ত্রাণ নেই, ভিজিএফের চালই কিছু ভরসা

চারদিক পানিতে ডুবে গেছে। পানি ভেঙে পরিবারের সদস্যদের জন্য চাল জোগাড় করে বাড়ি ফিরছেন মাবিয়া খাতুন। বেড়ার উত্তর পেঁচাকোলা গ্রামে। ছবি: প্রথম আলো
চারদিক পানিতে ডুবে গেছে। পানি ভেঙে পরিবারের সদস্যদের জন্য চাল জোগাড় করে বাড়ি ফিরছেন মাবিয়া খাতুন। বেড়ার উত্তর পেঁচাকোলা গ্রামে। ছবি: প্রথম আলো

পাবনার বেড়া উপজেলায় বন্যাকবলিত শতাধিক গ্রামের প্রায় ১০ হাজার পরিবার কষ্টে আছে। তাঁদের জন্য আলাদা ত্রাণসহায়তা বরাদ্দ হয়নি। তবে ঈদ সামনে রেখে উপজেলায় ভিজিএফের চাল বরাদ্দ হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকে কিছু বন্যার্ত পরিবার পাবে। তবে ভিজিএফের আওতার বাইরে থেকে যাবে কয়েক হাজার বন্যার্ত পরিবার।

উপজেলা প্রশাসন বলছে, বন্যাকবলিত ব্যক্তিদের জন্য আলাদা ত্রাণ সহায়তা পাওয়া না গেলেও ঈদুল আজহা সামনে রেখে পর্যাপ্ত পরিবারের জন্য ভিজিএফের চাল বরাদ্দ হয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকায় এই চাল অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেওয়া হবে।

বেড়ায় একটি পৌরসভা ও নয়টি ইউনিয়ন রয়েছে। বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের ভেতরে অবস্থিত হওয়ায় পৌর এলাকা ও চাকলা ইউনিয়নের বেশির ভাগ অংশ বন্যামুক্ত। কিন্তু হাটুরিয়া-নাকালিয়া, কৈতলা, নতুন ভারেঙ্গা, পুরান ভারেঙ্গা, জাতসাকিনী, মাসুমদিয়া, রূপপুর ও ঢালারচর ইউনিয়নের বেশির ভাগ এলাকা বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের বাইরে। এসব এলাকা যমুনা নদীর চর ও তীরে অবস্থিত। ফলে ছোট মাপের বন্যাতেই এসব এলাকার বড় অংশ পানিতে তলিয়ে যায়।

বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি ইতিমধ্যে মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। আটটি ইউনিয়নের শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হওয়ায় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ। অনেকেই পরিবার নিয়ে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধসহ অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। অনেকেরই দিন কাটছে খেয়ে, না খেয়ে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বেড়া কার্যালয় সূত্র জানায়, আজ মঙ্গলবার বন্যার পানি আরও কমেছে। কিন্তু এর পরও উপজেলার নগরবাড়ী পয়েন্টে বিকেল পাঁচটায় যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার ৫৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

হাটুরিয়া-নাকালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, তাঁর ইউনিয়নের নয়টি ওয়ার্ডের মধ্যে ছয়টি ওয়ার্ডই বন্যাকবলিত। এতে চার হাজারেরও বেশি পরিবারের জন্য এই মুহূর্তে ত্রাণসহায়তা প্রয়োজন। অথচ বন্যার জন্য আলাদা কোনো সহায়তা পাওয়া যায়নি। তবে তাঁর ইউনিয়নের ২ হাজার ২২৭টি পরিবারের জন্য ভিজিএফের চাল পাওয়া গেছে। ইতিমধ্যে এই চাল বিতরণ শুরু করেছেন।

পুরান ভারেঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এ এম রফিক উল্লাহ বলেন, তাঁর ইউনিয়নের নয়টি ওয়ার্ডের মধ্যে সাতটি ওয়ার্ডই পানির নিচে। এতে ২ হাজার পরিবারের ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। জরুরি ভিত্তিতে অন্তত দেড় হাজার পরিবারকে ত্রাণসহায়তা দেওয়া দরকার। কিন্তু বন্যার্তদের জন্য কোনো ত্রাণ নেই। তবে তাঁর ইউনিয়নের ৭৭২টি পরিবারের জন্য ভিজিএফের চাল বরাদ্দ হয়েছে।

তাঁতঘরে উঠেছে পানি। সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে তাঁতযন্ত্র। উপজেলার উত্তর পেঁচাকোলা গ্রামে। ছবি: প্রথম আলো
তাঁতঘরে উঠেছে পানি। সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে তাঁতযন্ত্র। উপজেলার উত্তর পেঁচাকোলা গ্রামে। ছবি: প্রথম আলো

সরেজমিনে হাটুরিয়া-নাকালিয়া ইউনিয়নের পেঁচাকোলা, মালদাপাড়া; নতুন ভারেঙ্গা ইউনিয়নের বাগশোয়াপাড়া, সাফুল্যাপাড়াসহ বেশ কিছু গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে বাড়িঘর পানিতে তলিয়ে আছে। মালদাপাড়া গ্রামের ইকরাম হোসেন, উত্তর পেঁচাকোলা গ্রামের ইব্রাহিম হোসেন, ইউসুফ আলীসহ সাত-আটজন বন্যার্ত মানুষ বলেন, এমনিতেই করোনা পরিস্থিতির কারণে তাঁদের সংসার চলছিল না। তার ওপর বন্যার হানা। তাঁরা এখন দিশেহারা। খেয়ে না খেয়ে দিন কাটলেও এখনো কোনো সহায়তা পাননি।

উত্তর পেঁচাকোলা গ্রামের মাবিয়া খাতুন (৫০) বলেন, ‘করোনা রোগের সাথে বন্যা আইস্যা আমাগরে শেষ কইরা দিল। আমাগরের কষ্ট দেখার কেউ নাই।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসিফ আনাম সিদ্দিকী বলেন, বন্যার্তদের জন্য আলাদা করে ত্রাণসহায়তা পাওয়া যায়নি। তবে ঈদ সামনে রেখে উপজেলার ১৩ হাজার ৫০০ পরিবারের জন্য ভিজিএফের চাল বরাদ্দ হয়েছে। এসব চাল বন্যার্ত পরিবারগুলোকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেওয়া হবে।