সিংড়ায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, বিলীন হচ্ছে সড়ক

বন্যার পানি ঢুকে বিদ্যালয়টির মতো সিংড়ার ছয়টি ইউনিয়নের সব বাড়িঘর-স্থাপনা তলিয়ে গেছে। সিংড়া শহরতলি থেকে আজ মঙ্গলবার সকালে তোলা ছবি। ছবি: প্রথম আলো
বন্যার পানি ঢুকে বিদ্যালয়টির মতো সিংড়ার ছয়টি ইউনিয়নের সব বাড়িঘর-স্থাপনা তলিয়ে গেছে। সিংড়া শহরতলি থেকে আজ মঙ্গলবার সকালে তোলা ছবি। ছবি: প্রথম আলো

নাটোরের সিংড়া উপজেলা সদরে আত্রাই নদের পানি বিপৎসীমার ৬৫ মিলিমিটার (৬ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার) ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় চলনবিল এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে ৬টি ইউনিয়নে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে, গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ভেঙে যোগাযোগব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়েছে। ত্রাণশিবিরগুলোতে পর্যাপ্ত খাবারের ব্যবস্থা নেই।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নাটোরের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হান জানান, আজ মঙ্গলবার সকালে সিংড়া পয়েন্টে আত্রাই নদের পানি বিপৎসীমার ৬৫ মিলিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। নদের পানি দুই তীর অতিক্রম করে চলনবিল ও এর আশপাশের গ্রামগুলোতে ঢুকছে। একই সঙ্গে বারনই ও গুড় নদের পানিও বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এসব নদের পানি হালতি বিলে ঢুকছে। হালতি বিলের পানি বেড়ে গিয়ে লালোর ইউনিয়নের পাটুল-ত্রিমোহনী সড়ক ভেঙে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ত্রিমোহনী বিল হালতি কলেজের পাশে সড়কটির অন্তত ৫০০ মিটার বিলে বিলীন হয়ে যাওয়ায় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। সিংড়া-কলম সড়কের বলিয়াবাড়ি এলাকায় আত্রাই নদের পানি প্রবাহিত হচ্ছে। যেকোনো সময় সড়কটি বিলীন হয়ে যেতে পারে।

ঘরের বারান্দা বন্যার পানিতে ডুবে রয়েছে। পানি ঢুকে পড়েছে ঘরেও। এই নারী থই থই পানিতে বারান্দায় রান্নার কাজ এগিয়ে নিচ্ছেন। সিংড়া শহরতলি থেকে আজ মঙ্গলবার সকালে তোলা ছবি। ছবি: প্রথম আলো
ঘরের বারান্দা বন্যার পানিতে ডুবে রয়েছে। পানি ঢুকে পড়েছে ঘরেও। এই নারী থই থই পানিতে বারান্দায় রান্নার কাজ এগিয়ে নিচ্ছেন। সিংড়া শহরতলি থেকে আজ মঙ্গলবার সকালে তোলা ছবি। ছবি: প্রথম আলো

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বন্যার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ইতিমধ্যে সিংড়ার লালোর, শেরকোল, কলম, তাজপুর, ডাহিয়া ও চৌগ্রাম ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে শেরকোল, কলম ও তাজপুর ইউনিয়নে বন্যা পরিস্থিতির বেশি অবনতি হয়েছে। দুর্গত মানুষের আশ্রয়ের জন্য ৫০টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তবে ৫টি আশ্রয়কেন্দ্রে এ পর্যন্ত ৩০টি পরিবার গবাদিপশুসহ আশ্রয় নিয়েছে। গত শনিবার বেলা ১১টার দিকে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে দেখা যায়, অনেকে সকালে নাশতা করতে পারেনি। জ্বালানির অভাবে ত্রাণের চাল থাকা সত্ত্বেও রান্না করতে পারেননি অনেকে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনজন বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে একবার কিছু চাল-ডাল দেওয়া হয়েছে। এ দিয়ে দিনের পর দিন চলা সম্ভব হচ্ছে না। তাঁরা আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে রান্না করা খাবার সরবরাহের দাবি করেন।

জানতে চাইলে সিংড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাসরিন সুলতানা বলেন, পর্যাপ্ত আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যারা ইতিমধ্যে আশ্রয় নিয়েছে, তাদের খাবারের জন্য চাল-ডাল সরবরাহ করা হয়েছে। শুকনা খাবারও সরবরাহ করা হবে। কেউ না খেয়ে থাকবে না। ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক ও রাস্তা সচল রাখার জন্য পাউবো ও স্থানীয় সরকারের সংশ্লিষ্টদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাঁরা বালির বস্তা ও বেড়া দিয়ে সেগুলো রক্ষার চেষ্টা করছেন।