সাহাবুদ্দিন মেডিকেলের এমডিসহ ৩ জনকে রিমান্ডে চায় পুলিশ

প্রথম আলো ফাইল ছবি।
প্রথম আলো ফাইল ছবি।

করোনার পরীক্ষা নিয়ে প্রতারণা করার মামলায় গ্রেপ্তার রাজধানীর সাহাবউদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, একজন চিকিৎসকসহ তিনজনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায় পুলিশ। ইতিমধ্যে দুজনকে ঢাকার চিফ মেট্রপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে হাজির করা হয়েছে। অপর আসামিকে আদালতে আনা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

তিন আসামি হলেন, হাসপাতালের চেয়ারম্যানের ছেলে ও এমডি ফয়সাল আল ইসলাম, সহকারী পরিচালক চিকিৎসক আবুল হাসনাত ও ইনভেন্টরি অফিসার শাহরিজ কবির। এদের মধ্যে ফয়সালকে এখনো আদালতে আনা হয়নি। বাকি দুজনকে আদালতে আনা হয়েছে। তাঁরা এখন হাজতখানায় রয়েছেন।

আদালত সূত্র বলছে, তিন আসামিকে ৭ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার আবেদন করা হয়েছে। বিকেলে ঢাকার সিএমএম আদালতে এই রিমান্ড শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।

ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফয়সাল আল ইসলামকে সোমবার অভিযান চালিয়ে রাজধানীর বনানীর একটি হোটেল থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সংশ্লিষ্টসূত্রে জানা গেছে, সাহাবউদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনার নমুনা পরীক্ষার অনুমতি স্থগিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তারপরও হাসপাতালটি করোনার পরীক্ষা অব্যাহত রেখেছিল। গত রোববার র‍্যাব অভিযান চালিয়ে হাসপাতালের সহকারী পরিচালকসহ দুজনকে আটক করে। হাসপাতাল থেকে জব্দ করা হয় কিটসহ নানা মেডিকেল সামগ্রী।

মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে বলা হয়, সাহাবউদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চোরাইপথে র‍্যাপিড টেস্টের কিট এনে সরকারের অনুমোদন ছাড়াই করোনা রোগীর অ্যান্টিবডি টেস্টের নামে পরীক্ষা না করেই ভুয়া সনদ দিয়ে আসছিল।

র‍্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম বলেন, হাসপাতালের নথিপত্রে দেখা যায়, আইসিইউতে করোনা পজিটিভ তিন রোগীর মধ্যে একজন নেগেটিভ রোগীকে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। আর রাশিয়ার এক নাগরিককে করোনা নেগেটিভ হলেও তাঁকে কেবিনে রেখে করোনার চিকিৎসা দিয়েছে হাসপাতালটি।

র‍্যাবের ওই কর্মকর্তা বলেন, গত ২৫ জুন রেহেনা আক্তার নামের এক রোগীর কাছ থেকে এক দিনে ১ লাখ ২৯ হাজার টাকা আদায় করেছেন এজাহারভুক্ত আসামিরা। এ রকম আরও ১৭ জন রোগীর কাছ থেকে এভাবে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার প্রমাণপত্র রয়েছে র‍্যাবের হাতে।

সাহাবউদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চেয়ারম্যান সাহাবউদ্দিনের নামে হাসপাতালের নামকরণ। একসময় তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-অর্থবিষয়ক সম্পাদক এবং ঢাকা মহানগর উত্তরের সহসভাপতি ছিলেন।

প্রতিষ্ঠানটির মালিক সাহাবউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, যা ঘটেছে, এর কিছুই তিনি জানতেন না। প্রতিষ্ঠান পরিচালনা ও চিকিৎসায় জড়িত ব্যক্তিদের দায়ী করে তিনি বলেন, এ জন্য তাঁদের সাজা পেতে হবে। তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানটি যেন বন্ধ না করে দেওয়া হয়। এটি বন্ধ করে দেওয়া হলে মানুষ চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হবে।

মামলার এজাহার বলছে, এসব অনিয়ম সাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চেয়ারম্যানের ছেলে ফয়সালের নির্দেশে আসামি চিকিৎসক আবুল হাসনাত অন্যদের সহযোগিতায় এই কাজ করেছে। এসব অনিয়মের মাধ্যমে আসামিরা বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। হাসপাতালটির তিনতলায় হাইটপ ওয়ান স্টেপ র‍্যাপিড টেস্ট লেখাযুক্ত বক্স পাওয়া যায়। এর মধ্যে নয়টি র‍্যাপিড টেস্ট কিট ছিল। এ ছাড়াও চিকিৎসক আবুল হাসনাতের স্বাক্ষর করা অ্যান্টিবডি টেস্টের চারজনের রিপোর্ট মেলে সেখানে। একজন রোগীকে করোনা পজিটিভ দেখিয়ে ভর্তি করার পর তাঁদের স্বজনদের সন্দেহ দেখা দেওয়ায় পরে অন্য আরেকটি হাসপাতালে তাঁরা পরীক্ষা করে। সেখানে ওই রোগীর করোনা পরীক্ষার ফলাফল নেগেটিভ আসে।

মামলায় এজাহারের তথ্য অনুযায়ী, সাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চার তলার অস্ত্রোপচার কক্ষে মেয়াদোত্তীর্ণ মেডিকেল সামগ্রী মেলে, যেগুলোর মেয়াদ ২০১৩ সালে শেষ হয়ে গেছে। এগুলো মামলার আলামত হিসেবে জব্দ করা হয়।

আরও পড়ুন: