পাথর কোয়ারি খোলার দাবিতে জলে-ডাঙায় মিছিল

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারি ছয় মাস ধরে বন্ধ। পাথর শ্রমিকেরা বেকার হয়ে পড়েছেন। করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে ঘুরে দাঁড়াতে পাথর কোয়ারি চালু করে বেকার শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের দাবিতে জলে ও ডাঙায় মিছিল হয়েছে। ধলাই নদে নৌকা দিয়ে জলপথে একদফা মিছিল শেষে নদের তীরে ওঠে আরেক দফা মিছিল করা হয়।

সিলেটের সর্ববৃহৎ পাথর কোয়ারি এলাকা কোম্পানীগঞ্জে আজ সোমবার দুপুরে এভাবে কর্মসূচি পালন করেছে 'কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পানি নিষ্কাশন বালু পাথর উত্তোলন ও বহনকারী শ্রমিক ইউনিয়ন' (রেজি. নম্বর চট্ট: ২২৬৩)। সংগঠনটি বাংলাদেশ জাতীয় শ্রমিক লীগের অর্ন্তভুক্ত হওয়ায় তাঁদের দাবির সঙ্গে উপজেলা আওয়ামীলীগের শ্রম সম্পাদক সিরাজুল ইসলামের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের একটি পক্ষ অংশ নেয়।

ধলাই নদের তীরে দয়ারবাজার এলাকা থেকে ১০টি নৌকায় করে দুপুরে প্রায় ঘন্টাব্যাপী মিছিল হয়। জলপথে মিছিলে 'মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের লক্ষে কর্মবিরতি' শীর্ষক ব্যানার প্রদর্শন করা হয়। এরপর একই ব্যনারে উপজেলা হাসপাতালের ঘাট থেকে মিছিলটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে সমাবেশ করে।

উপজেলা আওয়ামী লীগের শ্রম সম্পাদক সিরাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিনের সঞ্চালনায় সমাবেশে শ্রমিকদের কর্মসংস্থানে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানসহ মৌলিক অধিকারের পাঁচটি দাবি তুলে ধরা হয়। বক্তারা বলেন, কর্মসংস্থান না থাকায় শ্রমিক পরিবারে মৌলিক অধিকার বিপন্ন। এ জন্য গত ২৮ জুলাই উপজেলা প্রশাসনে একটি স্মারকলিপি দেন তাঁরা।

সমাবেশে অন্যান্যদের মধ্যে শ্রমিক ইউনিয়নের সহসভাপতি মকবুল হোসেন, শ্রমিক সংগঠক আবদুল মালিক, ফয়ছল আহমদ, জুনেদ আহমদ, মাসুক মিয়া, নুরুল ইসলাম, ময়না মিয়া, বাবুল মিয়া, সুধীর বাবু, হুসেন আলী বক্তব্য দেন।

মিছিল ও সমাবেশ শেষে সিরাজুল ইসলাম বলেন, ২৮ জুলাই উপজেলা প্রশাসনে দেওয়া স্মারকলিপির পর কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় পরবর্তী কর্মসূচি হিসেবে নৌপথ ও স্থলপথে মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে। পাথর কোয়ারি খোলা না হলে কর্মসংস্থানের দাবিতে শ্রমিক ইউনিয়ন আরও কর্মসূচি ঘোষণা করবে।

বাংলাদেশ খনিজসম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর (বিএমডি) অধীন পাথর কোয়ারি পরিচালিত হয় স্থানীয় জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে। বিএমডির তথ্য অনুযায়ী কোম্পানীগঞ্জের তিনটি পাথর কোয়ারির মধ্যে ভোলাগঞ্জ আয়াতনের দিক দিয়ে সবচেয়ে বড় বালুমিশ্রিত পাথর কোয়ারি। কালাসাদেক, ভাটরাই ও কালাইরাগ-এ তিনটি মৌজায় ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারির আয়তন ৭৭০ দশমিক ১৪ একর। দৈনিক খাজনা আদায় পদ্ধতিতে (খাস কালেকশন) ভোলাগঞ্জে পাথর উত্তোলন করা হতো।

কোয়ারি সংশ্লিষ্ট পাথর ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে প্রায় ১৫ হাজার পাথরশ্রমিক কাজ করতেন। এসব শ্রমিকদের অধিকাংশ সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, চাঁদপুর জেলার বাসিন্দা। পাথর কোয়ারিতে ইজারা বিধি উপেক্ষা করে যন্ত্র দিয়ে পাথর তোলায় একের পর এক শ্রমিক হাতহতের ঘটনা ঘটছিল। ২০১৭ সাল থেকে তিন বছরে সিলেট জেলার পাথর কোয়ারিতে শ্রমিক নিহত হয়েছেন ৭৮ জন। গত ২ ফেব্রুয়ারি শ্রমিক নিহতের সবশেষ ঘটনায় ভোলাগঞ্জের দৈনিক খাজনা আদায় বন্ধ করে দেওয়ায় পাথর কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলন বন্ধ রয়েছে।

পাথর কোয়ারি খুলে দেওয়া ও শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের দাবির ব্যাপারে জানতে চাইলে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুমন আচার্য প্রথম আলোকে বলেন, যেসব ক্ষয়ক্ষতির কারণে পাথর কোয়ারি বন্ধ রাখা হয়েছে, সেই সব ক্ষতির আশঙ্কা এখনও আছে বলে বিএমডি পরবর্তী কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।