত্যুর হার ছিল ১ দশমিক ২৫ শতাংশ। আজ এটি ১ দশমিক ২৭ শতাংশ। এর বাইরে করোনার উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুও বাড়ছে বলে জানিয়েছে সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজ।

অর্ধেকের বেশি রোগী সুস্থ
দেশে অর্ধেকের বেশি রোগী করোনা থেকে সুস্থ হয়ে গেছেন। আজ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৮৬ হাজার ৮৯৪ জন। এর মধ্যে ৯৮ হাজার ৩১৭ জন সুস্থ হয়ে গেছেন। সুস্থতার হার প্রায় ৫১ শতাংশ। সুস্থতার সংজ্ঞায় একাধিকবার পরিবর্তন আনার পর সুস্থতার সংখ্যাও বেড়েছে।

মার্চে ২৫ জন ও এপ্রিলে ১৩৫ জন সুস্থ হন। এরপর ৫ মে সংজ্ঞায় পরিবর্তন এনে নমুনা পরীক্ষা ছাড়া সুস্থ ঘোষণার বিষয়ে কয়েকটি নির্দেশনা দেওয়া হয়। এ হিসেবে মে মাসে সুস্থ হন ৯ হাজার ৬২১ জন। জুনে বাসায় থেকে সুস্থ হওয়া রোগীদের তথ্যও যোগ করা হয়। গত ১৫ জুন এক দিনে ১৫ হাজার ২৯৭ জনের সুস্থতার ঘোষণা দেওয়া হয়। সব মিলে জুনে সুস্থ হয়েছেন ৪৯ হাজার ৮৪৩ জন। ২৮ জুন আরেক দফা সংশোধন করা হয় সুস্থ ঘোষণার নির্দেশনা। এতে এ মাসের ১৩ দিনেই ‍সুস্থ হয়েছেন ৩৮ হাজার ৩৯৩ জন। সর্বশেষ আজ সুস্থ হয়েছেন ৪ হাজার ৭০৩ জন।